রাজবাড়ী ০৯:৩৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১৩ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনামঃ
 রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতে তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়নে জামালপুর ইউনিয়ন বিএনপির  জনসভা  গোয়ালন্দ প্রেসক্লাবের দ্বিবার্ষিক নির্বাচন সম্পন্ন রাজবাড়ীতে ১ হাজার পিস ইয়াবা সহ মাদক ব্যবসায়ী আরিফ গ্রেপ্তার অগ্নিযুগের বিপ্লবী কমরেড আশুভরদ্বাজ  লাল সালাম বালিয়াকান্দিতে ভোক্তা অধিকার অভিযান ৩ প্রতিষ্ঠানে ১২ হাজার টাকা জরিমানা কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নুরে আলম গ্রেফতার রাজবাড়ীতে অগ্নিযুগের বিপ্লবী  কমরেড নেতা আশুভরদ্বাজের ৩২ তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত রাজবাড়ী বালিয়াকান্দিতে বজ্রপাতে এক কৃষকের মৃত্যু রাজবাড়ীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলা মামলায় আ. লীগের ১০ নেতা কারাগারে রাজবাড়ীতে বর্ণাঢ্য পহেলা বৈশাখ উদযাপিত।

পাঠাগার কি ও প্রয়োজনীয়তা কি ?

পাঠাগার কি
ও প্রয়োজনীয়তা কি ?
লেখক : রাজ্জাকুল আলম, সহকারী অধ্যাপক, মীর মশাররফ হোসেন কলেজ, সোনাপুর, বালিয়াকান্দি, রাজবাড়ী।

কৃষ্ণ সরকার :

শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। আর এই শিক্ষা অর্জনের প্রয়োজনীয় উপাদান বা বিষয়  হচ্ছে বই বা পুস্তক।পাঠাগার বা লাইব্রেরী হচ্ছে পুস্তকের শ্রেণীবদ্ধ সংগ্রহশালা। ব্যক্তিগত বা পারিবারিক এবং  সরকারিভাবে গড়ে উঠতে পারে পাঠাগার বা লাইব্রেরী।  একা একাই  সকল জ্ঞান সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না, বিভিন্ন তত্ব ও তথ্যের জন্য তাই প্রয়োজন হয় লাইব্রেরী বা পাঠাগারের। ব্যক্তিগত পাঠাগারে বই সংগ্রহে ব্যক্তির ইচ্ছা প্রাধান্য পায়। সাধারণত  পরিবারের সদস্যদের পছন্দের চাহিদার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠে এ ধরনের পাঠাগার।  পাবলিক লাইব্রেরীতে  সকল শ্রেণীর মানুষের চিন্তার বহিঃপ্রকাশ  ঘটে। একটি জাতিকে শিক্ষিত, সংস্কৃতিবান করে গড়ে তুলতে পাঠাগারের অবদান অনস্বীকার্য। মানুষের যুগ যুগান্তরের চিন্তা- চেতনা, ধ্যান-ধারণা ও জ্ঞানের প্রকাশ লাইব্রেরি বা পাঠাগারের মাধ্যমে হয়ে থাকে। এছাড়া শারিরীক ও মানসিক মুক্তির  সমাধানও লাইব্রেরীতে রয়েছে। একটি ভালো বই, একজন ভালো  মনের মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করে, জ্ঞানের ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করে। বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতির তুলনামূলক বিশ্লেষণ বইয়ের আলোচনায় উপস্থিত থাকে। এছাড়া আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক দর্শন বিভিন্ন লেখকের লেখার উপজীব্য বিষয় হিসেবে  থাকে, যে লেখা থেকে আমরা জ্ঞানার্জন করে আমাদের ব্যাক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে কাজে লাগাতে পারি।  বাংলাদেশে গ্রন্থাগারের প্রয়োজনীয়তা উন্নত দেশের তুলনায় বেশি। কেননা আমাদের দেশে মৌলিক চাহিদা মেটাতেই মানুষকে হিমশিম খেতে হয়। বই কেনার সামথ্য এ দেশের মানুষের  তুলনামূলকভাবে  খুব কম।

