রাজবাড়ী ০৪:২৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কবিতা: জীবন-সমারঙ্গন (বিধান কুমার বিশ্বাস)

জীবন-সমারঙ্গন

বিধান কুমার বিশ্বাস

বৃষ্টি স্নাত শরতের অমানিশার একটি রাতে
চৌড়ি চালে রিম ঝিম বৃষ্টির আওয়াজ থেমে
ব্যাঙের ডাক, ঝিঁঝি পোকার হাঁক,
কখনো বিজলি, কখনো মেঘের ডাক
বিজলির ঝলকানিতে শঙ্খশুভ্র আভায়
কোন মায়ায় হায় অথৈ তিমির ভেদে
সে গভীর রজনীর শীতলতায় চারিদিক নিস্তব্ধতা
গভীর তন্দ্রায় আচ্ছন্ন সকলে নগর পল্লীতে
সে মুহূর্তেও বিদীর্ণ বিচূর্ণ মম তন্দ্রা;- ডেকে বলে-
হে কবি! এখনো ঘুমাবার সময় হয় নাই।

পদ্মপাতার জল গড়িয়ে গেছে মিশে
হায়, ও-ই পদ্ম ঝিলের জলে!
সে জল বর্ণচোরা নিজস্বতা ভুলে
সে কোন মিছে ভালোবাসায় আবার মাখামাখি হায়!
মিশে গেছে তোমার বক্ষ ফেলে, ঝিলের জলে?
তুমি পদ্ম পাতা বল মোরে? কোন লাজে গেছে চলে-
ঝিলের জল-ই বা কেন ঠাঁই দিল তারে?
জমেছিল কেন বা; কোন ভালোবাসার আসক্তে?
পদ্ম পত্র নয়; সে জলবিম্ব ডেকে বলে মোরে, হে কবি!
এখনো সময় হয়নি মোর প্রেমের নিগুঢ় রহস্য ভে’দে।

আকাশ বিম্ব আকাশ মুখে ধাবিত কোন মায়ায়
কেন ছেরে এসে – ফিরে; পুঞ্জিভূত মেঘ ভেলায়।
কেন হায় দিবা-রজনী যুগে যুগে পালাক্রমে আসে
কোন মায়ায় দিবাকর উদিত;- অস্ত্রমিত কার ডাকে?
কেন বা দুর প্রাণে নক্ষত্র মৃদু আলোর খেলা
রজনীর প্রেমে নিশাকর ছড়ায় শুভ্র আলোর ভেলা।
কোন মায়ায় হায় সমুদ্রের ঢেও খেলে এমন খেলা
তোমার বুকে তেজি তুমি;- পারে শান্ত, কোন অবলীলা?
সকল রহস্য হায় ডেকে মোরে কয়; হে কবি!
এ সৃষ্টির রহস্য জানবার সময় তোমার হয় নাই।

কোন আশায় সিন্ধুর জোয়ার;- ভাটি নিরাশা হায়,
সিন্ধু ঠেলে তটিনী’র জোয়ার তবু নিতি ভাটি যায়!
কেন বা প্রকৃতির অপরুপে প্রলয় কার বিরহ ব্যথায়;-
সে ভাঙ্গা হতে পুনঃ সৃজন আবার কার প্রেম মায়ায়?
তবে আজও থামেনি কেন? পাহাড়ের ঝরনার ধার
পাহাড় কেঁদে চলছে আজও মর্ম জুড়ায় নাই তার?
কোন প্রতিজ্ঞায় মরু গিরি সিন্ধু আছে কার সম্মানে
সে মৃগতৃষ্ণা সবুজ তৃণ বৃক্ষ রাশি রাশি জলের বানে।
সিন্ধু তরঙ্গ ডাকি মোরে বলে, কেন বৃথা অভিলাষ;-
হে কবি! সময় হয়নি মোদের অপূর্ণের পূর্ণতা জানবার।

