রাজবাড়ী ১১:১৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ৪ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দারিদ্র্যতাকে হার মানিয়ে সাফল্য এনেছে হৃদয়। 

গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী)প্রতিনিধি। 

আদম্য ইচ্ছা শক্তির কাছে বাঁধা হয়ে দাড়াতে পারেনি দরিদ্রতা। ছিল না গাইড বই, পড়তে পারে নাই কোন শিক্ষকের কাছে। তারপর ও এবার এস এস সি পরীক্ষায় মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ ৫ পেয়েছে হৃদয়। সে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া মডেল হাইস্কুলের ছাত্র ছিল। 

হৃদয়ের বয়স যখন পাঁচ মাস, তখন তার মা-বাবার বিচ্ছেদ ঘটে। দিশাহারা হয়ে পড়ে তার মা বিলকিস বেগম। উপায় না পেয়ে একমাত্র সন্তানকে নিয়ে উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের মজিদ শেখেরপাড়া গ্রামে দিনমজুর বাবা আজাহার মণ্ডলের বাড়িতে আশ্রয় নেন বিলকিস। তখন থেকে নানার বাড়িতে ছোট্ট একটি ছাপড়া ঘরে মায়ের সঙ্গে বসবাস হৃদয়ের। 

হৃদয়ের মা বিলকিস বেগম দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকার এক খাবার হোটেলে রান্নার কাজ করতেন। হোটেল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন তিনি গোবরের জ্বালানি তৈরি করে বিক্রি করেন।

মায়ের অভাবের সংসারে একবেলা ভালো খাবার জোটেনি হৃদয়ের। প্রতিদিন সে দুই কিলোমিটার পথ হেঁটে স্কুলে যাতায়াত করত। এসএসসি পরীক্ষার দুই মাস আগে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকায় জাহাজ মেরামত কারখানায় কাজও করেছে মানবিক বিভাগের ছাত্র হৃদয়। টাকার অভাবে সে প্রাইভেট পড়তে পারেনি। কোনো বিষয়ের সহায়ক নোট-গাইড বইও সে কিনতে পারেনি। ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে শুধু মূল পাঠ্য বই পড়েছে হৃদয়। তারপর ও  এবছরের  এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়েছে।

হৃদয় এখন একটি ভালো কলেজে পড়তে চায় । কিন্তু কলেজে পড়তে যে টাকার প্রয়োজন তা হৃদয়ের মায়ের পক্ষে যোগাড় করা সম্ভব নয়। তার চোখে মুখে এখন শুধুই হতাশা লেখাপড়া আদৌ চালিয়ে যেতে পারবে কিনা। পড়ালেখার সুযোগ পেলে উচ্চশিক্ষা অর্জন করে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করতে চায় হৃদয়।

বিদ্যালয়ের প্রধান শহিদুল ইসলাম  বলেন, হৃদয় অত্যন্ত মেধাবী। সে অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করে এই ফলাফল করেছে।কিন্তু সামনে তার পড়াশোনা কীভাবে চলবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে এই দরিদ্র পরিবারটি । উচ্চশিক্ষার জন্য সহায়তা পেলে সে ভবিষ্যতেও ভালো ফল করবে।

Tag :

দারিদ্র্যতাকে হার মানিয়ে সাফল্য এনেছে হৃদয়। 

প্রকাশিত : ০৯:৪৮:৪৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২ ডিসেম্বর ২০২২

গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী)প্রতিনিধি। 

আদম্য ইচ্ছা শক্তির কাছে বাঁধা হয়ে দাড়াতে পারেনি দরিদ্রতা। ছিল না গাইড বই, পড়তে পারে নাই কোন শিক্ষকের কাছে। তারপর ও এবার এস এস সি পরীক্ষায় মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ ৫ পেয়েছে হৃদয়। সে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া মডেল হাইস্কুলের ছাত্র ছিল। 

হৃদয়ের বয়স যখন পাঁচ মাস, তখন তার মা-বাবার বিচ্ছেদ ঘটে। দিশাহারা হয়ে পড়ে তার মা বিলকিস বেগম। উপায় না পেয়ে একমাত্র সন্তানকে নিয়ে উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের মজিদ শেখেরপাড়া গ্রামে দিনমজুর বাবা আজাহার মণ্ডলের বাড়িতে আশ্রয় নেন বিলকিস। তখন থেকে নানার বাড়িতে ছোট্ট একটি ছাপড়া ঘরে মায়ের সঙ্গে বসবাস হৃদয়ের। 

হৃদয়ের মা বিলকিস বেগম দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকার এক খাবার হোটেলে রান্নার কাজ করতেন। হোটেল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন তিনি গোবরের জ্বালানি তৈরি করে বিক্রি করেন।

মায়ের অভাবের সংসারে একবেলা ভালো খাবার জোটেনি হৃদয়ের। প্রতিদিন সে দুই কিলোমিটার পথ হেঁটে স্কুলে যাতায়াত করত। এসএসসি পরীক্ষার দুই মাস আগে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকায় জাহাজ মেরামত কারখানায় কাজও করেছে মানবিক বিভাগের ছাত্র হৃদয়। টাকার অভাবে সে প্রাইভেট পড়তে পারেনি। কোনো বিষয়ের সহায়ক নোট-গাইড বইও সে কিনতে পারেনি। ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে শুধু মূল পাঠ্য বই পড়েছে হৃদয়। তারপর ও  এবছরের  এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়েছে।

হৃদয় এখন একটি ভালো কলেজে পড়তে চায় । কিন্তু কলেজে পড়তে যে টাকার প্রয়োজন তা হৃদয়ের মায়ের পক্ষে যোগাড় করা সম্ভব নয়। তার চোখে মুখে এখন শুধুই হতাশা লেখাপড়া আদৌ চালিয়ে যেতে পারবে কিনা। পড়ালেখার সুযোগ পেলে উচ্চশিক্ষা অর্জন করে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করতে চায় হৃদয়।

বিদ্যালয়ের প্রধান শহিদুল ইসলাম  বলেন, হৃদয় অত্যন্ত মেধাবী। সে অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করে এই ফলাফল করেছে।কিন্তু সামনে তার পড়াশোনা কীভাবে চলবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে এই দরিদ্র পরিবারটি । উচ্চশিক্ষার জন্য সহায়তা পেলে সে ভবিষ্যতেও ভালো ফল করবে।