রাজবাড়ী ০১:৫২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আজ পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর

মোঃ আনিসুর রহমান

আজ মঙ্গলবার দিবাগত রাত মহিমান্বিত লাইলাতুল ক্বদর। বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমান এ রাতে ইবাদত, যিকির আযকার ও কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে উদযাপন করবে। এ রাত পাওয়া মহাসৌভাগ্যের বিষয়। তাই লাইলাতুল ক্বদর অর্থ অতি উচ্চ, মর্যাদা সম্পন্ন ও মহিমান্বিত এ রাতকে ভাগ্য রজনীও বলা হয়। এ রাতে প্রত্যেক বান্দা গোটা বছর কখন কি খাবে বা কি করবে এসব বাজেট নির্ধারণ করা হয় বলে বলা হয়ে থাকে। মূলতঃ এ রাত এবাদতের রাত। সুতরাং এ রাতে আল্লাহর ইবাদাত করে আল্লাহর কাছে নিজের প্রয়োজনীয় বিষয় চেয়ে নিতে বলা হয়েছে। আর এ রাত হাজার মাসের চেয়ে উত্তম হিসেবে আল্লাহ ঘোষণা করেছেন। মূলত এ রাতে পবিত্র কুরআন মজিদ নাযিল হয়েছে বলেই এ রাতের এ মর্যাদা। আর এ রাতের কারণেই পবিত্র রমযান মাসের মর্যাদা।

আবু বকর আল আররাক বলেছেন, এ রাতের নাম ক্বদর রাত রাখা হয়েছে এ জন্য যে, যে লোক মূলত মান মর্যাদাসম্পন্ন নয় সে যদি এ রাতকে যথাযথভাবে গ্রহণ করে ও জাগরণ করে আল্লাহর ইবাদত করে তাহলে সেও মর্যাদাবান ও সম্মানিত হবে।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সূরা আল ক্বদর নামক একটি সূরা নাযিল করে বলেছেন, “নিশ্চয়ই আমি উহা (আল কুরআন) লাইলাতুল ক্বদরে নাযিল করেছি। তুমি কি জান লাইলাতুল ক্বদর কী? লাইলাতুল ক্বদর হলো হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। এ রাতে ফেরেশতা রুহ (জিব্রাইল, মিকাইল, ইস্রাফিল, আজরাইল) আসে আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে অসংখ্য, অগণিত রহমত নিয়ে। তারা শান্তি বিতরণ করে। ফজর পর্যন্ত এভাবে চলতে থাকে।

গোটা রমযানের মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে পবিত্র লাইলাতুল ক্বদরকে ঘিরে। আর এই লাইলাতুল ক্বদর সম্পর্কে পবিত্র কুরআন ও হাদীসে অনেক বর্ণনা এসেছে। তবে কোথাও নির্দিষ্টভাবে লাইলাতুল ক্বদরের রাত নির্ধারণ করা হয়নি। হাদীসে বলা হয়েছে রমযানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে লাইলাতুল ক্বদর তালাস করার জন্য। বিশিষ্ট হাদীস বিশারদ ও ফিকাহ শাস্ত্র বিশারদগণ বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে ধারণা করেছেন যে পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর রমযানের ২৭ তারিখ রাতেই হতে পারে। এ  জন্য এ রাতকে লাইলাতুল ক্বদর হিসেবে মুসলমানগণ পালন করে থাকে। আর সুনির্দিষ্টভাবে এ রাতকে চিহ্নিত করতে না পারায় এ রাতের মর্যাদা হাসিল করার জন্য মোমিন বান্দাহগণ ইতিক্বাফে বসেন।

‘লাইলাতুল কদর’ আরবি শব্দ। শবে কদর হলো ‘লাইলাতুল কদর’-এর ফারসি পরিভাষা। ‘শব’ অর্থ রাত আর আরবি ‘লাইলাতুন’ শব্দের অর্থও রাত বা রজনী। কদর অর্থ সম্মানিত, মহিমান্বিত। সুতরাং লাইলাতুল কদরের অর্থ সম্মানিত রজনী বা মহিমান্বিত রজনী।

পবিত্র কুরআন ও সহিহ হাদিস দ্বারা লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ‘শবে বরাত’ ও শবে বরাতের হাদিসগুলোর বর্ণনা নিয়ে হাদিস বিশেষজ্ঞ ও ফকিহদের মধ্যে যে সংশয় রয়েছে। লাইলাতুল কদরের ব্যাপারে তার কোনোই অবকাশ নেই। পবিত্র কুরআন, নির্ভরযোগ্য হাদিস ও রাসূলুল্লাহ সা:-এর লাইলাতুল কদরের জন্য গৃহীত কর্মতৎপরতা লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।

