রাজবাড়ী ০৮:২১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জীবন যেখানে যেমন, দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর সূচনা ও রূপসী’র (ছদ্মনাম) জীবনের গল্প

মো. সাজ্জাদ হোসেন
গোয়ালন্দ(রাজবাড়ী) প্রতিনিধি

সূচনা (ছদ্মনাম) দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর একজন যৌনকর্মী। মাদারীপুর জেলার কোনো এক অজোপাড়া গ্রামের দরিদ্র পরিবারের বর্গাচাষী খলিল সরদার ও শান্তা বেগমের(ছদ্মনাম) চার সন্তানের মধ্যে সূচনা মেজো। বাবা-মা গরীব বর্গাচাষী থাকায় সন্তানদের বেশিদূর পর্যন্ত পড়ালেখা করাতে পারেননি। সূচনার বয়স যখন ১২ বছর তখন এলাকার এক বড় ভাই তাকে ঢাকায় বাসা বাড়িতে কাজ পেয়ে দিবে বলে কথা দিয়ে সূচনাকে ঢাকায় নিয়ে আসে। কিছুদিন ঢাকায় একটি গার্মেন্টসে কাজ করে সূচনা। মাসখানেকপর অন‍্যত্র কাজের কথা বলে দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর এক বাড়িওয়ালার কাছে বিশ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয় এলাকার সেই বড় ভাই। সেই থেকে সূচনা যৌনপল্লীর বাসিন্দা হিসাবে বসবাস করতে থাকে। সূচনার বাড়িওয়ালা সূচনাকে না জানিয়ে ঘুমের ঔষধের মধ্যে মোটা-তাজা করণ ঔষধ খাওয়াতে থাকে এবং সূচনা কে একটি অন্ধকার ঘরে আটকে রেখে যৌনকাজে লিপ্ত হওয়ার জন‍্য চাপ দিতে থাকে। তখনও সূচনা জানতো না সে কোথায় এসে পরেছে। সে মাস দুয়েকপর জানতে পারে এখানে দেহ ব‍্যাবসা করে রোজগার করতে হয়। সূচনা যখন এসব বুঝতে পারলো তখন এখান থেকে অনেকবার পালানোর চেষ্টা করে ধরা পরে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হয়। একসময় সব সহ‍্য করে মনের অজান্তেই নিজেকে খদ্দেরের কাছে বিক্রি করে দেয়। সেই থেকেই সূচনা আজ পর্যন্ত যৌন পল্লীতেই আছে। সূচনা যখন সব কিছু মেনে নিয়ে স্বাভাবিক ভাবে বাড়িওয়ালীর কথা মতো কাজ করে তার কেনা টাকা পরিশোধ করে দেয় তখন থেকে সে মুক্তভাবে যৌনজীবন শুরু করতে থাকে। হঠাৎ একদিন এক খদ্দেরের সাথে ঘর বাধার স্বপ্ন দেখে এবং সেই লোকটির সাথে যৌনপল্লী থেকে বের হয়ে আবার ঢাকায় চলে যায়। ছয় মাস সংসার করার পর তার স্বামী হঠাৎ বুকে যন্ত্রণা নিয়ে মৃত্যু বরণ করলে সূচনা পুনরায় দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর রেজিমেন্টাল গলির ভাড়াটিয়া হিসাবে যৌনপল্লীতে চলে আসে এবং স্বামীকে ভুলতে বিভিন্ন নেশাদ্রব‍্য পান করতে থাকে। নেশা এবং স্বামীর বেদনায় সূচনা যখন দিশেহারা তখন তার জীবনে আছর উদ্দিন নামের এক বাবুর প্রবেশ হয়। আছর উদ্দিনের সাথে সূচনার প্রায় ছয়-সাত বছর সম্পর্ক থাকে আর এ দীর্ঘ বছর সম্পর্ক থাকাকালীন সময় যৌন ব‍্যাবসা করে যা রোজগার করতো সেইসব টাকা বাবুকে দিয়ে দিতো। আছর উদ্দিন তার সরলতার সুযোগ নিয়ে সূচনার সর্বস্ব নিয়ে একদিন গাঢাকা দেয়। অনেক খোঁজাখুঁজি করার পরেও সূচনা যখন দিশেহারা তখন তার একমাত্র অবলম্বন হয়ে পরে নেশাদ্রব‍্য। সূচনা যখন অনেক অসুস্থ তখন স্থানীয় একটি এনজিওর স্বাস্থ‍্যকর্মীর সাথে পরিচয় হয়। স্বাস্থ‍্যকর্মী সূচনার কথা শুনে কাউন্সিলর কাছে নিয়ে আসেন। তিন-চার মাস সূচনাকে কাউন্সিলিং এবং চিকিৎসকের চিকিৎসায় সূচনা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। সূচনা