রাজবাড়ী ০৫:৩৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গোয়ালন্দ মহাসড়কের পাশের ৫৪১টি চারাগাছ কেটে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা!

  • রাজবাড়ী সময় ডেস্ক
  • প্রকাশিত : ০৫:৫৩:২১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • ৬২৯ বার পড়া হয়েছে

মো. সাজ্জাদ হোসেন গোয়ালন্দ(রাজবাড়ী) প্রতিনিধি

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে রোপনকৃত সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের চার বছর বয়সী ৫ শতাধিক গাছ কেটে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা।

মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বিভিন্ন প্রজাতির ওই চারা গাছগুলো কাটা হয়। স্হানীয়রা কেটে ফেলা গাছগুলো টেনে নিয়ে যাওয়ায় পাশ্ববর্তী অনেকের সর্ষে, পেয়াঁজ ও রসুন খেত নষ্ট হয়ে গেছে।

বন কর্মকর্তাদের অভিযোগ, মহাসড়কের পাশে পায়ে চলার জন্য এইচবিবির রাস্তা তৈরীর জন্য খনন কাজ চলছে। খননকাজে নিয়োজিত স্কেভেটর চালকের নির্দেশে পাশ্ববর্তী রেললাইনের ধারে বসবাসরত লোকজন ওই গাছগুলো কেটে নেয়।

তবে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ থেকে এ ধরনের কোন নির্দেশনা দেওয়া হয়নি বলে সওজ দাবী করেছেন।

গোয়ালন্দ উপজেলা বন কর্মকর্তা (ফরেষ্টার) মো. মনিরুজ্জামান খান জানান, মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে তাঁকে সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের উপকারভোগী সমিতির লোকজন গাছ কাটার কথা জানান। খবর পেয়ে রাতেই তিনি দেখতে পান, ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পূর্ব পাশে বাফার সারের গোডাউনের পর থেকে কেকেএস সেফহোম পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে রোপনকৃত সমস্ত গাছের চারা কেটে ফেলা হয়েছে।

পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, মহাসড়কের পাশে মাটি খনন কাজে নিয়োজিত স্কেভেটর চালক এ গাছ কাটতে নির্দেশ দেন।

সামাজিক বনায়ন প্রকল্প বাগানের সভাপতি আব্দুল আহাদ বলেন, ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের বৃক্ষরোপন তহবিল থেকে বাংলাদেশ হ্যাচারী থেকে রেলগেট পর্যন্ত মহাসড়কের দুই পাশে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা ব্যায়ে প্রায় ৪ হাজার চারা গাছ রোপন করা হয়। এরমধ্যে চিকরাশি, সেগুন, মেহগনি, আকাশমনি, শিশু, এ্যাকাশি ও বকাইনিম রয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর কেকেএস সেফহোম থেকে বাফার সারের গোডাউন পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকার ৫৪১টি গাছ গোড়া থেকে কেটে ফেলা হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িত ১১-১২ জনের নাম পাওয়া গেছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছি।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ঘুরে দেখা যায়, মহাসড়কের পূর্ব পাশের ওই অংশে সমস্ত গাছ গোড়া থেকে কাটা। বন বিভাগের লোকজন কাটা গাছের তল্লাশি করছেন। সড়কের পাশে বিভিন্ন পেঁয়াজ, রসুন ও শর্ষে খেতের ভিতর দিয়ে গাছপালা টেনে নেওয়ায় নষ্ট করায় জমির মালিকগন গালমন্দ করছেন। রেললাইনের পাশে অবস্থিত বিভিন্ন বাড়ির পিছনের ঝোঁপ -ঝাঁড়ের ভিতর কাটা গাছ লুকিয়ে রাখতে দেখা যায়।

স্থানীয় ফকির পাড়ার সিদ্দিক মন্ডল, হাসমত সরদার, মজিবর মন্ডল সহ কয়েকজন বলেন, মঙ্গলবার বিকেলেও তারা তাদের ফসলের ক্ষেত ভালো দেখেছেন। সকালে এসে দেখেন সব নষ্ট। জমির ওপর দিয়ে গাছপালা টেনে নেওয়ায় অনেক ফসল নষ্ট হয়ে গেছে।

বন বিভাগের রাজবাড়ী জেলা রেঞ্জার মো. হাবিবুজ্জামান বলেন, রাতে জানার পর তাৎতক্ষনিক গোয়ালন্দের ফরেস্টারকে তদন্ত সাপেক্ষে গাছ কাটার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে নির্দেশ দিয়েছি। সেইসাথে বিষয়টি সওজর নির্বাহী প্রকৌশলীকে জানিয়েছি।

রাজবাড়ী সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নওজিস রহমান বলেন, মহাসড়কের পাশে পায়ে চলার জন্য এইচবিবির কাজ চলছে। গাছগুলো সড়কের ঢালুতে রোপন করা। এ কাজের সাথে গাছ কাটার কোন সম্পর্ক নেই। গাছ কাটার প্রয়োজন হলে বনবিভাগকে চিঠি দিয়ে জানাতাম।
তৃতীয় কোন পক্ষ ন্যাক্কারজনক এ ঘটনাটি ঘটিয়ে থাকতে পারে। তবে তাদের ভেকু চালক জড়িত থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাকির হোসেন বলেন, সড়কের পাশ থেকে রাতের মধ্যে এতগুলো গাছের চারা এভাবে কেটে ফেলা খুবই ন্যাক্কারজনক। বিষয়টি আমি পরে জানতে পেরেছি। খোঁজ নিয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বন বিভাগকে অনুরোধ করেছি।

Tag :

গোয়ালন্দ মহাসড়কের পাশের ৫৪১টি চারাগাছ কেটে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা!

