
⇒
(মেজবাহ্ উল করিম রিন্টুর স্বরণে)
কীর্তিমানের মৃত্যু নেই,তারা বেঁচে থাকে তাদের সৃষ্টিকর্মের মাধ্যমে। কিছু মানুষের মানুষ, হয়ে ওঠার নেশা থাকে।ভিতর থেকে মানবিক বিকাশ ও গুণে।অনকেই জানেনা কিভাবে মানুষ হতে হয়।কতিপয় মানুষের মধ্যে থাকে, প্রকৃত মানুষ হওয়ার বোধ।মানুষ হয়ে উঠার নেশা,মানুষকে জাগানোর নেশা।মানুষকে, সুন্দর প্রকৃতিকে, উত্তর পুরুষকে ভালোবাসাতে পারে বলে।অন্তরের জমিন পলি মাটির মত কর্ষনে করতে পারে নতুন সৃষ্টি। তাই তারা অসাধারণ। এমন একজন মেজবা উল করিম রিন্টু।রাজবাড়ী শহরের সজ্জনকান্দায় জন্ম২২আগষ্ট ১৯৭৫,পিতা মৃত-আব্দুল জলিল,মাতা-মৃত খোদেজা বেগম।ভোগের ভাগের চাওয়া নিয়ে উন্মাদনা ছিলনা। লোভমুক্ত অহিংস ত্যাগি এক জন মানুষ,ছিলো প্রচন্ড ইচ্ছা শক্তি ও আত্ম বিশ্বাসী। সবাই যখন ঈদ পুজোর আনন্দ নিয়ে ব্যস্ত সে তখন বঞ্চিত মানুষের পাশে অন্ন বস্ত্র নিয়ে। নিজের থেকে এবং এর ওর কাছে হাত পেতে নিয়ে বঞ্চিত ঐ মুখে একটু হাসি ফোটাবার জন্য ছুটেছেন। অন্যের জন্য আগামীর জন্য।আগামী দিনের মানুষের জন্য। আগামী প্রজন্ম একটি সুন্দর সমাজ তার স্বপ্ন কল্প জুড়ে,তাই তার ছিল নিরন্তর ছুটে চলা। একটি পৃথিবী যা হবে সবার জন্য সমান। সেই সমাজ পৃথিবী নির্মাণে মানুষের সাথে যত্মশীল হয়ে উঠতে হবে প্রকৃতির প্রতিও সমান ভাবে। সুকান্তের অমর মন্ত্র বুকে নিয়ে “এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি,নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার” এ পথের অগ্রযাত্রায় কখনো অন্যার্য মিথ্যে অন্যায়ের সাথে আপস নয়।অসংগতির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে,বলতে হবে। তা সে অন্তর দিয়ে বিশ্বাস করত।অণুপ্রাণিত হয়েছেন একুশে পদপ্রাপ্ত দেশবরেণ্য চিত্রশিল্পী বড় ভাই মনসুরুল করিম এর বিশ্বাস ও শুদ্ধ মানবিক চেতনায়।আর সেই বিশ্বাসের ভীতের উপর দাঁড়িয়ে দেখেছন সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্ন। ভালোবাসার পরশ মানুষের সাথে সাথে,গাছ প্রকৃতি ফুল নদীতেও ছড়াতে হবে তাও বুঝেছিল এই মানুষটি। জীবনের শুদ্ধতার নেশা ছিল তার।সামনে এগিয়ে চলতে তার সমৃদ্ধ অতীত কেউ সাথে রাখতো।পূর্বপুরুষের হাল,মাথাল, লাঙ্গল, জোয়াল,টোনা,হুক্কা গাড়োয়ানের গাড়ি আরো কত কিছু। যা কিনা পূর্ব পুরুষের পরিচ্ছন্ন অকৃত্রিম যাপিত জীবনের কথা বলে।শেকড়ের অতীত আমাদের পূর্ব পুরুষের পরিচয় বহন করে। তাদের প্রেম ভালবাসা, সংগ্রাম সংস্কৃতির কথা আছে তাতে। শহরের প্রতিটি পথ,পাঠশালা, সংস্কৃতির অঙ্গন তার চারন ভুমি ছিল। সবাই তার বন্ধু। বন্ধু বানাতে বানাতে,স্বপ্ন দেখে দেখে তার মুহূর্তগুলো পার হতো। সেই নিদর্শনে পড়ে আছে “ঘর ছাড়া “তার স্মৃতির স্পর্শে সাজানো পসরা।প্রকৃতির সাথে থেকেই তো মানুষ প্রকৃতির মত উদার হয়। পাশেই ছাদে তার বিরল প্রজাতির বনসাই,গাছ, ফুল যেন তার ওই স্পর্শের অপেক্ষায়। কখন আসে অথচ ফুলেরা জানেনা সে আর নেই। সে কখনো আসবে না। এখনও বকুল গাছটা দাঁড়িয়ে আছে ঠায়,যেন বন্ধুর অপেক্ষায় বন্ধু।কলেজের গেটে কামিনী গাছটা শোভা নিয়ে তার রোপিত হাতের স্পর্শ নিতে অথবা তার কন্ঠ, বা পায়ের শব্দ পেতে অপেক্ষা করে। প্রতিটি বসন্ত সকালে অথবা প্রতিদিন পুকুর পাড়ে বা এই শহরের দেয়াল ঘেসা অথবা বিদ্যালয় আঙিনায় রোপন করা গাছেরা অপেক্ষায় থাকে। তারা জানে না সে আর নেই। যে মাটির গায়ে রেখে গেছে সে তাদের বড় হতে। সেই মাটির সোহাগে গাছ, ঘাসের ,নরম মাটির বিছানায় আছে অনন্ত ঘুমে। যে সব ক্ষুদে বন্ধুরা অন্তর জুড়ে স্বপ্নের রঙিন উচ্ছল ছুটে বেড়াত তাদের স্বপ্ন দেখানো পথে নিয়ে যেত।যে পাখিরা গাছের ডালে তাদের হাড়ি বেধে দিয়েছিল ঘর। নিরাপদ আশ্রয়। সেই পাখিদের বন্ধুটি নেই তারা তা জানেনা। তারা এখন তাদের তারায় তারায় খোঁজে তাদের প্রিয় বন্ধুকে। শত স্মৃতি নিয়ে স্বজন বন্ধুরা। স্মৃতিতারিত তাকে খোঁজে। বিদ্রোহী কবির গানের মত আমি চিরতরে দূরে চলে যাবো তবু আমারে দেব না ভুলিতে। এভাবেই নিজেকে ছড়িয়ে দিয়ে না ভুলিতে দেওয়ার বেঁধে,না ফেরার দেশে তুমি নিরব দর্শক।এভাবেই প্রতিটি জন্মদিনে তোমার স্পর্শিত রোপিত গাছ, ফুল পূর্ব পুরুষের বাংলা বাঙ্গালীর শেকড়। মা, মাটি পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য দিয়ে নতুন প্রজন্মের স্বপ্ন ছড়িয়ে গেলে। সুন্দর আগামীর স্বপ্ন জাগানিয়া হলে। তোমার জন্ম বিদায়ের দিনে বেঁধে গেছো ভালোবাসার ঋণে।তোমাকে অভিবাদন হে বন্ধু। তোমার সৃষ্টি কর্মে বেচে থাকবে তোমার মত সকল স্বজনের মাঝে।
প্রতিবেদক, মোঃআতাউর রহমান
লেখক কবি ও কলামিষ্ট