
মশায় কাহিল রাজবাড়ী পৌরবাসী ॥ বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা
নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজবাড়ীতে মশার উপদ্রবের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। মশার কামড়ে মানুষের যন্ত্রণার যেন শেষ নেই। পৌর কর্তৃপক্ষ মশা নিধনের জন্য কার্যকর তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়নি। তারা বলছে মশা নিধনের বাজেট তাদের নেই। এদিকে রাজবাড়ীতে ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছেই। এমন অবস্থা রাজবাড়ীতে আর কখনও দেখা যায়নি। সরকারি হিসেবেই এ পর্যন্ত রাজবাড়ীতে ১ হাজার ৯০ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। তবে বেসরকারি হিসেবে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা আরও বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পৌরবাসী বলছে, শহরের বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। ঝোপঝাড়, জঙ্গল, ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করায় মশার উপদ্রব বেড়েই চলেছে। পৌরসভার অধিকাংশ ড্রেনগুলোতে পানিপ্রবাহ নেই। ময়লা আবর্জনায় পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে ড্রেনে জমে থাকা পানি থেকে জন্ম নিচ্ছে মশা। মশার আক্রমণ থেকে বাঁচতে দুপুর থেকেই কয়েল জ¦ালানো অথবা মশক নিধনের ওষুধ স্প্রে করতে হচ্ছে। আগে পৌরসভার উদ্যোগে বিভিন্ন এলাকায় মশা নিধনের ওষুধ স্প্রে করা হলেও এবার করতে দেখা যায়নি। যে কারণে মশার উপদ্রব বেড়েই চলছে।
সরেজমিন পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা গিয়ে দেখা যায়, পৌরসভার গোডাউনের সামনে, বাজারের বিভিন্ন স্থানে, নতুন বাজারের সামনেসহ আবাসিক এলাকায় যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলে রাখা হয়েছে। অনেক এলাকার ঝোপ-ঝাড়, জঙ্গল, ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করায় মশার উপদ্রব বাড়ছে। ড্রেনগুলোতে পানিপ্রবাহ না থাকায় ময়লা আবর্জনা জমে আছে। অনেক এলাকার ড্রেন লাাইনের ঢাকনা নেই।
রাজবাড়ী শহরের বিনোদপুর নতুনপাড়া এলাকার বাসিন্দা ফয়েজুল হক কল্লোল জানান, দিনে মশা রাতে মশা। তাদের এলাকায় ঝোড় জঙ্গল বেশি। পৌর কর্তৃপক্ষ এই বছরে একদিন ফগার মেশিন দিয়েছিল রাস্তা দিয়ে। কারও বাড়িতে যায়নি। এতে রাস্তার মশা ঘরে চলে এসেছে। এখন সমস্যা আরও বেড়েছে।
রাজবাড়ী শহরের লক্ষীকোল এলাকার বাসিন্দা দীপঙ্কর সরকার জানান, তাদের এলাকায় প্রতিটি বাড়িতেই প্রচুর মশা। কয়েকদিন আগে তার স্ত্রী ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত হয়। রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসক। ঢাকায় কয়েকদিন চিকিৎসার পর এখন সুস্থ। কিন্তু এলাকার মানুষের মধ্যে মশার আতঙ্ক রয়েই গেছে। তার সহোদর ছোট ভাইও জ¦রে আক্রান্ত।
রাজবাড়ী শহরের আজাদী ময়দান এলাকার বাসিন্দা বৃদ্ধা মাইশা বেগম জানান, মশা খালি কামড়ায়। কামড়ের চোটে শরীরে চুলকানি হয়েছে। তিনি চলাফেরা করতে পারেন না। মশাও মারতে পারেন না। খুব সমস্যায় আছেন।
গৃহবধূ চম্পা খাতুন জানান, মশার অত্যাচারে ঘরে থাকা যায় না। দুপুর দুইটা বাজলেই কয়েল জ্বালিয়ে রাখতে হয়। পৌরসভা থেকে মশা মারার জন্য একদিন এসেছিল। ওষুধ ছিটানোর পর আবার যা তাই হয়ে গেছে।
রাজবাড়ী জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত ১ হাজার ১১১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছে ১ হাজার ৫২ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজবাড়ীর বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু জ¦র নিয়ে ভর্তি হয়েছে ২১ জন রোগী। এখন পর্যন্ত ভর্তি আছে ৫৯ জন।
রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন ডা. ইব্রাহীম টিটন বলেন, বিষয়টি নিয়ে গত আইনশৃঙ্খলা সভায় ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। এটি নিয়ে কাজ করছে সবাই। মশা মারা বা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখার কাজ পৌরসভার। ব্যক্তি পর্যায়েও এর উদ্যোগ নেওয়া উচিৎ। তারা মানুষকে সচেতন করার জন্য কাজ করছেন। ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসার ব্যবস্থা রাজবাড়ীতে আছে বলে জানান তিনি। প্রয়োজনীয় ওষুধপত্রও আছে। বেসরকারি হিসেবে ডেঙ্গু রোগী আক্রান্তের সংখ্যা আরও বেশি বলে ধারণা তার।
এবিষয়ে রাজবাড়ী পৌর মেয়র আলমগীর শেখ তিতু বলেন, রাজবাড়ী অনেকটাই পরিছন্ন শহর। বাজারসহ যে ড্রেনগুলো আছে সেগুলো আমরা চেষ্টা করি পরিষ্কার পরিছন্ন রাখার জন্য। কিন্তু সাধারণ মানুষ যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলে রাখে। ড্রেন তো পানি নিষ্কাশনের জন্য, ডাষ্টবিন না। ডাস্টবিনে ময়লা আবর্জনা ফেলার কারণে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। এজন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে। পরিছন্নকর্মীরা প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি জানান, পৌরসভায় ১৩ টি ফগার মেশিন রয়েছে। এরমধ্যে ১০টি অকেজো। আমি ঢাকা থেকে তিন-চারবার লোক এনে মেরামত করিয়েছেন। মেরামতের তিন চারদিন পরেই মেশিন আবার নষ্ট হয়ে যায়। সেই সাথে মশা নিধনের জন্য যথেষ্ট বরাদ্দও নেই। যে তিনটি সচল মেশিন আছে তা দিয়ে মশা নিধনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।