রাজবাড়ী ০৪:২৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মসজিদে যাতায়াতের পথে বাঁশের বেড়া ভোগান্তিতে স্হানীয়রা

শেখ মমিন:

রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলায় নবনির্মিত এক মসজিদকে কেন্দ্র করে শত বছরের পুরোনা গ্রামীণ পথ বাঁশের বেড়া দিয়ে আটকে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতেকরে মুসুল্লীদের ওই মসজিদে যাওয়াসহ শিশুদের স্কুলে যাতায়াত ও স্থানীয়দের হাট-বাজারে যাতায়াতে চরম ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে।

সরেজমিন জানা যায়, গোয়ালন্দ উপজেলার ছোটভাকলা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের চরবারকি পাড়া গ্রামে মখদুম মোহাম্মদ আরোয়াহ্ জামে মসজিদ নামে একটি মসজিদ নির্মাণকে কেন্দ্র করে শত বছরের পুরোনা পথ বন্ধ করে দিয়েছেন স্থানীয় মো. তিতুমীর মিয়া, মো. পারভেজ মিয়ার পরিবার।

যুগ যুগ ধরে স্থানীয়দের চলাচলের রাস্তাটি বন্ধ করায় চরম বিপাকে পড়েছেন স্কুলগামী শিশু- কিশোররাসহ স্থানীয়রা। পথটি বন্ধ করায় স্থানীয়দের দীর্ঘ পথ ঘুরে গন্তব্যে যেতে হয়। এছাড়া মুসুল্লিরা ওই মসজিদে নামাজ আদায় করার জন্য বাঁশের বেড়া টপকে অথবা কয়েকটি বাড়ির উপর দিয়ে অনেক পথ ঘুরে যেতে হয় মসজিদে।

জানা গেছে, মরহুম আব্দুল ওহাব মিয়া নামের এক শিক্ষকের পুত্র সন্তানের নামে ওই মসজিদটি স্থাপন করা হয়। যে সন্তান পিতার আগেই মারা যায়। মরহুম আব্দুল ওহাব মিয়া স্ত্রী’র নামে তার (ওহাব মিয়ার) ভাই ইসলাম মিয়ার কাছ থেকে একই দাগে ৪ শতাংশ জমি ক্রয় করেন। আব্দুল ওহাব মিয়ার মৃত্যুর পর তার ভাতিজাগণ তার সম্পত্তির মালিক হন এবং ওহাব মিয়ার স্ত্রীর মৃত্যুর পর তার (স্ত্রীর) ভাইগণ তার সম্পত্তির মালিক হন। ওহাব মিয়ার স্ত্রীর ভাইয়েরা মরহুম একমাত্র ভাগিনার নামে একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ওই ৪ শতাংশ জমি ওয়াকফ করে দেন। এরপর স্থানীয়রা যার নামে মসজিদের নামকরণ করা হয়েছে তার কবর সংলগ্ন স্থানে মসজিদ ঘর নির্মাণ করেন। কিন্তু আব্দুল ওহাবের ভাতিজারা দাবি করেন ওয়াকফ সম্পত্তিতে মসজিদ ঘর নির্মাণ না করে ওয়ারিশ সূত্রে চাচার কাছ থেকে পাওয়া তাদের জায়গায় মসজিদ ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তারা ওই পথ বাঁশের বেড়া দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে।

স্থানীয় অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক মো. হারুন অর রশিদ জানান, দীর্ঘদিনের যাতায়াতের পথে হঠাৎ বাঁশের বেড়া দিয়ে আটকিয়ে দেয়ায় তারা চরম বিপাকে পড়েছেন। মসজিদে নামাজ আদায়ের জন্য এখন তাদের অনেকটা পথ ঘুরে অথবা বাঁশের বেড়া টপকিয়ে যেতে হচ্ছে। কেউ কেউ এই অসুবিধার জন্য মসজিদে এসে নামাজ আদায় করতে পারছেন না।

স্থানীয় বাসিন্দা রিপন মোল্লা জানান, গুরুত্বপূর্ণ দীর্ঘদিনের এই রাস্তা বন্ধ করায় পাশ্ববর্তী দু’টি স্কুলে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের চরম সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। অনেক মুসুল্লি মসজিদে নামাজ আদায় করতে আসতে পারছেন না। এ নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। এলাকার ধর্মপ্রাণ মুসুল্লিদের সুবিধার্থে ও দৈনন্দিন কাজে যাতায়াতের জন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে বাঁশের বেড়া খুলে দেয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানান তারা।

অভিযুক্ত মো. পারভেজ মিয়া জানান, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যাক্তিদের পরামর্শ উপেক্ষা করে মসজিদের নামে ওয়াকফ করা জমিতে মসজিদঘর নির্মাণ না করে, জোরপূর্বক তার চাচাতো ভাই তিতুমীর মিয়ার জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া বিবাদমান জমির বাইরে তার নিজস্ব অন্য জায়গা-জমির নিরাপত্তার স্বার্থে তারা ওই বাঁশের বেড়া দিয়েছেন। তার জায়গার রক্ষনাবেক্ষনের অধিকার তার অবশ্যই আছে।

এ ব্যাপারে গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: জাকির হোসেন জানান, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে উভয় পক্ষের সাথে কথা বলে দ্রুত সময়ের মধ্যে জনসাধারনের যাতায়াতের পথ
উন্মুক্ত করার ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

Tag :

