রাজবাড়ী ০৪:১৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ৮ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনামঃ
রাজবাড়ীতে অগ্নিযুগের বিপ্লবী ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রামী,মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক,কমরেড আশু ভরদ্বাজের ৩২ তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত রাজবাড়ী বালিয়াকান্দিতে বজ্রপাতে এক কৃষকের মৃত্যু রাজবাড়ীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলা মামলায় আ. লীগের ১০ নেতা কারাগারে রাজবাড়ীতে বর্ণাঢ্য পহেলা বৈশাখ উদযাপিত। বৈশাখী মেলা ( মারিয়া শাইরি) বালিয়াকান্দিতে কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে পাট বীজ ও সার বিতরণ  রাজবাড়ীতে আ. লীগের ১৯ নেতাকর্মী কারাগারে নবাবপুর ইউনিয়ন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের উদ্যোগে জনসভা অনুষ্ঠিত রাজবাড়ীতে পেয়াজ চাষ ও চাষিদের নিয়ে মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত রাজবাড়ীতে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপন উপলক্ষ্যে সভা অনুষ্ঠিত।

আজ জাতীয় কবি,সাম‍্য, প্রেম, দ্রোহ, ও মানবতার কবি কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যু বার্ষিকী

মানবতার কবি,মুক্তি ও জাগরণের কবি, প্রেম ও দ্রোহের কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি যুগস্রষ্টা শতাব্দীর সমকালীন বিশ্বে ধর্ম বর্ণ জাতি ভেদ বৈষম্য শোষণ নিপীড়ন নির্যাতন নিষ্পেষণের বিরুদ্ধে, শোষিত বঞ্চিত মানুষের পক্ষে আজীবন যুদ্ধ করেছেন। তার সমগ্র স্বত্বা দিয়ে অনগ্রসর ঘুনে ধরা পশ্চাৎপদ নিঃস্ব মানুষের মুক্তির অগ্নিবীণা হাতে বিলিয়েছেন চেতনা।দারিদ্রতার কষাঘাতে জর্জরিত কবি শিশু বয়সে এতিম হয়েছেন। আমাদের জাতীয় কবিকে নানা প্রতিকূলতা ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠেছিলেন। কবির বেঁচে থাকার সংগ্রামী জীবনে রুটির দোকানের কাজ থেকে শুরু করে নানা সময়ে নানাবিধ,কাজ, লেটো গানের দলে,মসজিদ মাজারে খাদেম সৈনিকে চাকুরী,করেছেন পত্রিকা সম্পাদনা। তিনি ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী।একাধারে তিনি কবি, গল্পকার, উপন্যাসিক,শিল্পী, সুরকার, গীতিকার, নাট্যকার, অভিনয়শিল্পী সাংবাদিক সম্পাদক। শোষিত বঞ্চিত লাঞ্ছিত মানুষের মুক্তির জাগরণের কবি লিখেছেন।,
গাহিসাম‍্যের গান
মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই
নহে কিছু মহিয়ান।
ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠী যখন হিন্দু মুসলিম ধর্মবিদ্বেষের বিষবাস্প ছড়িয়ে শাসন শোষণে লিপ্ত ছিল ।তখন তাদের বিরুদ্ধে তিনি লিখেছেন,
অসাপ্রদায়িক সাম‍্যের কবি বললেন,হিন্দুনা ওরা মুসলিম জিজ্ঞাসে কোন জন!বলো মরিছে মানুষ সন্তান মোর মার।
কবি লিখলেন ‘এক বৃন্তে দুইটি কুসুম হিন্দু মুসলমান।
মুসলিম তার নয়ন মনি
হিন্দু তাহার প্রাণ।