এখন আর নেশা-দ্রব‍্য ব‍্যবহার করেনা। একটু খোঁজ নিলেই মিলবে এরকম অনেক অসহায় যৌনকর্মীর গল্প। এরকম আর একজন রূপসীর গল্প- “রূপসী”-বরিশাল জেলার ঝালকাঠি উপজেলার নিভৃত অজোপাড়া গ্রামের একজন সামান্য দরিদ্র মুদি দোকাদারেরএকমাত্র মেয়ে। রূপসী পরিবারের একমাত্র মেয়ে হওয়ায় অনেক আদরের। বাবা গরীব মুদি দোকানদার হওয়া স্বত্বেও মেয়েকে ৫ম শ্রেণি পাশ করানোর পরে স্থানীয় একটি হাই স্কুলে ভর্তি করে দেয়। রূপসী একমাত্র মেয়ে হওয়াতে অতি আদর পাওয়ায় তেমন ভালো ছাত্রী ছিলেন না। রূপসীর টিভি দেখার প্রতি ঝোঁক ছিলো খুব বেশি আর একারণে রূপসী স্কুলের ছয়দিনের মধ্যে দুদিনের বেশি স্কুলে যেতেন না আর গেলেও দুএকটা ক্লাস করেই স্কুল থেকে পালিয়ে এসে পাশের বাড়ির গ্রাম‍্য হিসাবে এক মামার বাড়িতে টিভি দেখতে লেগে যেতেন। কোনো মতে টেনেটুনে রূপসী যখন ক্লাস এইটে পড়ালেখা শুরু করে তখন তার গ্রামের কথিত মামার মাথায় এক দুষ্টু বুদ্ধি ভর করে। রূপসী যখনি ওই মামার বাড়িতে টিভি দেখতে আসতেন তখন ওই মামা রূপসীকে বিভিন্ন রকমের খাবার কিনে খেতে দিতেন। রূপসীও খাবারের লোভে প্রায় প্রতিদিন ওই মামা বাড়িতে টিভি দেখতেন এবং মাঝে মধ্যে কথিত মামার মেয়ের সাথে রাতও কাটাতেন ওখানে। এদিকে রূপসী পরিবারের একমাত্র মেয়ে হওয়াতে মেয়েকে তেমন কিছু বলতেন না তার বাবা-মা। হঠাৎ একদিন রূপসীর কথিত মামা চকলেটের সাথে ঘুমের দ্রব‍্য মিশিয়ে রূপসীকে অজ্ঞান করে মাদারীপুর যৌনপল্লীতে এক বাড়িওয়ালীর কাছে বিক্রি করে দেয়। রূপসীর যখন জ্ঞান ফেরে তখন রূপসী দেখে সে অচেনা ঘরে একটা খাটে শুয়ে আছে। রূপসীর যখন ভালোভাবে জ্ঞান ফিরে তখন সে দেখতে পাই তার ঘরের দরজা বাইরে থেকে আটকানো। তখনও সে বুঝে উঠতে পারেনি সে কোথায়? রূপসীর তখনও ঘোর কাটেনি। যখন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যার আজানের শব্দ রূপসীর কানে আসে তখন রূপসী কান্নাকাটি করে ঘরের দরজা ধাক্কাতে থাকে। তখন বাইরে থেকে এক মহিলা এসে দরজা খুলে দিলে রূপসী বাইরে বের হতে যায় আর তখনি ওই মহিলা ধমক দিয়ে রূপসীকে বলে তোর মামা তোকে আমার কাছে চল্লিশ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছে আর তুই এখন বরিশালে নেই, তুই এখন মাদারীপুর যৌনপল্লীতে আছিস। আর এখানে যখন এসেই পরেছিস তখন আর এখান থেকে বের হতে পারবি না। আর আমি তোকে টাকা দিয়ে কিনেছি। আমার টাকা তুই দেহ ব‍্যাবসা করে শোধ করবি। রূপসী প্রথম প্রথম দেহ ব‍্যাবসা করতে রাজি না হওয়াতে ওকে খাবার দেয়া হতো না এবং প্রতিদিন ঘরে তালা বন্ধ করে রাখতো। এবং বাহির থেকে দরজা বন্ধ করে ভেতরে লোক পাঠিয়ে জোর করে দেহ ব‍্যাবসায় লিপ্ত করতে বাধ‍্য করা হয়। তখন কোনো উপায় না পেয়ে তিন চার বছর এভাবেই কেটে গেলো। তারপর যখন আমার কেনা টাকা আমি পরিশোধ করে দেয় এবং স্বেচ্ছায় যৌনকাজ করতে থাকি তখন থেকে আমাকে স্বাধীন জীবন-যাপন করতে দেয়া হয়। বাড়িতে যাওয়ার অনেক ভেবেছি কিন্তু লজ্জায় যেতে পারিনি। তারপর একদিন এক খদ্দেরের হাত ধরে দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে চলে আসি। ১৪ বছর হলো দৌলতদিয়া পল্লীতেই আছি। যখন বাড়ির কথা ও বাবা মায়ের কথা মনে পরে তখন খুব পরিমাণে নেশায় ডুবে থাকি।