প্রকাশিত : ০৫:৫৩:২১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

মো. সাজ্জাদ হোসেন গোয়ালন্দ(রাজবাড়ী) প্রতিনিধি

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে রোপনকৃত সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের চার বছর বয়সী ৫ শতাধিক গাছ কেটে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা।

মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বিভিন্ন প্রজাতির ওই চারা গাছগুলো কাটা হয়। স্হানীয়রা কেটে ফেলা গাছগুলো টেনে নিয়ে যাওয়ায় পাশ্ববর্তী অনেকের সর্ষে, পেয়াঁজ ও রসুন খেত নষ্ট হয়ে গেছে।

বন কর্মকর্তাদের অভিযোগ, মহাসড়কের পাশে পায়ে চলার জন্য এইচবিবির রাস্তা তৈরীর জন্য খনন কাজ চলছে। খননকাজে নিয়োজিত স্কেভেটর চালকের নির্দেশে পাশ্ববর্তী রেললাইনের ধারে বসবাসরত লোকজন ওই গাছগুলো কেটে নেয়।

তবে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ থেকে এ ধরনের কোন নির্দেশনা দেওয়া হয়নি বলে সওজ দাবী করেছেন।

গোয়ালন্দ উপজেলা বন কর্মকর্তা (ফরেষ্টার) মো. মনিরুজ্জামান খান জানান, মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে তাঁকে সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের উপকারভোগী সমিতির লোকজন গাছ কাটার কথা জানান। খবর পেয়ে রাতেই তিনি দেখতে পান, ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পূর্ব পাশে বাফার সারের গোডাউনের পর থেকে কেকেএস সেফহোম পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে রোপনকৃত সমস্ত গাছের চারা কেটে ফেলা হয়েছে।

পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, মহাসড়কের পাশে মাটি খনন কাজে নিয়োজিত স্কেভেটর চালক এ গাছ কাটতে নির্দেশ দেন।

সামাজিক বনায়ন প্রকল্প বাগানের সভাপতি আব্দুল আহাদ বলেন, ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের বৃক্ষরোপন তহবিল থেকে বাংলাদেশ হ্যাচারী থেকে রেলগেট পর্যন্ত মহাসড়কের দুই পাশে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা ব্যায়ে প্রায় ৪ হাজার চারা গাছ রোপন করা হয়। এরমধ্যে চিকরাশি, সেগুন, মেহগনি, আকাশমনি, শিশু, এ্যাকাশি ও বকাইনিম রয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর কেকেএস সেফহোম থেকে বাফার সারের গোডাউন পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকার ৫৪১টি গাছ গোড়া থেকে কেটে ফেলা হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িত ১১-১২ জনের নাম পাওয়া গেছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছি।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ঘুরে দেখা যায়, মহাসড়কের পূর্ব পাশের ওই অংশে সমস্ত গাছ গোড়া থেকে কাটা। বন বিভাগের লোকজন কাটা গাছের তল্লাশি করছেন। সড়কের পাশে বিভিন্ন পেঁয়াজ, রসুন ও শর্ষে খেতের ভিতর দিয়ে গাছপালা টেনে নেওয়ায় নষ্ট করায় জমির মালিকগন গালমন্দ করছেন। রেললাইনের পাশে অবস্থিত বিভিন্ন বাড়ির পিছনের ঝোঁপ -ঝাঁড়ের ভিতর কাটা গাছ লুকিয়ে রাখতে দেখা যায়।

স্থানীয় ফকির পাড়ার সিদ্দিক মন্ডল, হাসমত সরদার, মজিবর মন্ডল সহ কয়েকজন বলেন, মঙ্গলবার বিকেলেও তারা তাদের ফসলের ক্ষেত ভালো দেখেছেন। সকালে এসে দেখেন সব নষ্ট। জমির ওপর দিয়ে গাছপালা টেনে নেওয়ায় অনেক ফসল নষ্ট হয়ে গেছে।

বন বিভাগের রাজবাড়ী জেলা রেঞ্জার মো. হাবিবুজ্জামান বলেন, রাতে জানার পর তাৎতক্ষনিক গোয়ালন্দের ফরেস্টারকে তদন্ত সাপেক্ষে গাছ কাটার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে নির্দেশ দিয়েছি। সেইসাথে বিষয়টি সওজর নির্বাহী প্রকৌশলীকে জানিয়েছি।

রাজবাড়ী সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নওজিস রহমান বলেন, মহাসড়কের পাশে পায়ে চলার জন্য এইচবিবির কাজ চলছে। গাছগুলো সড়কের ঢালুতে রোপন করা। এ কাজের সাথে গাছ কাটার কোন সম্পর্ক নেই। গাছ কাটার প্রয়োজন হলে বনবিভাগকে চিঠি দিয়ে জানাতাম।
তৃতীয় কোন পক্ষ ন্যাক্কারজনক এ ঘটনাটি ঘটিয়ে থাকতে পারে। তবে তাদের ভেকু চালক জড়িত থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাকির হোসেন বলেন, সড়কের পাশ থেকে রাতের মধ্যে এতগুলো গাছের চারা এভাবে কেটে ফেলা খুবই ন্যাক্কারজনক। বিষয়টি আমি পরে জানতে পেরেছি। খোঁজ নিয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বন বিভাগকে অনুরোধ করেছি।