কবি হিন্দু কন্যা প্রমিলাদেবীকে জীবনসঙ্গী করেছিলেন, মানুষ হিসেবে। কবি মানুষের জয় গান গেয়ে গেছেন সারাটি জীবন।বলেছেন “ মিথ্যা শুনিনি ভাই এই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোনও মন্দির-কাবা নাই ”হিন্দু মুসলিমের বিভেদ ঘোচাতে গালাগালির পরিবর্তে গলাগলি করাতে চেয়েছেন।তারই নিদর্শনে কবির প্রথম সন্তানের নাম রেখছিলেন ‘কৃষ্ণ মহম্মদ।এর মাঝেও কবিকে মুসলিম মৌলবী হিন্দু পুরোহিতদের নানা বিরোধীতা বাক‍্যবাণের শিকার হতে হয়েছে। আমার কৈফিয়ত কবিতায় কবি বললেন,মোল্লারা কন হাত নেরে,দেবদেবীর নাম মুখে আনে,সবে দাও পাজিটার জাত মেরে। হিন্দুরা ভাবে পার্শী -শব্দে কবিতা লেখে,ও পাত নেড়ে। নারী পুরুষের বৈষম্যের ক্ষেত্রে সাম‍্যের জন‍্য লিখেছেন ” বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর। অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর |
ধর্মের নামে মোল্লা পুরোহিতের শোষণ বঞ্চনা প্রতারণা বিরুদ্ধে তিনি লিখেছেন তব মস্‌জিদ মন্দিরে প্রভু নাই মানুষের দাবী।মোল্লা-পুর”ত লাগায়েছে তার সকল দুয়ারে চাবী!’কোথা চেঙ্গিস্‌, গজনী-মামুদ, কোথায় কালাপাহাড়?ভেঙে ফেল ঐ ভজনালয়ের যততালা-দেওয়া-দ্বার!খোদার ঘরে কে কপাট লাগায়, কে দেয় সেখানে তালা?সব দ্বার এর খোলা রবে, চালা হাতুড়ি শাবল চালা!
সংগীত জগতে কাজী নজরুল ইসলাম এক বিস্ময় ছিলেন।মাত্র ১০ বছরে তিনি সৃষ্টি করে গেছেন ১৮ টি রাগ ৪৯ টি মিশ্র রাগ এবং ২০০ প্রকার ফ্রিকোয়েন্সি। যা সংগীত ও সুর স্রষ্টা আলাউদ্দিন, রবি শংকর, মোজাক, বোস্টনের মত খ‍্যাতি মানেরা এতটা রাগ সৃষ্টিতে সক্ষম হননি। কবি কবিতা, গল্প,নাটক উপন্যাস,সহ প্রায় ৫০টি গ্রন্থ রচনা করে গেছেন এবং প্রায় চার হাজারের অধিক গান রচনা করে গেছেন।ব্রিটিশ উপনিবেশিকের বিরুদ্ধে ফকির সন্ন্যাস বিদ্রোহ কবিকে প্রভাবিত করেছিল।ধুমকেতু পত্রিকার সম্পাদনার মাধ্যমে চাটুকার,দাসত্ববাদী,গোলামির পরিবর্তে গনমুখী সাংবাদিকতার যাত্রা শুরু করেন কবি। যার মধ্য দিয়ে নির্যাতিত নিষ্পেষিত,বঞ্চিত,শোষিত,অপমানিত, অবহিত দুর্বল নিঃস্ব মৃতপ্রায় জাতিকে জাগরণের বাণীতে দীক্ষিত করেন । গান এবং কবিতা শুনিয়ে জাগিয়ে তুলেছেন মুক্তিকামী জাতিকে। মুক্তির অগ্নি মন্ত্রে দীক্ষিত করেছেন।বিদ্রোহী কন্ঠে যখন তার উচ্চারণ উচ্চারিত হয়েছে, আন্দোলিত হয়েছে জাতি। শাসকের মসনদ কেঁপেছে। আতঙ্কে ভুগেছে শাসকগোষ্ঠী। কবিকে করেছে করা বন্দী। কবির গ্রন্থ বাজেয়াপ্ত করেছে। সেখানেও কবি থেমে থাকেননি,কবি লিখেছেন
কারার ঐ লৌহকপাট,
ভেঙ্গে ফেল, কর রে লোপাট,
রক্ত-জমাট।
শিকল পূজার পাষাণ-বেদী।
ওরে ও তরুণ ঈশান!
বাজা তোর প্রলয় বিষাণ!
ধ্বংস নিশান উড়ুক প্রাচীর প্রাচীর ভেদি।
কবি জেলখানায় অনশন শুরু করলেন।চিত্তরঞ্জন শরৎচন্দ্র দেখা করলেন অনশন ভাঙতে অনুরোধ বললেন কবি অনশন ভাঙলেন না। সবাই উদ্বিগ্ন হয়ে পরলন। কবিগুরু নিজে একটি টেলিগ্রাম পাঠালেন অনশন ভাঙ্গার জন্য তারপর কবি গুরুর অনুরোধ উপেক্ষা করতে পারলেন না। অনশন ভাঙ্গলেন।কবি গুরু কাজী নজরুলের প্রতিভা ও সৃষ্টিশীল লেখা গুরুত্ব বুঝে থাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে ছিলেন জোড়াসাকোতে। কবি প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে কবির নামে বসন্ত নাটকটি উৎসর্গ করেছিলেন কবি গুরু।
১৯২২ সালে তাঁর সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘ধূমকেতু’ প্রকাশিত হয়। ধূমকেতুর জন্য নোবেল জয়ী কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আশীর্বাদ পাঠালেন-‘আয় চলে আয় রে ধূমকেতু/ আঁধারে বাঁধ অগ্নিসেতু/ দুর্দ্দিনের এই দুর্গশিরে/ উড়িয়ে দে তোর বিজয় কেতন!’
শোষক ও শাসিতের বিরুদ্ধে দেশ, কাল পাত্র, ধর্মবর্ণ, জাত পাতের ঊর্ধ্বে উঠে বিশ্ব মানবতার পক্ষে কবি গেয়েছেন মানুষের জায়গান। নির্ভীক কবি গেয়েছেন