এদেশে শহরের পাশাপাশি গ্রামগঞ্জেও একসময়  ছোট বা বড় পরিসরের ব্যক্তিগত ও সমষ্টিকভাবে পাঠাগার বা লাইব্রেরী গড়ে তোলা হতো। সবাই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভাবে চাঁদা এমনকি মুষ্টি  চাউল সংগ্রহ করেও সেই সব লাইব্রেরী বা পাঠাগার পরিচালনা করতো।তৎসময় গ্রামগঞ্জের বিভিন্ন ক্লাব বা সমিতিতেও কিছু বই সংগ্রহ করে পাঠাগারের আদলে গড়ে তোলা হতো। পাঠাগারে বিভিন্ন বই,পত্রিকা, ম্যাগাজিন পড়ার ব্যবস্হা ছিলো এবং সেখান থেকে সাপ্তাহিক বা মাসে  সম্মিলিতভাবে প্রশ্নোত্তর  কুইজ, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অনুস্ঠানের আয়োজন করা হতো এবং পুরস্কার বিতরণ করা হতো। সেই সময় স্বল্পশিক্ষিত গৃহবধূ, মা-বোনেরাও গ্রন্থাগার থেকে লোকজনের সহায়তায় বই সংগ্রহ করে পাঠ করতেন। কালের বিবর্তনে বর্তমানে তথ্য-প্রযুক্তির নামে মানুষ আধুনিক ও বিলাসী হয়ে পড়ায় সেই লাইব্রেরীমূখী প্রবণতা মুখ থুবরে পড়েছে। মানুষ এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, টুইটার এগুলি নিয়ে ব্যস্ত। এছাড়া ই-বুক ব্যবহার করছে। বিভিন্ন কারনে  গ্রামগঞ্জের সেই পাঠাগার এখন আর তেমন দেখা যায় না, অনেক পাঠাগার  বন্ধ হয়ে গিয়েছে। শহরে এখনো পাঠাগার এবং সেখানে প্রচুর বই থাকলেও  পাঠক উপস্থিতি অনেক কম। অথচ শিক্ষার্জন, জ্ঞান অন্বেষণ, বিদ্যালাভ, মনের খোরাক জোগানো  কিংবা অবসরের  সঙ্গী হিসেবে পাঠাগারের ভূমিকা  অপরিহার্য। সেকালের ওমর খৈয়াম, একালের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রমথ চৌধুরী, সৈয়দ  মুজতবা আলী এরকম কবি লেখকেরা বই পাঠের  প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে গুরুত্বারোপ  করেছেন।  ইতিহাস, দর্শন, বিজ্ঞান -প্রযুক্তি, রাজনীতি, চলমান ঘটনা, বিশ্ব পরিচিতি, বিনোদন, ধর্ম, শিল্প- সংস্কৃতি,  মহান ব্যক্তিত্ব, আদর্শিক ও ধর্মীয় বই পাঠের মাধ্যমে আদর্শ, নৈতিক ও উন্নত জীবন গঠন সম্ভব। পাঠাগার ভিত্তিক বই পাঠের মাধ্যমে দূর হবে কুসংস্কার, হিংসা-প্রতিহিংসা অরাজকতাসহ যাবতীয় সামাজিক অবক্ষয় । সেই ঐতিহ্যবাহী ক্রম বিলুপ্ত লাইব্রেরির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে সমাজের  শিক্ষানুরাগী মানুষগুলো যদি ব্যাক্তিগতভাবে পাঠাগার স্হাপনে এগিয়ে আসে তাহলে পাঠাগার ফিরে পাবে তার  হারানো ঐতিহ্য।  যা প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের চিন্তা চেতনা, জ্ঞান-বিজ্ঞান, ধ্যান ধারণা, রীতিনীতি সহ শিক্ষার প্রসারে  উত্তরোত্তর ভূমিকা রাখবে বলে মনে করি।

লেখক : রাজ্জাকুল আলম, সহকারী অধ্যাপক, মীর মশাররফ হোসেন কলেজ, সোনাপুর, বালিয়াকান্দি, রাজবাড়ী।

Tag :

 রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতে তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়নে জামালপুর ইউনিয়ন বিএনপির  জনসভা 

পাঠাগার কি ও প্রয়োজনীয়তা কি ?

প্রকাশিত : ০৭:৪৪:৩৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৩

পাঠাগার কি
ও প্রয়োজনীয়তা কি ?
লেখক : রাজ্জাকুল আলম, সহকারী অধ্যাপক, মীর মশাররফ হোসেন কলেজ, সোনাপুর, বালিয়াকান্দি, রাজবাড়ী।

কৃষ্ণ সরকার :

শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। আর এই শিক্ষা অর্জনের প্রয়োজনীয় উপাদান বা বিষয়  হচ্ছে বই বা পুস্তক।পাঠাগার বা লাইব্রেরী হচ্ছে পুস্তকের শ্রেণীবদ্ধ সংগ্রহশালা। ব্যক্তিগত বা পারিবারিক এবং  সরকারিভাবে গড়ে উঠতে পারে পাঠাগার বা লাইব্রেরী।  একা একাই  সকল জ্ঞান সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না, বিভিন্ন তত্ব ও তথ্যের জন্য তাই প্রয়োজন হয় লাইব্রেরী বা পাঠাগারের। ব্যক্তিগত পাঠাগারে বই সংগ্রহে ব্যক্তির ইচ্ছা প্রাধান্য পায়। সাধারণত  পরিবারের সদস্যদের পছন্দের চাহিদার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠে এ ধরনের পাঠাগার।  পাবলিক লাইব্রেরীতে  সকল শ্রেণীর মানুষের চিন্তার বহিঃপ্রকাশ  ঘটে। একটি জাতিকে শিক্ষিত, সংস্কৃতিবান করে গড়ে তুলতে পাঠাগারের অবদান অনস্বীকার্য। মানুষের যুগ যুগান্তরের চিন্তা- চেতনা, ধ্যান-ধারণা ও জ্ঞানের প্রকাশ লাইব্রেরি বা পাঠাগারের মাধ্যমে হয়ে থাকে। এছাড়া শারিরীক ও মানসিক মুক্তির  সমাধানও লাইব্রেরীতে রয়েছে। একটি ভালো বই, একজন ভালো  মনের মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করে, জ্ঞানের ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করে। বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতির তুলনামূলক বিশ্লেষণ বইয়ের আলোচনায় উপস্থিত থাকে। এছাড়া আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক দর্শন বিভিন্ন লেখকের লেখার উপজীব্য বিষয় হিসেবে  থাকে, যে লেখা থেকে আমরা জ্ঞানার্জন করে আমাদের ব্যাক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে কাজে লাগাতে পারি।  বাংলাদেশে গ্রন্থাগারের প্রয়োজনীয়তা উন্নত দেশের তুলনায় বেশি। কেননা আমাদের দেশে মৌলিক চাহিদা মেটাতেই মানুষকে হিমশিম খেতে হয়। বই কেনার সামথ্য এ দেশের মানুষের  তুলনামূলকভাবে  খুব কম।