আয়ু শৈবালের নীর জানি এ জীবন অঙ্গনে
তবুও বীর্যবান স্বপন উদ্বেলিত সংসার-সমারাঙ্গনে।
আবার দেখ হায়! আঠারো হাজার মাখলুকাতে;-
সৃষ্টিতে আমিই আশরাফুল মাখলুকাত এ ভবে!
তবে কেন বিধু, তুমি হওনি আশরাফুলের অনারম্বর? ধোয়াশায় খুঁজতে করি কত বিধুর আড়ম্বর! তা-ই -বুঝি
মণি ঋষি সুফি দরবেশ যুগে যুগে আছে সুপথ্য পানে
হেরিতে মনোমুগ্ধ রুপ মধুর প্রেমে পুণ্ডরীকের ধ্যানে?
তবুও হায়! মোর অনিত্য আশা ভবের অভিলাষে;-
বলে, হে কবি! এখনো ভাববার সময় তোমার হয় নাই।

কোন বিরহের প্রলয়ে বল;-
ঝড় ঝঞ্জাট দৈব- দুর্বিপাক আগ্নেয়গিরি তেজ?
ধ্যান ফেলে-ও আসে ফিরে মণি ঋষি সুফি দরবেশ
তবে কি সকল শ্রী প্রেম বিরহে নিঃশেষ?
সে প্রেম নিগুঢ় জানতে দিবা রজনী সহস্র প্রহর শেষ;-
নিজ’কে ফেলে সৃষ্টির রহস্য জানতে বল খুইয়েছি বেশ!
তাই মোর অনিত্য বাসনা ফেলে বিবেক ডাকে বারেবার
এসব মোহ; সৃষ্টির রহস্য নয়, জানতে হবে আপনার!
অন্তিম লগ্ন আসি বুঝি অতি সন্নিকটে ধাবিত হবে-
তবু ঝাপসা জ্ঞাননেত্র চাওনি মনে করিয়ে বলে যাবে?
হে কবি! এখনো সময় হয়নি, শেষ প্রান্তে পৌঁছাবার।।

Tag :

কবিতা: জীবন-সমারঙ্গন (বিধান কুমার বিশ্বাস)

প্রকাশিত : ১০:৫৯:১৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৩

জীবন-সমারঙ্গন

বিধান কুমার বিশ্বাস

বৃষ্টি স্নাত শরতের অমানিশার একটি রাতে
চৌড়ি চালে রিম ঝিম বৃষ্টির আওয়াজ থেমে
ব্যাঙের ডাক, ঝিঁঝি পোকার হাঁক,
কখনো বিজলি, কখনো মেঘের ডাক
বিজলির ঝলকানিতে শঙ্খশুভ্র আভায়
কোন মায়ায় হায় অথৈ তিমির ভেদে
সে গভীর রজনীর শীতলতায় চারিদিক নিস্তব্ধতা
গভীর তন্দ্রায় আচ্ছন্ন সকলে নগর পল্লীতে
সে মুহূর্তেও বিদীর্ণ বিচূর্ণ মম তন্দ্রা;- ডেকে বলে-
হে কবি! এখনো ঘুমাবার সময় হয় নাই।

পদ্মপাতার জল গড়িয়ে গেছে মিশে
হায়, ও-ই পদ্ম ঝিলের জলে!
সে জল বর্ণচোরা নিজস্বতা ভুলে
সে কোন মিছে ভালোবাসায় আবার মাখামাখি হায়!
মিশে গেছে তোমার বক্ষ ফেলে, ঝিলের জলে?
তুমি পদ্ম পাতা বল মোরে? কোন লাজে গেছে চলে-
ঝিলের জল-ই বা কেন ঠাঁই দিল তারে?
জমেছিল কেন বা; কোন ভালোবাসার আসক্তে?
পদ্ম পত্র নয়; সে জলবিম্ব ডেকে বলে মোরে, হে কবি!
এখনো সময় হয়নি মোর প্রেমের নিগুঢ় রহস্য ভে’দে।

