
কৃষ্ণ কুমার সরকার:(ষ্টাফ রিপোর্টার)
শুভ জন্মাষ্টমী
সনাতন ধর্মের কাছে এটি একটি বিশেষ দিন। এদিন ভগবান কৃষ্ণকে গোপাল রূপে পুজো করা হয়। সনাতন ধর্মে এই দিনটির তাৎপর্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভগবান কৃষ্ণের জন্ম হয়েছিল ভাদ্রমাসের কৃষ্ণ পক্ষের অষ্টমী তিথিতে। রোহিনী নক্ষত্রে শ্রী কৃষ্ণের জন্ম হওয়ায় এই বিশেষ দিনটিতে তাঁর জন্মদিন হিসেবে পালিত হয়।
সনাতন ধর্মাবলম্বী, বিশেষত বৈষ্ণবদের কাছে জন্মাষ্টমী গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। এই উৎসব নানা ভাবে উৎযাপন করা হয়, যেমন – ভগবত পুরাণ অনুযায়ী নৃত্য, নাটক যাকে বলা হয় রাসলীলা বা কৃষ্ণলীলা, মধ্যরাত্রি তে কৃষ্ণের জন্মের মুহূর্তে ধর্মীয় গীত গাওয়া, উপবাস, দহিহান্ডি প্রভৃতি।
অন্যদিকে দহিহান্ডি প্রথায় অনেক উঁচুতে মাখনের হাড়ি রাখা হয় এবং অনেক ছেলে মিলে মানুষের পিরামিড তৈরি করে সেই হাড়ি ভাঙ্গার চেষ্টা করে। তামিলনাড়ুতে এ প্রথা উড়িয়াদি নামে পরিচিত।[১১]
জন্মাষ্টমী বিশেষভাবে পালন করা হয় মথুরা এবং বৃন্দাবনে। তাছাড়া মণিপুর, আসাম, ত্রিপুরা, পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, এবং ভারতবর্ষের অন্যান্য রাজ্যে যেখানে প্রচুর বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের মানুষ থাকেন সেখানে পালন করা হয়।[১২] এছাড়াও বাংলাদেশের ঢাকা প্রভৃতি জায়গা ও অন্য দেশে জন্মাষ্টমী পালন করা হয়।[১১][১৩]
তিনি ধর্মরাষ্ট্র-প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্ব দানকারী একজন প্রাচীন ভারতীয় রাজপুত্র ও রাজার ভূমিকায় আজ থেকে প্রায় ৫০০০ বৎসর পূর্বে অবতীর্ণ হন। ভিন্ন ধর্মের লোকেরা ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে শ্রীকৃষ্ণের আরাধনা করে থাকেন।
কৃষ্ণ শব্দের আক্ষরিক অর্থ কালো বা ঘন নীল। গৌড়ীয় বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্রে, কৃষ্ণ শব্দটির আভিধানিক অর্থ সর্বাকর্ষক।
ভাগবত পুরাণে কৃষ্ণকে প্রায়শই বংশী-বাদনরত এক কিশোরের রূপে বর্ণনা করা হয়েছে।[১৪] আবার ভগবদ্গীতায়, তিনি এক পথপ্রদর্শক রূপে দন্ডায়মান। সমগ্র মহাভারত কাব্যে, তিনি একজন কূটনীতিজ্ঞ হিসাবে পাণ্ডবপক্ষে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অর্জুনের রথের সারথিরূপে অবতীর্ণ হয়েছেন।[১৫] দর্শন ও ধর্মতাত্ত্বিক ঐতিহ্যে শ্রীকৃষ্ণ-সংক্রান্ত উপাখ্যানগুলি বহুধা পরিব্যাপ্ত।[১৬] তিনি একাধারে দেবগুণা শিশু, রঙ্গকৌতুকপ্রিয়, আদর্শ প্রেমিক, দিব্য নায়ক ও পরম ঈশ্বর।[১৭] কৃষ্ণ-সংক্রান্ত উপাখ্যানগুলি মূলত লিখিত আছে মহাভারত, হরিবংশ, ভাগবত পুরাণ ও বিষ্ণু পুরাণ গ্রন্থে।
চতুর্থ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ থেকেই বাসুদেব, কৃষ্ণ ও গোপাল প্রভৃতি কৃষ্ণের বিভিন্ন রূপের উপাসনাকারী বিভিন্ন সম্প্রদায়ের অস্তিত্বের কথা জানা যায়। খ্রিষ্টীয় নবম শতাব্দীতে দক্ষিণ ভারতে কৃষ্ণভক্তি আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। উত্তর ভারতে কৃষ্ণধর্ম সম্প্রদায়গুলি সুপ্রতিষ্ঠিত হয় মোটামুটি একাদশ শতাব্দী নাগাদ। দশম শতাব্দী থেকেই ভক্তি আন্দোলনের ক্রমবিস্তারের ফলে কৃষ্ণ শিল্পকলার এক মুখ্য বিষয় হয়ে ওঠেন। ওড়িশায় জগন্নাথ, মহারাষ্ট্রে বিঠোবা, রাজস্থানে শ্রীনাথজি, অন্ধ্রপ্রদেশে ভেঙ্কাটেশ বালাজী প্রভৃতি শ্রীকৃষ্ণের রূপগুলিকে কেন্দ্র করে আঞ্চলিক ভক্তিসংস্কৃতিও বিকাশলাভ করে। তার প্রতি নিষ্ঠাযুক্ত ভক্তি ও তার অপ্রাকৃত লীলা থেকে সহজেই উপলব্ধি করতে পারা যায় যে তিনিই পরমেশ্বর ভগবান স্বয়ং। বর্তমানে কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) সমগ্র পৃথিবীতে শ্রীকৃষ্ণের মহিমা প্রচার এবং কৃষ্ণকেন্দ্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় নিয়োজিত।