রাজবাড়ী ০৯:৫২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ৪ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাজবাড়ীতে সূর্যমুখী চাষে লাভবান কৃষক

নিজস্ব প্রতিবেদক :

রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের কৃষকেরা সূর্যমুখী চাষ করে লাভের মুখ দেখেছেন।

এ উপজেলার পদমদী গ্রামের শিক্ষক দম্পতি স্বপন সোম ও রিক্তা সোম, কঠুরাকান্দি গ্রামের কৃষক সিরাজুল ইসলামসহ ১০০ জন তাদের জমিতে সূর্যমুখী আবাদ করে লাভবান হয়েছেন। তাদের সাফ‌ল্য দেখে এলাকার অন্যান্যও কৃষকরাও সূর্যমুখী চাষে ঝুঁকছেন। সূর্যমূখী ফুলের চাষ নিয়ে আশাবাদী কৃষি কর্মকর্তারাও।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ছয় থেকে সাত ফুট লম্বা সুর্যমুখী গাছে ফুল ফুটে আছে। ফুলের সৌন্দর্য ছড়িয়ে পড়েছে চারপাশে। সুর্যমুখী ফুল দেখতে প্রতিদিনই আসছে বিভিন্ন বয়সী মানুষ।

কৃষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ষাট শতাংশ জমিতে গত বছর রসুন চাষ করে লোকসান গুণতে হয়েছে। তাই তিনি এ বছর কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন। সূর্যমুখী চাষে খুব বেশি পরিশ্রম হয় না। শুধু বীজ বপণে একটু শ্রম দিতে হয়। এরপর দেখভাল করলেই চলে। ষাট শতাংশ জমিতে এখন পর্যন্ত তার পাঁচ হাজার টাকার মত খরচ হয়েছে। সূর্যমুখী চাষে লাভবান হবেন বলে আশা এ কৃষকের।

স্বপন সোম বলেন, শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি নিজের জমিতে কৃষিকাজও করেন। তার বাড়ির কাছে এক একর জমিতে বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ করেন। কিন্তু ওইসব ফসল থেকে তিনি লাভের মুখ দেখেন নি। পরে কৃষি অফিসের পরামর্শে তিনি ওই জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ শুরু করেন। কৃষি অফিস থেকেই তাকে বীজ দেওয়া হয়েছিল। চাষাবাদে তার সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে মাত্র ১২ হাজার টাকা। সূর্যমূখীর ফলন খুবই ভালো হয়েছে।

রিক্তা সোম জানান, শিক্ষকতার পাশাপাশি তার স্বামীকে দেখে তিনিও কৃষিকাজে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। তাকে যতটা পারেন সহযোগিতা করেন। সূর্যমুখী ফুল দেখে তার খুবই ভাল লাগছে। মনে এক ধরনের প্রশান্তিও অনুভব করছেন। ফুলের সৌন্দর্য দেখতে প্রতিদিনই মানুষ আসছে। সার্বিকভাবে সূর্যমূখী ও যে ফলন হয়েছে তাতে তিনি খুশি।

তিনি বলেন, সূর্যমূখীর তেল রান্না করে খাওয়ার পাশাপাশি গাছগুলো জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। এখন থেকে প্রতি বছর সূর্যমূখী ফুলের চাষ করব।

বালিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, বাংলাদেশে ভোজ্য তেল হিসেবে হিসেবে সাধারণত সয়াবিন ব্যবহার হয়ে থাকে। সয়াবিনের নির্ভরতা কমাতে সূর্যমুখী চাষের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সূর্যমুখী চাষ করে কৃষকরা উন্নতমানের তেল পাবে।

বর্তমানে যে জাতের সূর্যমুখী চাষ হচ্ছে তা আগের চেয়ে অনেক ভাল। আগে যে সূর্যমুখী চাষ হতো তা সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকায় টিয়া পাখির খেতে সুবিধা হতো। ফলে নষ্ট হতো। এবার যে জাতের সূর্যমুখীর আবাদ হয়েছে তা নিচের দিকে থাকে। ফলে পাখি নষ্ট করতে পারে না। সূর্যমুখী বীজ তিন হাজার টাকা মণ। এক একর জমিতে চাষ করলে ২২ মণ ফল পাওয়া যায়। তা থেকে তিনশ কেজির বেশি তেল উৎপাদন হয়। 

তিনি বলেন, চলতি বছর বালিয়াকান্দি উপজেলায় ৩৩ একর জমিতে একশ জন কৃষক সূর্যমুখী ফুলের চাষ করছে। একশ জন কৃষককেই বিনামূল্যে সূর্যমুখী ফুলের বীজ বিতরণ করা হয়েছে। প্রতি বছরই সূর্যমুখীর চাষ বাড়ছে।

Tag :

রাজবাড়ীতে সূর্যমুখী চাষে লাভবান কৃষক

প্রকাশিত : ১১:৩৩:১৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ মার্চ ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক :

রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের কৃষকেরা সূর্যমুখী চাষ করে লাভের মুখ দেখেছেন।

এ উপজেলার পদমদী গ্রামের শিক্ষক দম্পতি স্বপন সোম ও রিক্তা সোম, কঠুরাকান্দি গ্রামের কৃষক সিরাজুল ইসলামসহ ১০০ জন তাদের জমিতে সূর্যমুখী আবাদ করে লাভবান হয়েছেন। তাদের সাফ‌ল্য দেখে এলাকার অন্যান্যও কৃষকরাও সূর্যমুখী চাষে ঝুঁকছেন। সূর্যমূখী ফুলের চাষ নিয়ে আশাবাদী কৃষি কর্মকর্তারাও।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ছয় থেকে সাত ফুট লম্বা সুর্যমুখী গাছে ফুল ফুটে আছে। ফুলের সৌন্দর্য ছড়িয়ে পড়েছে চারপাশে। সুর্যমুখী ফুল দেখতে প্রতিদিনই আসছে বিভিন্ন বয়সী মানুষ।

কৃষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ষাট শতাংশ জমিতে গত বছর রসুন চাষ করে লোকসান গুণতে হয়েছে। তাই তিনি এ বছর কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন। সূর্যমুখী চাষে খুব বেশি পরিশ্রম হয় না। শুধু বীজ বপণে একটু শ্রম দিতে হয়। এরপর দেখভাল করলেই চলে। ষাট শতাংশ জমিতে এখন পর্যন্ত তার পাঁচ হাজার টাকার মত খরচ হয়েছে। সূর্যমুখী চাষে লাভবান হবেন বলে আশা এ কৃষকের।

স্বপন সোম বলেন, শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি নিজের জমিতে কৃষিকাজও করেন। তার বাড়ির কাছে এক একর জমিতে বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ করেন। কিন্তু ওইসব ফসল থেকে তিনি লাভের মুখ দেখেন নি। পরে কৃষি অফিসের পরামর্শে তিনি ওই জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ শুরু করেন। কৃষি অফিস থেকেই তাকে বীজ দেওয়া হয়েছিল। চাষাবাদে তার সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে মাত্র ১২ হাজার টাকা। সূর্যমূখীর ফলন খুবই ভালো হয়েছে।

রিক্তা সোম জানান, শিক্ষকতার পাশাপাশি তার স্বামীকে দেখে তিনিও কৃষিকাজে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। তাকে যতটা পারেন সহযোগিতা করেন। সূর্যমুখী ফুল দেখে তার খুবই ভাল লাগছে। মনে এক ধরনের প্রশান্তিও অনুভব করছেন। ফুলের সৌন্দর্য দেখতে প্রতিদিনই মানুষ আসছে। সার্বিকভাবে সূর্যমূখী ও যে ফলন হয়েছে তাতে তিনি খুশি।

তিনি বলেন, সূর্যমূখীর তেল রান্না করে খাওয়ার পাশাপাশি গাছগুলো জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। এখন থেকে প্রতি বছর সূর্যমূখী ফুলের চাষ করব।

বালিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, বাংলাদেশে ভোজ্য তেল হিসেবে হিসেবে সাধারণত সয়াবিন ব্যবহার হয়ে থাকে। সয়াবিনের নির্ভরতা কমাতে সূর্যমুখী চাষের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সূর্যমুখী চাষ করে কৃষকরা উন্নতমানের তেল পাবে।

বর্তমানে যে জাতের সূর্যমুখী চাষ হচ্ছে তা আগের চেয়ে অনেক ভাল। আগে যে সূর্যমুখী চাষ হতো তা সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকায় টিয়া পাখির খেতে সুবিধা হতো। ফলে নষ্ট হতো। এবার যে জাতের সূর্যমুখীর আবাদ হয়েছে তা নিচের দিকে থাকে। ফলে পাখি নষ্ট করতে পারে না। সূর্যমুখী বীজ তিন হাজার টাকা মণ। এক একর জমিতে চাষ করলে ২২ মণ ফল পাওয়া যায়। তা থেকে তিনশ কেজির বেশি তেল উৎপাদন হয়। 

তিনি বলেন, চলতি বছর বালিয়াকান্দি উপজেলায় ৩৩ একর জমিতে একশ জন কৃষক সূর্যমুখী ফুলের চাষ করছে। একশ জন কৃষককেই বিনামূল্যে সূর্যমুখী ফুলের বীজ বিতরণ করা হয়েছে। প্রতি বছরই সূর্যমুখীর চাষ বাড়ছে।