এরকম হাজার খানেক সূচনা-রূপসীর বসবাস এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তর ও দেশের বৃহত্তম দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে।

Tag :

জীবন যেখানে যেমন, দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর সূচনা ও রূপসী’র (ছদ্মনাম) জীবনের গল্প

প্রকাশিত : ০৩:২৩:০০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

মো. সাজ্জাদ হোসেন
গোয়ালন্দ(রাজবাড়ী) প্রতিনিধি

সূচনা (ছদ্মনাম) দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর একজন যৌনকর্মী। মাদারীপুর জেলার কোনো এক অজোপাড়া গ্রামের দরিদ্র পরিবারের বর্গাচাষী খলিল সরদার ও শান্তা বেগমের(ছদ্মনাম) চার সন্তানের মধ্যে সূচনা মেজো। বাবা-মা গরীব বর্গাচাষী থাকায় সন্তানদের বেশিদূর পর্যন্ত পড়ালেখা করাতে পারেননি। সূচনার বয়স যখন ১২ বছর তখন এলাকার এক বড় ভাই তাকে ঢাকায় বাসা বাড়িতে কাজ পেয়ে দিবে বলে কথা দিয়ে সূচনাকে ঢাকায় নিয়ে আসে। কিছুদিন ঢাকায় একটি গার্মেন্টসে কাজ করে সূচনা। মাসখানেকপর অন‍্যত্র কাজের কথা বলে দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর এক বাড়িওয়ালার কাছে বিশ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয় এলাকার সেই বড় ভাই। সেই থেকে সূচনা যৌনপল্লীর বাসিন্দা হিসাবে বসবাস করতে থাকে। সূচনার বাড়িওয়ালা সূচনাকে না জানিয়ে ঘুমের ঔষধের মধ্যে মোটা-তাজা করণ ঔষধ খাওয়াতে থাকে এবং সূচনা কে একটি অন্ধকার ঘরে আটকে রেখে যৌনকাজে লিপ্ত হওয়ার জন‍্য চাপ দিতে থাকে। তখনও সূচনা জানতো না সে কোথায় এসে পরেছে। সে মাস দুয়েকপর জানতে পারে এখানে দেহ ব‍্যাবসা করে রোজগার করতে হয়। সূচনা যখন এসব বুঝতে পারলো তখন এখান থেকে অনেকবার পালানোর চেষ্টা করে ধরা পরে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হয়। একসময় সব সহ‍্য করে মনের অজান্তেই নিজেকে খদ্দেরের কাছে বিক্রি করে দেয়। সেই থেকেই সূচনা আজ পর্যন্ত যৌন পল্লীতেই আছে। সূচনা যখন সব কিছু মেনে নিয়ে স্বাভাবিক ভাবে বাড়িওয়ালীর কথা মতো কাজ করে তার কেনা টাকা পরিশোধ করে দেয় তখন থেকে সে মুক্তভাবে যৌনজীবন শুরু করতে থাকে। হঠাৎ একদিন এক খদ্দেরের সাথে ঘর বাধার স্বপ্ন দেখে এবং সেই লোকটির সাথে যৌনপল্লী