মসজিদে যাতায়াতের পথে বাঁশের বেড়া ভোগান্তিতে স্হানীয়রা

প্রকাশিত : ১২:৩৮:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ মার্চ ২০২৩

শেখ মমিন:

রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলায় নবনির্মিত এক মসজিদকে কেন্দ্র করে শত বছরের পুরোনা গ্রামীণ পথ বাঁশের বেড়া দিয়ে আটকে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতেকরে মুসুল্লীদের ওই মসজিদে যাওয়াসহ শিশুদের স্কুলে যাতায়াত ও স্থানীয়দের হাট-বাজারে যাতায়াতে চরম ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে।

সরেজমিন জানা যায়, গোয়ালন্দ উপজেলার ছোটভাকলা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের চরবারকি পাড়া গ্রামে মখদুম মোহাম্মদ আরোয়াহ্ জামে মসজিদ নামে একটি মসজিদ নির্মাণকে কেন্দ্র করে শত বছরের পুরোনা পথ বন্ধ করে দিয়েছেন স্থানীয় মো. তিতুমীর মিয়া, মো. পারভেজ মিয়ার পরিবার।

যুগ যুগ ধরে স্থানীয়দের চলাচলের রাস্তাটি বন্ধ করায় চরম বিপাকে পড়েছেন স্কুলগামী শিশু- কিশোররাসহ স্থানীয়রা। পথটি বন্ধ করায় স্থানীয়দের দীর্ঘ পথ ঘুরে গন্তব্যে যেতে হয়। এছাড়া মুসুল্লিরা ওই মসজিদে নামাজ আদায় করার জন্য বাঁশের বেড়া টপকে অথবা কয়েকটি বাড়ির উপর দিয়ে অনেক পথ ঘুরে যেতে হয় মসজিদে।

জানা গেছে, মরহুম আব্দুল ওহাব মিয়া নামের এক শিক্ষকের পুত্র সন্তানের নামে ওই মসজিদটি স্থাপন করা হয়। যে সন্তান পিতার আগেই মারা যায়। মরহুম আব্দুল ওহাব মিয়া স্ত্রী’র নামে তার (ওহাব মিয়ার) ভাই ইসলাম মিয়ার কাছ থেকে একই দাগে ৪ শতাংশ জমি ক্রয় করেন। আব্দুল ওহাব মিয়ার মৃত্যুর পর তার ভাতিজাগণ তার সম্পত্তির মালিক হন এবং ওহাব মিয়ার স্ত্রীর মৃত্যুর পর তার (স্ত্রীর) ভাইগণ তার সম্পত্তির মালিক হন। ওহাব মিয়ার স্ত্রীর ভাইয়েরা মরহুম একমাত্র ভাগিনার নামে একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ওই ৪ শতাংশ জমি ওয়াকফ করে দেন। এরপর স্থানীয়রা যার নামে মসজিদের নামকরণ করা হয়েছে তার কবর সংলগ্ন স্থানে মসজিদ ঘর নির্মাণ করেন। কিন্তু আব্দুল ওহাবের ভাতিজারা দাবি করেন ওয়াকফ সম্পত্তিতে মসজিদ ঘর নির্মাণ না করে ওয়ারিশ সূত্রে চাচার কাছ থেকে পাওয়া তাদের জায়গায় মসজিদ ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তারা ওই পথ বাঁশের বেড়া দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে।

স্থানীয় অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক মো. হারুন অর রশিদ জানান, দীর্ঘদিনের যাতায়াতের পথে হঠাৎ বাঁশের বেড়া দিয়ে আটকিয়ে দেয়ায় তারা চরম বিপাকে পড়েছেন। মসজিদে নামাজ আদায়ের জন্য এখন তাদের অনেকটা পথ ঘুরে অথবা বাঁশের বেড়া টপকিয়ে যেতে হচ্ছে। কেউ কেউ এই অসুবিধার জন্য মসজিদে এসে নামাজ আদায় করতে পারছেন না।

স্থানীয় বাসিন্দা রিপন মোল্লা জানান, গুরুত্বপূর্ণ দীর্ঘদিনের এই রাস্তা বন্ধ করায় পাশ্ববর্তী দু’টি স্কুলে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের চরম সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। অনেক মুসুল্লি মসজিদে নামাজ আদায় করতে আসতে পারছেন না। এ নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। এলাকার ধর্মপ্রাণ মুসুল্লিদের সুবিধার্থে ও দৈনন্দিন কাজে যাতায়াতের জন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে বাঁশের বেড়া খুলে দেয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানান তারা।

অভিযুক্ত মো. পারভেজ মিয়া জানান, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যাক্তিদের পরামর্শ উপেক্ষা করে মসজিদের নামে ওয়াকফ করা জমিতে মসজিদঘর নির্মাণ না করে, জোরপূর্বক তার চাচাতো ভাই তিতুমীর মিয়ার জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া বিবাদমান জমির বাইরে তার নিজস্ব অন্য জায়গা-জমির নিরাপত্তার স্বার্থে তারা ওই বাঁশের বেড়া দিয়েছেন। তার জায়গার রক্ষনাবেক্ষনের অধিকার তার অবশ্যই আছে।

এ ব্যাপারে গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: জাকির হোসেন জানান, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে উভয় পক্ষের সাথে কথা বলে দ্রুত সময়ের মধ্যে জনসাধারনের যাতায়াতের পথ
উন্মুক্ত করার ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।