
রাজু আহমেদ, রাজবাড়ী :
মাটি হলো পরিবেশের অন্যতম মূল অংশ ও জীবনের ভিত্তি। আমাদের দেশের উন্নয়নের খড়্গ এই মৃত্তিকা বা মাটির ওপরেই নির্ভর করছে। এই কৃষি জমির মাটিই জীবিত ও উর্বর, যাকে বাঁচালে পরিবেশ ও দেশ বাঁচবে। পরিবেশ বাঁচলে রক্ষা পাবে জীব ও উদ্ভিদজগৎ। আবাদি জমির মাটি ফসলকে পুষ্টি সরবরাহ করে, পানিকে ফিল্টার করে, বন্যা থেকে রক্ষা করে এবং খরার বিরুদ্ধে লড়াই করে। বিলিয়ন জীবের বাসস্থান হিসেবে কাজ করে। আমাদের অ্যান্টিবায়োটিক সরবরাহ করে। মাটি কার্বন সিঙ্ক হিসেবে কাজ করে জলবায়ু পরিবর্তনকে প্রশমিত করে। অন্যদিকে মাটিতে অতিরিক্ত প্লাস্টিক, কীটনাশক, রাসায়নিক সার ও ভারী ধাতুর উপস্থিতির কারণেও মাটি তার কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। ফলে ফসল উৎপাদন ও পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা রাখতে পারে না। তাই ২০২৩ সালে বিশ্ব পরিবেশ দিবসের নেপথ্যে রয়েছে প্লাস্টিক দূষণের সমাধান নিয়ে আরজি।
বর্তমানে দেশে ইটভাটা, শিল্পায়ন, নগর উন্নয়নের কারণে হারিয়ে যাচ্ছে শতভাগ আবাদযোগ্য কৃষিজমি। বাংলাদেশে ২০১৩ সালের ৫৯ নম্বর আইনের আওতায় ইটের সংজ্ঞায় বলা আছে, ‘ইট’ অর্থ বালু, মাটি বা অন্য কোনো উপকরণ দ্বারা ইটভাটায় পোড়াইয়া প্রস্তুতকৃত কোনো নির্মাণসামগ্রী। মাটি ছাড়া বালু বা অন্য কোনো উপকরণ দিয়ে তো ইট তৈরি সম্ভব নয়, কারণ বালুকে আগুনে পোড়ালে জমাটও বাঁধবে না, ইটেও রূপান্তরিত হবে না। মানুষ বালুকে উত্তপ্ত করে চাল থেকে মুড়ি তৈরি করে, ইট তৈরি করে না। তা ছাড়া অনুমতি সাপেক্ষে মজা পুকুর বা খাল বা বিল বা খাঁড়ি বা দিঘি বা নদ-নদী বা হাওর-বাঁওড় বা চরাঞ্চল বা পতিত জায়গার মাটি দিয়েও ইট তৈরিতে আগ্রহ দেখায় না। তাই সব ইটভাটায় উপকরণ হিসেবে আবাদযোগ্য কৃষি জমির মাটিই ব্যবহৃত হচ্ছে।
দেশে বর্তমানে ৭ হাজার ২০০ ইটভাটায় বছরে প্রায় ৩ হাজার ৫০০ কোটি ইট পোড়ানো হয়, এতে টপ সয়েল ব্যবহারের পরিমাণ প্রায় ১৩ কোটি টন, যা ৬৫ হাজার হেক্টর কৃষি জমির ওপরের স্তরের মাটির সমান। তা ছাড়া নানা কাজে আরও ১৫ হাজার হেক্টর আবাদযোগ্য জমিও অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে। ওই হিসাবে বছরে মোট উর্বর জমি হারানোর পরিমাণ প্রায় ৮০ লাখ ৩০ হাজার হেক্টর। অর্থাৎ প্রতিবছরই বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১ শতাংশ হারে আবাদযোগ্য জমি কমে যাচ্ছে, অপর দিকে ১ শতাংশ হারে জনসংখ্যা বাড়ছে। ওই হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও আবাদি জমির অবক্ষয় চলতে থাকলে আগামী ৭০ বছর পরে বাংলাদেশে কোনো কৃষি জমি অবশিষ্ট থাকবে না।
পশ্চিমা দেশগুলোর পাশাপাশি চীন, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম, জাপান, কোরিয়া, ভারত, ইন্দোনেশিয়াসহ ইট উৎপাদনে কৃষি জমির মাটির ব্যবহার পুরোপুরি নিষিদ্ধ। চীন ৫০ বছর আগে মাটি পোড়ানো ইট উৎপাদন নিষিদ্ধ করেছে। ভিয়েতনামে রাষ্ট্রীয়ভাবে নির্মিত ভবনে ৮০ শতাংশ ব্লক ইট ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে। বাংলাদেশে পরিবেশবান্ধব দুই শতাধিক ব্লক ইট তৈরির কারখানা রয়েছে। তবে চাহিদার তুলনায় ব্লক ইটের কারখানা সংখ্যা খুবই কম।
রাজবাড়ী জেলা ঘুরে এসে দেখা যায়, অনুমতি ছাড়া এবং অনুমোদিত ভাটার সংখ্যা ৯৫ টি। এতে সব ভাটায় মাটির জন্য ফসলের জমি কেটে ইটভাটায় নেয়া হচ্ছে। এতে করে রাজবাড়ী জেলার আয়তন দিন দিন কমে আসছে।
এ সময় আরএনডি ইট ভাটার মালিক ইউসুফ পাটোয়ারী জানান, আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। তিনি ২০২৬ সালের মধ্যে মাটির তৈরি ইটভাটা বন্ধ সেই সাথে ব্লকের তৈরি ইট ভাটার ঘোষণা দেবেন। আমরাও প্রস্তুতি নিচ্ছি। ব্লকের তৈরি ইট ভাটার তৈরীর কারখানা করার। কারণ মাটি দিয়ে এভাবে ইট প্রত্যেক বছর তৈরি করলে আমাদের জেলার আয়তন দিন দিন কমে আসবে।