এ সম্মানিত রজনীর গুরুত্ব সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি এ কুরআনকে কদরের রাতে নাজিল করেছি। তুমি কি জানো কদরের রাত কী? কদরের রাত হাজার মাস থেকেও উত্তম ও কল্যাণময়’ (সূরা আল কদর : ১-৩)। এই রাত কোন মাস্তে এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন, ‘রমযান এমন মাস যাতে কুরআন নাজিল হয়েছে’ (সূরা বাকারা : ১৮৫)। এই রাত রমযানের কোন তারিখে? রাসূলুল্লাহ সা: একটি রহস্যময় কারণে তারিখটি সুনির্দিষ্ট করেননি। ইমাম বুখারি, ইমাম মুসলিম, ইমাম আহমদ ও ইমাম তিরমিজি কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে বলা হয়েছে- হজরত আয়েশা রা: বর্ণনা করেছেন, নবী করিম সা: বলেছেন, ‘কদরের রাতকে রমযানের শেষ দশ রাতের কোন বেজোড় রাতে খোঁজ করো।’

হজরত আবু বকর রা: ও হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত হাদিস থেকেও এই একই ধরনের তথ্য পাওয়া যায়। অবশ্য কোনো কোনো ইসলামী মনীষী নিজস্ব ইজতিহাদ, গবেষণা, গাণিতিক বিশ্লেষণ ইত্যাদির মাধ্যামে রমযানের ২৭ তারিখের রাতে (অর্থাৎ ২৬ রোজার দিবাগত রাতে) শবে কদর হওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনার কথা জোর দিয়ে বলেছেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সা: এটাকে সুনির্দিষ্ট করেননি; বরং কষ্ট করে খুঁজে নিতে বলেছেন।

মহিমান্বিত এ রাতকে মহান আল্লাহ রমযানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে লুকিয়ে রেখেছেন। বান্দাহ বিনিদ্র রজনী কাটাবে, সবর করবে এর মধ্যে খুঁজে পাবে সম্মানিত রাত, পাবে আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাত; ফেরেশতার অদৃশ্য মোলাকাতে সিক্ত হবে তার হৃদয়, আপন রবের ভালোবাসায় হবে সে উদ্বেলিত। এ যেন দীর্ঘ বিরহের পর আপনজনকে ফিরে পাওয়ার আনন্দ। এ দীর্ঘ প্রতিক্ষার কষ্ট-বিরহের মাধ্যমে রব তার বান্দাহকে আরো আপন করে নেন। কাজেই শেষ দশ দিনের বেজোড় রাতগুলোকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ইবাদতে মশগুল হতে হবে। প্রতিটি রাতকেই লাইলাতুল কদর মনে করতে হবে। তা হলে লাইলাতুল কদর আল্লাহর মেহেরবানিতে হাতছাড়া হবে না ইনশাআল্লাহ। রমযানের ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯ তারিখের রাতগুলোই (অর্থাৎ ২০, ২২, ২৪, ২৬ ও ২৮ শে রোজার দিবাগত রাত ) হলো শেষ দশকের বেজোড় রাত।

এ রাতের আর একটি গুরুত্ব হলো- এ পবিত্র রাতেই কুরআন নাজিল হয়েছে। আর এই কুরআনের সাথেই মানুষের ভাগ্য জড়িয়ে আছে। এ জন্য কদরের আর একটি অর্থ হলো ভাগ্য। তা হলে লাইলাতুল কদরের অর্থ হয় ভাগ্যরজনী। এ রাত হাজার মাস থেকে উত্তম ও কল্যাণময় (কুরআন)। এ রাতেই পবিত্র কুরআন নাজিল করা হয়েছে (কুরআন)। এ রাতে ফেরেশতা নাজিল হয় এবং আবেদ বান্দাহদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে। ফজর পর্যন্ত এ রাতে পুরোপুরি শান্তি ও নিরাপত্তার (কুরআন)। এ রাতে প্রত্যেকটি ব্যাপারে অত্যন্ত বিজ্ঞানসম্মত ও সুদৃঢ় ফায়সালা জারি করা হয় (কুরআন)। এ রাতে ইবাদতে মশগুল বান্দাহদের জন্য অবতরণকৃত ফেরেশতারা দোয়া করেন (হাদিস)।

