
নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজবাড়ীর প্রকৃতিতে বইছে শীতের আগমনী বার্তা। ভোরে শিশির ভেজা ঘাস আর হালকা কুয়াশার প্রস্তুত হচ্ছে প্রকৃতি। শিশির ভেজা শিউলি ফুলের মাটির বিছানার শীতের আগমন জানান দেয়। কিছুদিন পর দিগন্ত জোড়া মাঠে দোলা দিবে সরিষার ফুল। এমন প্রকৃতিতে খেজুরের রস সংগ্রহের প্রস্তুতি নিচ্ছেন গাছিরা। বাঙ্গালীর অনেক প্রাত্যহিক উৎসব শুরু হয় খেজুর গুড়-পাটালির পিঠা-পুলি দিয়ে।
রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি অঞ্চলের গুড় আর পাটালির সুখ্যাতি রয়েছে এই অঞ্চল জুড়ে। এসব অঞ্চলের এক সময় স্থানীয় গাছিরা খেজুরের রস সংগ্রহ করে গুড় আর পাটালি তৈরি করতো। স্থানীয়রা এখন কৃষি ও ব্যবসার দিকে চলে যাওয়ার কারণে বেশ কয়েক বছর খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতে দেখা যায়নি। কয়েক বছর রাজশাহীর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে গাছিরা এসে রাজবাড়ীর বিভিন্ন অঞ্চলের গাছ পরিচর্যা করে রস সংগ্রহ করে। রস থেকে তৈরি হয় গুড় ও পাটালি। যার স্বাদ ও ঘ্রাণ মানুষকে মুগ্ধ করে।
আজ বুধবার রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায়, রাস্তার দুই পাশসহ আশেপাশের অঞ্চলের খেজুর গাছ পরিস্কার করছেন গাছিরা। খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের জন্য এখন গাছের আগাছা বিশেষ পদ্ধতিতে পরিস্কার করছে। সপ্তাহখানেকের মধ্যেই রস সংগ্রহ শুরু হবে বলে জানায় গাছিরা।
রাজশাহী জেলার বাঘা উপজেলার বহেলার গ্রামের গাছি খোদাবক্স রহমান বলেন, আমরা বালিয়াকান্দি উপজেলায় ৬টি গ্রুপ এই অঞ্চলের রস সংগ্রহ করি। আমরা শতকরা হিসাবে মালিকদের কাছ থেকে গাছ ক্রয় করি। প্রতিবছর একটি নিদিষ্ট দামে গাছ ক্রয় করি। আমারা গত ৪ বছর ধরে এই অঞ্চলের খেজুর গাছের রস সংগ্রহ করছি। রস দিয়ে গুড়-পাটালি তৈরি করি। আমাদের গুড়-পাটালির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আগামী ১০দিন পর গুড়-পাটালি তৈরি শুরু হবে।
বালিয়াকান্দি উপজেলার বহরপুর ইউনিয়নে সুলতানা রহমান বলেন, অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে কোমরে রশি (দড়ি) বেঁধে গাছে ঝুলে রস সংগ্রহের কাজ করেন এই গাছিরা। প্রতিদিন বিকালে ছোট-বড় কলসি নিয়ে গাছে বাঁধা হয়। সকালে রস সংগ্রহ করা হয়। অর্থনীতি ও জীবিকার পাশাপাশি এমন দৃশ্য শীতের আগমনী বার্তা বহন করে।
স্থানীয় বাসিন্দা কাঞ্চন কুমার বিশ্বাস বলেন, আমাদের বালিয়াকান্দি কৃষিপ্রধান উপজেলা। উপজেলার মানুষ এখন আর সেভাবে গুড়-পাটালি তৈরি করেন না। আমাদের এলাকায় বেশ খেজুর গাছ রয়েছে। এসব গাছ তারা এই সময়ের জন্য চুক্তি করে নেয়। সেখান থেকে রস সংগ্রহ করে গুড়-পাটালি তৈরি করে। তারা ব্যাপক লাভবান হচ্ছেন। ইতিমধ্যে বালিয়াকান্দি গুড় আর পাটালির সুনাম ছড়িয়ে যাচ্ছে।
জেলা কৃষি কর্মকর্তা এম এম সহিদ নূর আকবর বলেন, রাজবাড়ী কৃষি প্রধান জেলা। জেলায় রাস্তার পাশ দিয়ে, বাড়ীর পাশে অনেক খেজুর গাছ রয়েছে। সেগুলো থেকে রস সংগ্রহ করে গুড়-পাটালি তৈরি হচ্ছে। আগামীর কৃষি অর্থনীতির জন্য সকল সম্পদের ব্যবহারের অনুরোধ করেন কৃষি কর্মকর্তা।