
কোরবানি ঈদ আসলেই বেজে ওঠে কামারের দোকানে ঠাকুর ঠুকুর আওয়াজ
রাজু আহমেদ, রাজবাড়ী
মুসলমানদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান গুলোর মধ্যে সর্ববৃহৎ হলো ঈদ-উল-আযহা। সবচেয়ে বড় আয়োজনে ও ভাবগম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে ঈদ-উল-আযহা পালন করা হয়। এবছরের ঈদ-উল-আযহা আর মাত্র কয়েকদিন বাকি।
আগত ঈদ-উল-আযহার আনন্দ যেন সবার ঘরের দরজায় কড়া নাড়ছে। আর এই ঈদকে সামনে রেখে কোরবানীর পশু জবাইয়ের অন্যতম উপকরণ চাকু, দা, ছুরি, বটি, চাপাতিসহ লোহার বিভিন্ন সামগ্রী চাহিদা বেড়েছে। এসব তৈরীতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন পেশাদার কামার সম্প্রদায়। তারা যেন দম ফেলার ফুরসত পাচ্ছেন না।
জানা গেছে, ধান কাটার মৌসুমে কাঁচি এবং কোরবানী ঈদে চাকু, ছুরি, চাপাতি, বটির বেশি দরকার পড়ে। তখন এসব তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন সব এলাকার কামার সম্প্রদায়। কামার পাড়ার দিন-রাত টুং টাং শব্দে মুখরিত থাকে আশপাশের এলাকা। এবছরও এর ব্যতিক্রম হচ্ছেনা।তবে এ বছর গত বছরের তুলনায় বেচা-বিক্রি কম বলে জানান রাজবাড়ীর কামার সম্প্রদায়ের লোকজন।
মেশিনের তৈরি লোহার যন্ত্রপাতি দেখতে সুন্দর ও অধিক ধারালো হয়, এমনকি দাম ও সময় অপেক্ষাকৃত কম লাগে। তাই কামারদের তৈরি জিনিসের চেয়ে মেশিনের তৈরি চাকু, দা, ছুরি, বটি, চাপাতিসহ বিভিন্ন সামগ্রীর কদর ক্রমেই বাড়ছে। বাপ-দাদার ঐতিহ্য ধরে রাখতেই মূলত কিছু কামার এখনো এ পেশায় জড়িয়ে আছেন বলে অনেক কামাররা জানান। তারা বলেন, পরিশ্রমের তুলনায় এই পেশায় সাধারনত আয় ও সম্মান উভয়ই কম। তাই আমাদের অনেকেই এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় জড়িয়ে পড়েছেন।
লোহার কর্মকার বিধান জানান, এক সময় তাদের বেশ কদর ছিল, বর্তমানে তা আর নেই। এখন হাতে তৈরী জিনিসের কদর কমে গেছে। তাই সারাবছর তেমন কোন কাজ থাকেনা। তবে ধান কাটার মৌসুম ও কোরবানি উপলক্ষে তাদের কাজের চাহিদা বেড়ে যায়। এসময় তাদের দৈনিক এক হাজার টাকা থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত আয় হলেও, ব্যয় বাদে তাদের হাতে থাকে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা।
সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে,রাজবাড়ী সদর, গোয়ালন্দ বাজার,কালুখালি বাজার, বালিয়াকান্দি বাজার ও পাংশা বাজার সহ বিভিন্ন হাটবাজারে বেশ কিছু কামারের দোকান আছে। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে পেশাদার এসব কামাররা লোহা কিনে সেগুলোকে আগুনে পুড়ে দা, বটি, চাকু, চাপাতিসহ লোহার বিভিন্ন সরঞ্জাম তৈরি করছেন। তৈরিকৃত জিনিসপত্র দিয়ে নিজ নিজ দোকান সাজিয়ে রেখেছেন। প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক ক্রেতা তাদের চাহিদা মোতাবেক কামারের দোকান থেকে জিনিস কিনছেন।
কামাররা এসব নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র মৌসুমি চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকারীও বিক্রি করেন বলে জানা গেছে। অনেক ক্রেতা জানান, গত বছরের তুলনায় এবার লোহার দাম অনেক বেশি হওয়ায় লোহার তৈরি জিনিসের দামও বেড়েছে। দা ২৫০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা, ছুরি ছোট ১৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা, বটি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা, চাপাতি ১,০০০ টাকা থেকে একহাজার ৫০০ টাকা করে বেচা-কেনা হচ্ছে। কামররা বলছেন, লোহার দাম ও শ্রমিক মজুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় যন্ত্রপাতির দাম একটু বেড়েছে