‘যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে ঈমান সহকারে ও আল্লাহর কাছ থেকে বড় শুভফল লাভের আশায় ইবাদতের জন্য দাঁড়িয়ে থাকবে, তার পেছনের সব গুনাহ মাফ হয়ে যাবে’ (বুখারি ও মুসলিম)। এ রাতের কল্যাণ থেকে একমাত্র হতভাগ্য লোক ছাড়া আর কেউ বঞ্চিত হয় না। (ইবনে মাজাহ ও মিশকাত)।

পবিত্র শবে কদর উদযাপন উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে “পবিত্র শবে কদর এর ফজিলত ও তাৎপর্য” শীর্ষক আলোচনা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।

মুসলিম উম্মাহকে শুভেচ্ছা বিএনপির : পবিত্র লাইলাতুল কদর উপলক্ষে বাংলাদেশসহ মুসলিম উম্মাহকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানিয়েছে বিএনপি। গতকাল সোমবার পৃথক বাণীতে এ শুভেচ্ছা জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। 

বাণীতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, পবিত্র লাইলাতুল কদর উপলক্ষে আমি বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল মুসলমানকে জানাই আন্তরিক মোবারকবাদ। কামনা করি তাদের সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ। তিনি বলেন, লাইলাতুল কদর একটি মহিমাময় পবিত্র রাত। মাহে রমযানের এ রাতে নাজিল হয়েছিলো পবিত্র গ্রন্থ আল-কুরআন। পবিত্র এ গ্রন্থটি মানব জাতির জন্য আল্লাহর তরফ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে সম্পূর্ণ জীবন বিধান হিসেবে। পবিত্র এ রজনীতে এবাদত বন্দেগীতে মশগুল মোমিন মুসলমানগণ বেহেশতী সওগাতের সন্ধান পায়। এই পবিত্র রাতে আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য ইবাদত বন্দেগী মানবজীবনের সকল তিক্ততার বিষবাষ্পকে দূরীভূত করে মোমিনদের আত্মা পরিশুদ্ধ ও অনাবিল শান্তিতে ভরে ওঠে। আজকের এ মহান রাতে আমি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে প্রার্থনা জানাই দেশ, জনগণ ও বিশ্ব মুসলিমের কল্যাণ ও সমৃদ্ধির জন্য। আর এজন্য আমি মহান রাব্বুল আলামীনের করুণা ভিক্ষা চাইছি।

Tag :

আজ পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর

প্রকাশিত : ০৬:৪০:৩৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৩

মোঃ আনিসুর রহমান

আজ মঙ্গলবার দিবাগত রাত মহিমান্বিত লাইলাতুল ক্বদর। বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমান এ রাতে ইবাদত, যিকির আযকার ও কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে উদযাপন করবে। এ রাত পাওয়া মহাসৌভাগ্যের বিষয়। তাই লাইলাতুল ক্বদর অর্থ অতি উচ্চ, মর্যাদা সম্পন্ন ও মহিমান্বিত এ রাতকে ভাগ্য রজনীও বলা হয়। এ রাতে প্রত্যেক বান্দা গোটা বছর কখন কি খাবে বা কি করবে এসব বাজেট নির্ধারণ করা হয় বলে বলা হয়ে থাকে। মূলতঃ এ রাত এবাদতের রাত। সুতরাং এ রাতে আল্লাহর ইবাদাত করে আল্লাহর কাছে নিজের প্রয়োজনীয় বিষয় চেয়ে নিতে বলা হয়েছে। আর এ রাত হাজার মাসের চেয়ে উত্তম হিসেবে আল্লাহ ঘোষণা করেছেন। মূলত এ রাতে পবিত্র কুরআন মজিদ নাযিল হয়েছে বলেই এ রাতের এ মর্যাদা। আর এ রাতের কারণেই পবিত্র রমযান মাসের মর্যাদা।

আবু বকর আল আররাক বলেছেন, এ রাতের নাম ক্বদর রাত রাখা হয়েছে এ জন্য যে, যে লোক মূলত মান মর্যাদাসম্পন্ন নয় সে যদি এ রাতকে যথাযথভাবে গ্রহণ করে ও জাগরণ করে আল্লাহর ইবাদত করে তাহলে সেও মর্যাদাবান ও সম্মানিত হবে।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সূরা আল ক্বদর নামক একটি সূরা নাযিল করে বলেছেন, “নিশ্চয়ই আমি উহা (আল কুরআন) লাইলাতুল ক্বদরে নাযিল করেছি। তুমি কি জান লাইলাতুল ক্বদর কী? লাইলাতুল ক্বদর হলো হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। এ রাতে ফেরেশতা রুহ (জিব্রাইল, মিকাইল, ইস্রাফিল, আজরাইল) আসে আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে অসংখ্য, অগণিত রহমত নিয়ে। তারা শান্তি বিতরণ করে। ফজর পর্যন্ত এভাবে চলতে থাকে।

গোটা রমযানের মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে পবিত্র লাইলাতুল ক্বদরকে ঘিরে। আর এই লাইলাতুল ক্বদর সম্পর্কে পবিত্র কুরআন ও হাদীসে অনেক বর্ণনা এসেছে। তবে কোথাও নির্দিষ্টভাবে লাইলাতুল ক্বদরের রাত নির্ধারণ করা হয়নি। হাদীসে বলা হয়েছে রমযানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে লাইলাতুল ক্বদর তালাস করার জন্য। বিশিষ্ট হাদীস বিশারদ ও ফিকাহ শাস্ত্র বিশারদগণ বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে ধারণা করেছেন যে পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর রমযানের ২৭ তারিখ রাতেই হতে পারে। এ  জন্য এ রাতকে লাইলাতুল ক্বদর হিসেবে মুসলমানগণ পালন করে থাকে। আর সুনির্দিষ্টভাবে এ রাতকে চিহ্নিত করতে না পারায় এ রাতের মর্যাদা হাসিল করার জন্য মোমিন বান্দাহগণ ইতিক্বাফে বসেন।

‘লাইলাতুল কদর’ আরবি শব্দ। শবে কদর হলো ‘লাইলাতুল কদর’-এর ফারসি পরিভাষা। ‘শব’ অর্থ রাত আর আরবি ‘লাইলাতুন’ শব্দের অর্থও রাত বা রজনী। কদর অর্থ সম্মানিত, মহিমান্বিত। সুতরাং লাইলাতুল কদরের অর্থ সম্মানিত রজনী বা মহিমান্বিত রজনী।

পবিত্র কুরআন ও সহিহ হাদিস দ্বারা লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ‘শবে বরাত’ ও শবে বরাতের হাদিসগুলোর বর্ণনা নিয়ে হাদিস বিশেষজ্ঞ ও ফকিহদের মধ্যে যে সংশয় রয়েছে। লাইলাতুল কদরের ব্যাপারে তার কোনোই অবকাশ নেই। পবিত্র কুরআন, নির্ভরযোগ্য হাদিস ও রাসূলুল্লাহ সা:-এর লাইলাতুল কদরের জন্য গৃহীত কর্মতৎপরতা লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।

এ সম্মানিত রজনীর গুরুত্ব সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি এ কুরআনকে কদরের রাতে নাজিল করেছি। তুমি কি জানো কদরের রাত কী? কদরের রাত হাজার মাস থেকেও উত্তম ও কল্যাণময়’ (সূরা আল কদর : ১-৩)। এই রাত কোন মাস্তে এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন, ‘রমযান এমন মাস যাতে কুরআন নাজিল হয়েছে’ (সূরা বাকারা : ১৮৫)। এই রাত রমযানের কোন তারিখে? রাসূলুল্লাহ সা: একটি রহস্যময় কারণে তারিখটি সুনির্দিষ্ট করেননি। ইমাম বুখারি, ইমাম মুসলিম, ইমাম আহমদ ও ইমাম তিরমিজি কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে বলা হয়েছে- হজরত আয়েশা রা: বর্ণনা করেছেন, নবী করিম সা: বলেছেন, ‘কদরের রাতকে রমযানের শেষ দশ রাতের কোন বেজোড় রাতে খোঁজ করো।’

হজরত আবু বকর রা: ও হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত হাদিস থেকেও এই একই ধরনের তথ্য পাওয়া যায়। অবশ্য কোনো কোনো ইসলামী মনীষী নিজস্ব ইজতিহাদ, গবেষণা, গাণিতিক বিশ্লেষণ ইত্যাদির মাধ্যামে রমযানের ২৭ তারিখের রাতে (অর্থাৎ ২৬ রোজার দিবাগত রাতে) শবে কদর হওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনার কথা জোর দিয়ে বলেছেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সা: এটাকে সুনির্দিষ্ট করেননি; বরং কষ্ট করে খুঁজে নিতে বলেছেন।

