রাজবাড়ী ০৪:৫৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১২ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনামঃ
রাজবাড়ীতে ১ হাজার পিস ইয়াবা সহ মাদক ব্যবসায়ী আরিফ গ্রেপ্তার অগ্নিযুগের বিপ্লবী কমরেড আশুভরদ্বাজ  লাল সালাম বালিয়াকান্দিতে ভোক্তা অধিকার অভিযান ৩ প্রতিষ্ঠানে ১২ হাজার টাকা জরিমানা কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নুরে আলম গ্রেফতার রাজবাড়ীতে অগ্নিযুগের বিপ্লবী  কমরেড নেতা আশুভরদ্বাজের ৩২ তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত রাজবাড়ী বালিয়াকান্দিতে বজ্রপাতে এক কৃষকের মৃত্যু রাজবাড়ীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলা মামলায় আ. লীগের ১০ নেতা কারাগারে রাজবাড়ীতে বর্ণাঢ্য পহেলা বৈশাখ উদযাপিত। বৈশাখী মেলা ( মারিয়া শাইরি) বালিয়াকান্দিতে কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে পাট বীজ ও সার বিতরণ 

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর যখন সারা দেশ বিজয়ের আনন্দে উদ্ভাসিত তখনও চলছিল নির্বিচারে গণহত্যার।

কৃষ্ণ কুমার সরকার

১৮ই ডিসেম্বর শত্রু মুক্ত হয়েছিলো রাজবাড়ী। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর যখন সারা দেশ বিজয়ের আনন্দে উদ্ভাসিত, ঠিক তখনও রাজবাড়ীবাসী বিজয়ের স্বাদ থেকে বঞ্চিত। তখনও রাজবাড়ী সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল পাকিস্তানী বিহারীরা। তারা হুঙ্কার দিয়ে বলে বাংলাদেশের সব অঞ্চলকে বিজয় ঘোষণা করা হলেও রাজবাড়ী পাকিস্তান হয়েই থাকবে চিরদিন।

রাজবাড়ী শহরের প্রতিটি কলোনী ছিলো যেন এক একটা মিনি ক্যান্টমেন্টে। এখানে বিহারীদের এতই প্রতাপ ছিলো যে তারা সারা দেশের বিহারীরা পরাজয় স্বীকার করলেও তারা তারা মেনে নিতে রাজী হয়নি।

তাদের এই ঘোষণার প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন মুক্তিকামী দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধারা। বিজয়ের দিনেও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসরদের সাথে প্রচণ্ড লড়াই করতে হয়েছে রাজবাড়ীতে দামাল ছেলেদের।

১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত চরম মূল্য দিতে হয়েছে রাজবাড়ীবাসীকে। রাজবাড়ী রেলের শহর হওয়ায় এখানে প্রায় ২০ হাজারের মতো বিহারীরা বাস করতো। যার কারণে পাকিস্তানি বিহারিরা শক্ত ঘাঁটি গড়ে তুলে নির্বিচারে হত্যা করতে থাকে এই অঞ্চলের নিরীহ মানুষদের।

পাকিস্তানি বিহারীদের এই নির্মম অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য এবং রাজবাড়ীকে শত্রু মুক্ত করার লক্ষ্যে পার্শ্ববর্তী জেলা ফরিদপুর, যশোর, মাগুরা ও কুষ্টিয়া থেকে মুক্তিবাহিনীর বিভিন্ন দল যুদ্ধের জন্য সংগঠিত হতে থাকে। এ খবরে বিহারীরা রাজবাড়ী রেল লাইনের পাশে অবস্থান নেয় এবং লোকোশেড থেকে ড্রাই-আইস ফ্যাক্টরি পর্যন্ত মালগাড়ী দিয়ে রেল লাইন অবরুদ্ধ করে রাখে।

মুক্তিযোদ্ধারা বিহারীদের লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ করতে থাকলেও মালগাড়ীর কারণে বিহারীদের কোনো ক্ষতি সাধন করতে পারেনি। পরে বিকল্প পন্থা হিসেবে যশোর থেকে আনা মর্টারের গুলি বর্ষণ শুরু করলে বিহারীদের সাথে তুমুল যুদ্ধ সংগঠিত হয়। সেই যুদ্ধে কয়েক হাজার বিহারী নিহত হয়। এক পর্যায়ে পিছু হটতে বাধ্য হয় তারা। মুক্তিযোদ্ধাদের দুর্বার প্রতিরোধের মুখে নিশ্চিত পরাজয় ভেবে ১৮ ডিসেম্বর বিহারীরা আত্মসমর্পণ করে এবং ঐদিন সকালে রাজবাড়ীকে শত্রুমুক্ত ঘোষণা করা হয়।

যুদ্ধকালীন কমান্ডার মহসিন উদ্দিন বতু বলেন, তৎকালীন বিহারীরা অস্ত্রসজ্জিত ও শক্তিশালী ছিলো। মুক্তিযূদ্ধের সময় রেলের কয়লার গাড়ীতে বাঙালীদের পুড়িয়ে মেরেছে। লোকশেড বদ্ধ ভুমিতে কূপের মধ্যে বাঙালীদের হত্যা করে জড়ো করে রাখতো। তাদের অত্যাচার ছিলো খুবই নির্মম। সারাদেশ স্বাধীন হয় ১৬ই ডিসেম্বর কিন্ত রাজবাড়ী শত্রু মুক্ত হয় ১৮ই ডিসেম্বর।

Tag :

রাজবাড়ীতে ১ হাজার পিস ইয়াবা সহ মাদক ব্যবসায়ী আরিফ গ্রেপ্তার

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর যখন সারা দেশ বিজয়ের আনন্দে উদ্ভাসিত তখনও চলছিল নির্বিচারে গণহত্যার।

প্রকাশিত : ০৮:২৮:৪৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩

কৃষ্ণ কুমার সরকার

১৮ই ডিসেম্বর শত্রু মুক্ত হয়েছিলো রাজবাড়ী। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর যখন সারা দেশ বিজয়ের আনন্দে উদ্ভাসিত, ঠিক তখনও রাজবাড়ীবাসী বিজয়ের স্বাদ থেকে বঞ্চিত। তখনও রাজবাড়ী সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল পাকিস্তানী বিহারীরা। তারা হুঙ্কার দিয়ে বলে বাংলাদেশের সব অঞ্চলকে বিজয় ঘোষণা করা হলেও রাজবাড়ী পাকিস্তান হয়েই থাকবে চিরদিন।

রাজবাড়ী শহরের প্রতিটি কলোনী ছিলো যেন এক একটা মিনি ক্যান্টমেন্টে। এখানে বিহারীদের এতই প্রতাপ ছিলো যে তারা সারা দেশের বিহারীরা পরাজয় স্বীকার করলেও তারা তারা মেনে নিতে রাজী হয়নি।

তাদের এই ঘোষণার প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন মুক্তিকামী দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধারা। বিজয়ের দিনেও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসরদের সাথে প্রচণ্ড লড়াই করতে হয়েছে রাজবাড়ীতে দামাল ছেলেদের।

১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত চরম মূল্য দিতে হয়েছে রাজবাড়ীবাসীকে। রাজবাড়ী রেলের শহর হওয়ায় এখানে প্রায় ২০ হাজারের মতো বিহারীরা বাস করতো। যার কারণে পাকিস্তানি বিহারিরা শক্ত ঘাঁটি গড়ে তুলে নির্বিচারে হত্যা করতে থাকে এই অঞ্চলের নিরীহ মানুষদের।

পাকিস্তানি বিহারীদের এই নির্মম অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য এবং রাজবাড়ীকে শত্রু মুক্ত করার লক্ষ্যে পার্শ্ববর্তী জেলা ফরিদপুর, যশোর, মাগুরা ও কুষ্টিয়া থেকে মুক্তিবাহিনীর বিভিন্ন দল যুদ্ধের জন্য সংগঠিত হতে থাকে। এ খবরে বিহারীরা রাজবাড়ী রেল লাইনের পাশে অবস্থান নেয় এবং লোকোশেড থেকে ড্রাই-আইস ফ্যাক্টরি পর্যন্ত মালগাড়ী দিয়ে রেল লাইন অবরুদ্ধ করে রাখে।

মুক্তিযোদ্ধারা বিহারীদের লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ করতে থাকলেও মালগাড়ীর কারণে বিহারীদের কোনো ক্ষতি সাধন করতে পারেনি। পরে বিকল্প পন্থা হিসেবে যশোর থেকে আনা মর্টারের গুলি বর্ষণ শুরু করলে বিহারীদের সাথে তুমুল যুদ্ধ সংগঠিত হয়। সেই যুদ্ধে কয়েক হাজার বিহারী নিহত হয়। এক পর্যায়ে পিছু হটতে বাধ্য হয় তারা। মুক্তিযোদ্ধাদের দুর্বার প্রতিরোধের মুখে নিশ্চিত পরাজয় ভেবে ১৮ ডিসেম্বর বিহারীরা আত্মসমর্পণ করে এবং ঐদিন সকালে রাজবাড়ীকে শত্রুমুক্ত ঘোষণা করা হয়।

যুদ্ধকালীন কমান্ডার মহসিন উদ্দিন বতু বলেন, তৎকালীন বিহারীরা অস্ত্রসজ্জিত ও শক্তিশালী ছিলো। মুক্তিযূদ্ধের সময় রেলের কয়লার গাড়ীতে বাঙালীদের পুড়িয়ে মেরেছে। লোকশেড বদ্ধ ভুমিতে কূপের মধ্যে বাঙালীদের হত্যা করে জড়ো করে রাখতো। তাদের অত্যাচার ছিলো খুবই নির্মম। সারাদেশ স্বাধীন হয় ১৬ই ডিসেম্বর কিন্ত রাজবাড়ী শত্রু মুক্ত হয় ১৮ই ডিসেম্বর।