আকাশ বিম্ব আকাশ মুখে ধাবিত কোন মায়ায়
কেন ছেরে এসে – ফিরে; পুঞ্জিভূত মেঘ ভেলায়।
কেন হায় দিবা-রজনী যুগে যুগে পালাক্রমে আসে
কোন মায়ায় দিবাকর উদিত;- অস্ত্রমিত কার ডাকে?
কেন বা দুর প্রাণে নক্ষত্র মৃদু আলোর খেলা
রজনীর প্রেমে নিশাকর ছড়ায় শুভ্র আলোর ভেলা।
কোন মায়ায় হায় সমুদ্রের ঢেও খেলে এমন খেলা
তোমার বুকে তেজি তুমি;- পারে শান্ত, কোন অবলীলা?
সকল রহস্য হায় ডেকে মোরে কয়; হে কবি!
এ সৃষ্টির রহস্য জানবার সময় তোমার হয় নাই।

কোন আশায় সিন্ধুর জোয়ার;- ভাটি নিরাশা হায়,
সিন্ধু ঠেলে তটিনী’র জোয়ার তবু নিতি ভাটি যায়!
কেন বা প্রকৃতির অপরুপে প্রলয় কার বিরহ ব্যথায়;-
সে ভাঙ্গা হতে পুনঃ সৃজন আবার কার প্রেম মায়ায়?
তবে আজও থামেনি কেন? পাহাড়ের ঝরনার ধার
পাহাড় কেঁদে চলছে আজও মর্ম জুড়ায় নাই তার?
কোন প্রতিজ্ঞায় মরু গিরি সিন্ধু আছে কার সম্মানে
সে মৃগতৃষ্ণা সবুজ তৃণ বৃক্ষ রাশি রাশি জলের বানে।
সিন্ধু তরঙ্গ ডাকি মোরে বলে, কেন বৃথা অভিলাষ;-
হে কবি! সময় হয়নি মোদের অপূর্ণের পূর্ণতা জানবার।

আয়ু শৈবালের নীর জানি এ জীবন অঙ্গনে
তবুও বীর্যবান স্বপন উদ্বেলিত সংসার-সমারাঙ্গনে।
আবার দেখ হায়! আঠারো হাজার মাখলুকাতে;-
সৃষ্টিতে আমিই আশরাফুল মাখলুকাত এ ভবে!
তবে কেন বিধু, তুমি হওনি আশরাফুলের অনারম্বর? ধোয়াশায় খুঁজতে করি কত বিধুর আড়ম্বর! তা-ই -বুঝি
মণি ঋষি সুফি দরবেশ যুগে যুগে আছে সুপথ্য পানে
হেরিতে মনোমুগ্ধ রুপ মধুর প্রেমে পুণ্ডরীকের ধ্যানে?
তবুও হায়! মোর অনিত্য আশা ভবের অভিলাষে;-
বলে, হে কবি! এখনো ভাববার সময় তোমার হয় নাই।

কোন বিরহের প্রলয়ে বল;-
ঝড় ঝঞ্জাট দৈব- দুর্বিপাক আগ্নেয়গিরি তেজ?
ধ্যান ফেলে-ও আসে ফিরে মণি ঋষি সুফি দরবেশ
তবে কি সকল শ্রী প্রেম বিরহে নিঃশেষ?
সে প্রেম নিগুঢ় জানতে দিবা রজনী সহস্র প্রহর শেষ;-
নিজ’কে ফেলে সৃষ্টির রহস্য জানতে বল খুইয়েছি বেশ!
তাই মোর অনিত্য বাসনা ফেলে বিবেক ডাকে বারেবার
এসব মোহ; সৃষ্টির রহস্য নয়, জানতে হবে আপনার!
অন্তিম লগ্ন আসি বুঝি অতি সন্নিকটে ধাবিত হবে-
তবু ঝাপসা জ্ঞাননেত্র চাওনি মনে করিয়ে বলে যাবে?
হে কবি! এখনো সময় হয়নি, শেষ প্রান্তে পৌঁছাবার।।