মহিমান্বিত এ রাতকে মহান আল্লাহ রমযানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে লুকিয়ে রেখেছেন। বান্দাহ বিনিদ্র রজনী কাটাবে, সবর করবে এর মধ্যে খুঁজে পাবে সম্মানিত রাত, পাবে আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাত; ফেরেশতার অদৃশ্য মোলাকাতে সিক্ত হবে তার হৃদয়, আপন রবের ভালোবাসায় হবে সে উদ্বেলিত। এ যেন দীর্ঘ বিরহের পর আপনজনকে ফিরে পাওয়ার আনন্দ। এ দীর্ঘ প্রতিক্ষার কষ্ট-বিরহের মাধ্যমে রব তার বান্দাহকে আরো আপন করে নেন। কাজেই শেষ দশ দিনের বেজোড় রাতগুলোকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ইবাদতে মশগুল হতে হবে। প্রতিটি রাতকেই লাইলাতুল কদর মনে করতে হবে। তা হলে লাইলাতুল কদর আল্লাহর মেহেরবানিতে হাতছাড়া হবে না ইনশাআল্লাহ। রমযানের ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯ তারিখের রাতগুলোই (অর্থাৎ ২০, ২২, ২৪, ২৬ ও ২৮ শে রোজার দিবাগত রাত ) হলো শেষ দশকের বেজোড় রাত।

এ রাতের আর একটি গুরুত্ব হলো- এ পবিত্র রাতেই কুরআন নাজিল হয়েছে। আর এই কুরআনের সাথেই মানুষের ভাগ্য জড়িয়ে আছে। এ জন্য কদরের আর একটি অর্থ হলো ভাগ্য। তা হলে লাইলাতুল কদরের অর্থ হয় ভাগ্যরজনী। এ রাত হাজার মাস থেকে উত্তম ও কল্যাণময় (কুরআন)। এ রাতেই পবিত্র কুরআন নাজিল করা হয়েছে (কুরআন)। এ রাতে ফেরেশতা নাজিল হয় এবং আবেদ বান্দাহদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে। ফজর পর্যন্ত এ রাতে পুরোপুরি শান্তি ও নিরাপত্তার (কুরআন)। এ রাতে প্রত্যেকটি ব্যাপারে অত্যন্ত বিজ্ঞানসম্মত ও সুদৃঢ় ফায়সালা জারি করা হয় (কুরআন)। এ রাতে ইবাদতে মশগুল বান্দাহদের জন্য অবতরণকৃত ফেরেশতারা দোয়া করেন (হাদিস)।

‘যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে ঈমান সহকারে ও আল্লাহর কাছ থেকে বড় শুভফল লাভের আশায় ইবাদতের জন্য দাঁড়িয়ে থাকবে, তার পেছনের সব গুনাহ মাফ হয়ে যাবে’ (বুখারি ও মুসলিম)। এ রাতের কল্যাণ থেকে একমাত্র হতভাগ্য লোক ছাড়া আর কেউ বঞ্চিত হয় না। (ইবনে মাজাহ ও মিশকাত)।

পবিত্র শবে কদর উদযাপন উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে “পবিত্র শবে কদর এর ফজিলত ও তাৎপর্য” শীর্ষক আলোচনা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।

মুসলিম উম্মাহকে শুভেচ্ছা বিএনপির : পবিত্র লাইলাতুল কদর উপলক্ষে বাংলাদেশসহ মুসলিম উম্মাহকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানিয়েছে বিএনপি। গতকাল সোমবার পৃথক বাণীতে এ শুভেচ্ছা জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। 

বাণীতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, পবিত্র লাইলাতুল কদর উপলক্ষে আমি বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল মুসলমানকে জানাই আন্তরিক মোবারকবাদ। কামনা করি তাদের সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ। তিনি বলেন, লাইলাতুল কদর একটি মহিমাময় পবিত্র রাত। মাহে রমযানের এ রাতে নাজিল হয়েছিলো পবিত্র গ্রন্থ আল-কুরআন। পবিত্র এ গ্রন্থটি মানব জাতির জন্য আল্লাহর তরফ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে সম্পূর্ণ জীবন বিধান হিসেবে। পবিত্র এ রজনীতে এবাদত বন্দেগীতে মশগুল মোমিন মুসলমানগণ বেহেশতী সওগাতের সন্ধান পায়। এই পবিত্র রাতে আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য ইবাদত বন্দেগী মানবজীবনের সকল তিক্ততার বিষবাষ্পকে দূরীভূত করে মোমিনদের আত্মা পরিশুদ্ধ ও অনাবিল শান্তিতে ভরে ওঠে। আজকের এ মহান রাতে আমি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে প্রার্থনা জানাই দেশ, জনগণ ও বিশ্ব মুসলিমের কল্যাণ ও সমৃদ্ধির জন্য। আর এজন্য আমি মহান রাব্বুল আলামীনের করুণা ভিক্ষা চাইছি।