থেকে বের হয়ে আবার ঢাকায় চলে যায়। ছয় মাস সংসার করার পর তার স্বামী হঠাৎ বুকে যন্ত্রণা নিয়ে মৃত্যু বরণ করলে সূচনা পুনরায় দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর রেজিমেন্টাল গলির ভাড়াটিয়া হিসাবে যৌনপল্লীতে চলে আসে এবং স্বামীকে ভুলতে বিভিন্ন নেশাদ্রব‍্য পান করতে থাকে। নেশা এবং স্বামীর বেদনায় সূচনা যখন দিশেহারা তখন তার জীবনে আছর উদ্দিন নামের এক বাবুর প্রবেশ হয়। আছর উদ্দিনের সাথে সূচনার প্রায় ছয়-সাত বছর সম্পর্ক থাকে আর এ দীর্ঘ বছর সম্পর্ক থাকাকালীন সময় যৌন ব‍্যাবসা করে যা রোজগার করতো সেইসব টাকা বাবুকে দিয়ে দিতো। আছর উদ্দিন তার সরলতার সুযোগ নিয়ে সূচনার সর্বস্ব নিয়ে একদিন গাঢাকা দেয়। অনেক খোঁজাখুঁজি করার পরেও সূচনা যখন দিশেহারা তখন তার একমাত্র অবলম্বন হয়ে পরে নেশাদ্রব‍্য। সূচনা যখন অনেক অসুস্থ তখন স্থানীয় একটি এনজিওর স্বাস্থ‍্যকর্মীর সাথে পরিচয় হয়। স্বাস্থ‍্যকর্মী সূচনার কথা শুনে কাউন্সিলর কাছে নিয়ে আসেন। তিন-চার মাস সূচনাকে কাউন্সিলিং এবং চিকিৎসকের চিকিৎসায় সূচনা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। সূচনা এখন আর নেশা-দ্রব‍্য ব‍্যবহার করেনা। একটু খোঁজ নিলেই মিলবে এরকম অনেক অসহায় যৌনকর্মীর গল্প। এরকম আর একজন রূপসীর গল্প- “রূপসী”-বরিশাল জেলার ঝালকাঠি উপজেলার নিভৃত অজোপাড়া গ্রামের একজন সামান্য দরিদ্র মুদি দোকাদারেরএকমাত্র মেয়ে। রূপসী পরিবারের একমাত্র মেয়ে হওয়ায় অনেক আদরের। বাবা গরীব মুদি দোকানদার হওয়া স্বত্বেও মেয়েকে ৫ম শ্রেণি পাশ করানোর পরে স্থানীয় একটি হাই স্কুলে ভর্তি করে দেয়। রূপসী একমাত্র মেয়ে হওয়াতে অতি আদর পাওয়ায় তেমন ভালো ছাত্রী ছিলেন না। রূপসীর টিভি দেখার প্রতি ঝোঁক ছিলো খুব বেশি আর একারণে রূপসী স্কুলের ছয়দিনের মধ্যে দুদিনের বেশি স্কুলে যেতেন না আর গেলেও দুএকটা ক্লাস করেই স্কুল থেকে পালিয়ে এসে পাশের বাড়ির গ্রাম‍্য হিসাবে এক মামার বাড়িতে টিভি দেখতে লেগে যেতেন। কোনো মতে টেনেটুনে রূপসী যখন ক্লাস এইটে পড়ালেখা শুরু করে তখন তার গ্রামের কথিত মামার মাথায় এক দুষ্টু বুদ্ধি ভর করে। রূপসী যখনি ওই মামার বাড়িতে টিভি দেখতে আসতেন তখন ওই মামা রূপসীকে বিভিন্ন রকমের খাবার কিনে খেতে দিতেন। রূপসীও খাবারের