পরোয়া করি না,
বাঁচি বা না-বাঁচি
যুগের হুজুগ কেটে গেলে,
মাথায় উপরে জ্বলিছেন রবি,
রয়েছে সোনার শত ছেলে।
প্রার্থনা ক’রো যারা কেড়ে খায় তেত্রিশ কোটি মুখের গ্রাস,
যেন লেখা হয় আমার রক্ত-লেখায় তাদের সর্বনাশ!

মহা-বিদ্রোহী রণ ক্লান্ত/আমি সেই দিন হব শান্ত,/যবে উত্‍পীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না/ –অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না/ –বিদ্রোহী রণ ক্লান্ত,আমি সেই দিন হব শান্ত।হ‍্যা তিনি শান্ত হয়েছেন দেহগত। কিন্তু চেতনাগত শান্তহননি কবি। কবিদের সৃষ্টি চেতনার মৃত্যু নেই। কবির চেতনা, ছড়িয়ে আছে ছড়িয়ে যাবে, যুগে যুগে দেশে দশে।মুক্তিকামি মানুষের মাঝে। ১৯৭৬ সালে ২৭ আগষ্ট এই দিনে ঢাকার পিজি হসপিটাল চিরনিদ্রায় ঘুমিয়ে গেলেন এই বিদ্রোহীর রণ ক্লান্ত আমাদের জাতীয় কবি বিশ্ব মানবতার কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর ইচ্ছা ‘মসজিদেরই এই পাশে আমার কবর দিও ভাই/ যেন ঘরে থেকেও মোয়াজ্জিনের আযান শুনতে পাই/ কবির সেই ইচ্ছা অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পাশে কবি কে সমাহিত করা হয়। প্রেম অনুরাগে তিনি গেয়েছেন আমি চিরতরে দূরে চলে যাব তবু আমাকে দেব না ভুলিতে। হা তোমাকে ভোলা যায় না।তুমি বেঁচে থাকবে শোষিত বঞ্চিত নিগৃহীত নিষ্পেষিত মানুষের মাঝে চিরকাল।তুমি উৎপীড়কের আতঙ্ক।তুমি শোষিতের বন্ধু প্রেরণা মুক্তি। দেশ কাল পাত্র জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে বিশ্বমানবতার মুক্তির প্রেরনা পরাধীনতার শিকল ভাঙার গানের কবি, আজ দেশে দেশে বিশ্বে শোষণ নিপীড়নের বিরুদ্ধে তাঁর চেতনা আদর্শ প্রেরনা বড়ই প্রাসঙ্গিক।দরকার কবির চেতনা চর্চায় জাতিকে উদ্বুদ্ধ করা।কবির স্বপ্ন, চেতনা ছড়িয়ে দিতে হবে। সারাবিশ্বের শোষিত বঞ্চিত মানুষের মুক্তির জন্য। মানুষ হিসেবে আমাদের নিতে হবে সেই অঙ্গীকার।মানুষ ও মানতবার চেতনার বাতিঘর, প্রেমের কবি সাম্যের কবি তোমাকে কে জানাই গভীর শ্রদ্ধা।

মোঃ আতাউর রহমান

কবি লেখক ও কলামিষ্ট।

Tag :
About Author Information

রাজবাড়ীতে অগ্নিযুগের বিপ্লবী ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রামী,মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক,কমরেড আশু ভরদ্বাজের ৩২ তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত

আজ জাতীয় কবি,সাম‍্য, প্রেম, দ্রোহ, ও মানবতার কবি কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যু বার্ষিকী

প্রকাশিত : ০৬:০০:১২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৩

মানবতার কবি,মুক্তি ও জাগরণের কবি, প্রেম ও দ্রোহের কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি যুগস্রষ্টা শতাব্দীর সমকালীন বিশ্বে ধর্ম বর্ণ জাতি ভেদ বৈষম্য শোষণ নিপীড়ন নির্যাতন নিষ্পেষণের বিরুদ্ধে, শোষিত বঞ্চিত মানুষের পক্ষে আজীবন যুদ্ধ করেছেন। তার সমগ্র স্বত্বা দিয়ে অনগ্রসর ঘুনে ধরা পশ্চাৎপদ নিঃস্ব মানুষের মুক্তির অগ্নিবীণা হাতে বিলিয়েছেন চেতনা।দারিদ্রতার কষাঘাতে জর্জরিত কবি শিশু বয়সে এতিম হয়েছেন। আমাদের জাতীয় কবিকে নানা প্রতিকূলতা ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠেছিলেন। কবির বেঁচে থাকার সংগ্রামী জীবনে রুটির দোকানের কাজ থেকে শুরু করে নানা সময়ে নানাবিধ,কাজ, লেটো গানের দলে,মসজিদ মাজারে খাদেম সৈনিকে চাকুরী,করেছেন পত্রিকা সম্পাদনা। তিনি ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী।একাধারে তিনি কবি, গল্পকার, উপন্যাসিক,শিল্পী, সুরকার, গীতিকার, নাট্যকার, অভিনয়শিল্পী সাংবাদিক সম্পাদক। শোষিত বঞ্চিত লাঞ্ছিত মানুষের মুক্তির জাগরণের কবি লিখেছেন।,
গাহিসাম‍্যের গান
মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই
নহে কিছু মহিয়ান।
ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠী যখন হিন্দু মুসলিম ধর্মবিদ্বেষের বিষবাস্প ছড়িয়ে শাসন শোষণে লিপ্ত ছিল ।তখন তাদের বিরুদ্ধে তিনি লিখেছেন,
অসাপ্রদায়িক সাম‍্যের কবি বললেন,হিন্দুনা ওরা মুসলিম জিজ্ঞাসে কোন জন!বলো মরিছে মানুষ সন্তান মোর মার।
কবি লিখলেন ‘এক বৃন্তে দুইটি কুসুম হিন্দু মুসলমান।
মুসলিম তার নয়ন মনি
হিন্দু তাহার প্রাণ।
কবি হিন্দু কন্যা প্রমিলাদেবীকে জীবনসঙ্গী করেছিলেন, মানুষ হিসেবে। কবি মানুষের জয় গান গেয়ে গেছেন সারাটি জীবন।বলেছেন “ মিথ্যা শুনিনি ভাই এই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোনও মন্দির-কাবা নাই ”হিন্দু মুসলিমের বিভেদ ঘোচাতে গালাগালির পরিবর্তে গলাগলি করাতে চেয়েছেন।তারই নিদর্শনে কবির প্রথম সন্তানের নাম রেখছিলেন ‘কৃষ্ণ মহম্মদ।এর মাঝেও কবিকে মুসলিম মৌলবী হিন্দু পুরোহিতদের নানা বিরোধীতা বাক‍্যবাণের শিকার হতে হয়েছে। আমার কৈফিয়ত কবিতায় কবি বললেন,মোল্লারা কন হাত নেরে,দেবদেবীর নাম মুখে আনে,সবে দাও পাজিটার জাত মেরে। হিন্দুরা ভাবে পার্শী -শব্দে কবিতা লেখে,ও পাত নেড়ে। নারী পুরুষের বৈষম্যের ক্ষেত্রে সাম‍্যের জন‍্য লিখেছেন ” বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর। অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর |
ধর্মের নামে মোল্লা পুরোহিতের শোষণ বঞ্চনা প্রতারণা বিরুদ্ধে তিনি লিখেছেন তব মস্‌জিদ মন্দিরে প্রভু নাই মানুষের দাবী।মোল্লা-পুর”ত লাগায়েছে তার সকল দুয়ারে চাবী!’কোথা চেঙ্গিস্‌, গজনী-মামুদ, কোথায় কালাপাহাড়?ভেঙে ফেল ঐ ভজনালয়ের যততালা-দেওয়া-দ্বার!খোদার ঘরে কে কপাট লাগায়, কে দেয় সেখানে তালা?সব দ্বার এর খোলা রবে, চালা হাতুড়ি শাবল চালা!
সংগীত জগতে কাজী নজরুল ইসলাম এক বিস্ময় ছিলেন।মাত্র ১০ বছরে তিনি সৃষ্টি করে গেছেন ১৮ টি রাগ ৪৯ টি মিশ্র রাগ এবং ২০০ প্রকার ফ্রিকোয়েন্সি। যা সংগীত ও সুর স্রষ্টা আলাউদ্দিন, রবি শংকর, মোজাক, বোস্টনের মত খ‍্যাতি মানেরা এতটা রাগ সৃষ্টিতে সক্ষম হননি। কবি কবিতা, গল্প,নাটক উপন্যাস,সহ প্রায় ৫০টি গ্রন্থ রচনা করে গেছেন এবং প্রায় চার হাজারের অধিক গান রচনা করে গেছেন।ব্রিটিশ উপনিবেশিকের বিরুদ্ধে ফকির সন্ন্যাস বিদ্রোহ কবিকে প্রভাবিত করেছিল।ধুমকেতু পত্রিকার সম্পাদনার মাধ্যমে চাটুকার,দাসত্ববাদী,গোলামির পরিবর্তে গনমুখী সাংবাদিকতার যাত্রা শুরু করেন কবি। যার মধ্য দিয়ে নির্যাতিত নিষ্পেষিত,বঞ্চিত,শোষিত,অপমানিত, অবহিত দুর্বল নিঃস্ব মৃতপ্রায় জাতিকে জাগরণের বাণীতে দীক্ষিত করেন । গান এবং কবিতা শুনিয়ে জাগিয়ে তুলেছেন মুক্তিকামী জাতিকে। মুক্তির অগ্নি মন্ত্রে দীক্ষিত করেছেন।বিদ্রোহী কন্ঠে যখন তার উচ্চারণ উচ্চারিত হয়েছে, আন্দোলিত হয়েছে জাতি। শাসকের মসনদ কেঁপেছে। আতঙ্কে ভুগেছে শাসকগোষ্ঠী। কবিকে করেছে করা বন্দী। কবির গ্রন্থ বাজেয়াপ্ত করেছে। সেখানেও কবি থেমে থাকেননি,কবি লিখেছেন
কারার ঐ লৌহকপাট,
ভেঙ্গে ফেল, কর রে লোপাট,
রক্ত-জমাট।
শিকল পূজার পাষাণ-বেদী।
ওরে ও তরুণ ঈশান!
বাজা তোর প্রলয় বিষাণ!
ধ্বংস নিশান উড়ুক প্রাচীর প্রাচীর ভেদি।
কবি জেলখানায় অনশন শুরু করলেন।চিত্তরঞ্জন শরৎচন্দ্র দেখা করলেন অনশন ভাঙতে অনুরোধ বললেন কবি অনশন ভাঙলেন না। সবাই উদ্বিগ্ন হয়ে পরলন। কবিগুরু নিজে একটি টেলিগ্রাম পাঠালেন অনশন ভাঙ্গার জন্য তারপর কবি গুরুর অনুরোধ উপেক্ষা করতে পারলেন না। অনশন ভাঙ্গলেন।কবি গুরু কাজী নজরুলের প্রতিভা ও সৃষ্টিশীল লেখা গুরুত্ব বুঝে থাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে ছিলেন জোড়াসাকোতে। কবি প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে কবির নামে বসন্ত নাটকটি উৎসর্গ করেছিলেন কবি গুরু।
১৯২২ সালে তাঁর সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘ধূমকেতু’ প্রকাশিত হয়। ধূমকেতুর জন্য নোবেল জয়ী কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আশীর্বাদ পাঠালেন-‘আয় চলে আয় রে ধূমকেতু/ আঁধারে বাঁধ অগ্নিসেতু/ দুর্দ্দিনের এই দুর্গশিরে/ উড়িয়ে দে তোর বিজয় কেতন!’
শোষক ও শাসিতের বিরুদ্ধে দেশ, কাল পাত্র, ধর্মবর্ণ, জাত পাতের ঊর্ধ্বে উঠে বিশ্ব মানবতার পক্ষে কবি গেয়েছেন মানুষের জায়গান। নির্ভীক কবি গেয়েছেন

পরোয়া করি না,
বাঁচি বা না-বাঁচি
যুগের হুজুগ কেটে গেলে,
মাথায় উপরে জ্বলিছেন রবি,
রয়েছে সোনার শত ছেলে।
প্রার্থনা ক’রো যারা কেড়ে খায় তেত্রিশ কোটি মুখের গ্রাস,
যেন লেখা হয় আমার রক্ত-লেখায় তাদের সর্বনাশ!

মহা-বিদ্রোহী রণ ক্লান্ত/আমি সেই দিন হব শান্ত,/যবে উত্‍পীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না/ –অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না/ –বিদ্রোহী রণ ক্লান্ত,আমি সেই দিন হব শান্ত।হ‍্যা তিনি শান্ত হয়েছেন দেহগত। কিন্তু চেতনাগত শান্তহননি কবি। কবিদের সৃষ্টি চেতনার মৃত্যু নেই। কবির চেতনা, ছড়িয়ে আছে ছড়িয়ে যাবে, যুগে যুগে দেশে দশে।মুক্তিকামি মানুষের মাঝে। ১৯৭৬ সালে ২৭ আগষ্ট এই দিনে ঢাকার পিজি হসপিটাল চিরনিদ্রায় ঘুমিয়ে গেলেন এই বিদ্রোহীর রণ ক্লান্ত আমাদের জাতীয় কবি বিশ্ব মানবতার কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর ইচ্ছা ‘মসজিদেরই এই পাশে আমার কবর দিও ভাই/ যেন ঘরে থেকেও মোয়াজ্জিনের আযান শুনতে পাই/ কবির সেই ইচ্ছা অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পাশে কবি কে সমাহিত করা হয়। প্রেম অনুরাগে তিনি গেয়েছেন আমি চিরতরে দূরে চলে যাব তবু আমাকে দেব না ভুলিতে। হা তোমাকে ভোলা যায় না।তুমি বেঁচে থাকবে শোষিত বঞ্চিত নিগৃহীত নিষ্পেষিত মানুষের মাঝে চিরকাল।তুমি উৎপীড়কের আতঙ্ক।তুমি শোষিতের বন্ধু প্রেরণা মুক্তি। দেশ কাল পাত্র জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে বিশ্বমানবতার মুক্তির প্রেরনা পরাধীনতার শিকল ভাঙার গানের কবি, আজ দেশে দেশে বিশ্বে শোষণ নিপীড়নের বিরুদ্ধে তাঁর চেতনা আদর্শ প্রেরনা বড়ই প্রাসঙ্গিক।দরকার কবির চেতনা চর্চায় জাতিকে উদ্বুদ্ধ করা।কবির স্বপ্ন, চেতনা ছড়িয়ে দিতে হবে। সারাবিশ্বের শোষিত বঞ্চিত মানুষের মুক্তির জন্য। মানুষ হিসেবে আমাদের নিতে হবে সেই অঙ্গীকার।মানুষ ও মানতবার চেতনার বাতিঘর, প্রেমের কবি সাম্যের কবি তোমাকে কে জানাই গভীর শ্রদ্ধা।

মোঃ আতাউর রহমান

কবি লেখক ও কলামিষ্ট।