এদেশে শহরের পাশাপাশি গ্রামগঞ্জেও একসময়  ছোট বা বড় পরিসরের ব্যক্তিগত ও সমষ্টিকভাবে পাঠাগার বা লাইব্রেরী গড়ে তোলা হতো। সবাই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভাবে চাঁদা এমনকি মুষ্টি  চাউল সংগ্রহ করেও সেই সব লাইব্রেরী বা পাঠাগার পরিচালনা করতো।তৎসময় গ্রামগঞ্জের বিভিন্ন ক্লাব বা সমিতিতেও কিছু বই সংগ্রহ করে পাঠাগারের আদলে গড়ে তোলা হতো। পাঠাগারে বিভিন্ন বই,পত্রিকা, ম্যাগাজিন পড়ার ব্যবস্হা ছিলো এবং সেখান থেকে সাপ্তাহিক বা মাসে  সম্মিলিতভাবে প্রশ্নোত্তর  কুইজ, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অনুস্ঠানের আয়োজন করা হতো এবং পুরস্কার বিতরণ করা হতো। সেই সময় স্বল্পশিক্ষিত গৃহবধূ, মা-বোনেরাও গ্রন্থাগার থেকে লোকজনের সহায়তায় বই সংগ্রহ করে পাঠ করতেন। কালের বিবর্তনে বর্তমানে তথ্য-প্রযুক্তির নামে মানুষ আধুনিক ও বিলাসী হয়ে পড়ায় সেই লাইব্রেরীমূখী প্রবণতা মুখ থুবরে পড়েছে। মানুষ এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, টুইটার এগুলি নিয়ে ব্যস্ত। এছাড়া ই-বুক ব্যবহার করছে। বিভিন্ন কারনে  গ্রামগঞ্জের সেই পাঠাগার এখন আর তেমন দেখা যায় না, অনেক পাঠাগার  বন্ধ হয়ে গিয়েছে। শহরে এখনো পাঠাগার এবং সেখানে প্রচুর বই থাকলেও  পাঠক উপস্থিতি অনেক কম। অথচ শিক্ষার্জন, জ্ঞান অন্বেষণ, বিদ্যালাভ, মনের খোরাক জোগানো  কিংবা অবসরের  সঙ্গী হিসেবে পাঠাগারের ভূমিকা  অপরিহার্য। সেকালের ওমর খৈয়াম, একালের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রমথ চৌধুরী, সৈয়দ  মুজতবা আলী এরকম কবি লেখকেরা বই পাঠের  প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে গুরুত্বারোপ  করেছেন।  ইতিহাস, দর্শন, বিজ্ঞান -প্রযুক্তি, রাজনীতি, চলমান ঘটনা, বিশ্ব পরিচিতি, বিনোদন, ধর্ম, শিল্প- সংস্কৃতি,  মহান ব্যক্তিত্ব, আদর্শিক ও ধর্মীয় বই পাঠের মাধ্যমে আদর্শ, নৈতিক ও উন্নত জীবন গঠন সম্ভব। পাঠাগার ভিত্তিক বই পাঠের মাধ্যমে দূর হবে কুসংস্কার, হিংসা-প্রতিহিংসা অরাজকতাসহ যাবতীয় সামাজিক অবক্ষয় । সেই ঐতিহ্যবাহী ক্রম বিলুপ্ত লাইব্রেরির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে সমাজের  শিক্ষানুরাগী মানুষগুলো যদি ব্যাক্তিগতভাবে পাঠাগার স্হাপনে এগিয়ে আসে তাহলে পাঠাগার ফিরে পাবে তার  হারানো ঐতিহ্য।  যা প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের চিন্তা চেতনা, জ্ঞান-বিজ্ঞান, ধ্যান ধারণা, রীতিনীতি সহ শিক্ষার প্রসারে  উত্তরোত্তর ভূমিকা রাখবে বলে মনে করি।

লেখক : রাজ্জাকুল আলম, সহকারী অধ্যাপক, মীর মশাররফ হোসেন কলেজ, সোনাপুর, বালিয়াকান্দি, রাজবাড়ী।