লোভে প্রায় প্রতিদিন ওই মামা বাড়িতে টিভি দেখতেন এবং মাঝে মধ্যে কথিত মামার মেয়ের সাথে রাতও কাটাতেন ওখানে। এদিকে রূপসী পরিবারের একমাত্র মেয়ে হওয়াতে মেয়েকে তেমন কিছু বলতেন না তার বাবা-মা। হঠাৎ একদিন রূপসীর কথিত মামা চকলেটের সাথে ঘুমের দ্রব‍্য মিশিয়ে রূপসীকে অজ্ঞান করে মাদারীপুর যৌনপল্লীতে এক বাড়িওয়ালীর কাছে বিক্রি করে দেয়। রূপসীর যখন জ্ঞান ফেরে তখন রূপসী দেখে সে অচেনা ঘরে একটা খাটে শুয়ে আছে। রূপসীর যখন ভালোভাবে জ্ঞান ফিরে তখন সে দেখতে পাই তার ঘরের দরজা বাইরে থেকে আটকানো। তখনও সে বুঝে উঠতে পারেনি সে কোথায়? রূপসীর তখনও ঘোর কাটেনি। যখন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যার আজানের শব্দ রূপসীর কানে আসে তখন রূপসী কান্নাকাটি করে ঘরের দরজা ধাক্কাতে থাকে। তখন বাইরে থেকে এক মহিলা এসে দরজা খুলে দিলে রূপসী বাইরে বের হতে যায় আর তখনি ওই মহিলা ধমক দিয়ে রূপসীকে বলে তোর মামা তোকে আমার কাছে চল্লিশ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছে আর তুই এখন বরিশালে নেই, তুই এখন মাদারীপুর যৌনপল্লীতে আছিস। আর এখানে যখন এসেই পরেছিস তখন আর এখান থেকে বের হতে পারবি না। আর আমি তোকে টাকা দিয়ে কিনেছি। আমার টাকা তুই দেহ ব‍্যাবসা করে শোধ করবি। রূপসী প্রথম প্রথম দেহ ব‍্যাবসা করতে রাজি না হওয়াতে ওকে খাবার দেয়া হতো না এবং প্রতিদিন ঘরে তালা বন্ধ করে রাখতো। এবং বাহির থেকে দরজা বন্ধ করে ভেতরে লোক পাঠিয়ে জোর করে দেহ ব‍্যাবসায় লিপ্ত করতে বাধ‍্য করা হয়। তখন কোনো উপায় না পেয়ে তিন চার বছর এভাবেই কেটে গেলো। তারপর যখন আমার কেনা টাকা আমি পরিশোধ করে দেয় এবং স্বেচ্ছায় যৌনকাজ করতে থাকি তখন থেকে আমাকে স্বাধীন জীবন-যাপন করতে দেয়া হয়। বাড়িতে যাওয়ার অনেক ভেবেছি কিন্তু লজ্জায় যেতে পারিনি। তারপর একদিন এক খদ্দেরের হাত ধরে দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে চলে আসি। ১৪ বছর হলো দৌলতদিয়া পল্লীতেই আছি। যখন বাড়ির কথা ও বাবা মায়ের কথা মনে পরে তখন খুব পরিমাণে নেশায় ডুবে থাকি।

এরকম হাজার খানেক সূচনা-রূপসীর বসবাস এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তর ও দেশের বৃহত্তম দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে।