রাজবাড়ী ০৫:০৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ৮ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাজবাড়ীতে ৪টি হাট-বাজার ইজারায় খাস আদায়ের নামে হরিলুট

রাজবাড়ীতে ৪টি হাট-বাজার ইজারায় খাস আদায়ের নামে হরিলুট

ষ্টাফ রিপোটার ॥

রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে ৪টি হাট-বাজার ইজারায় খাস আদায়ের নামে হরিলুটের অভিযোগ উঠেছে।
বিভিন্ন হাট বাজারে অনিয়মের ও
অতিরিক্ত হারে খাজনা আদায়ের অভিযোগ।
ইচ্ছামতো লোক দিয়ে খাস আদায়, কমিটির সদস্যরা জানে না কিছুই। এতে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব।

হাট/ বাজার স্হাপন ও ব্যবস্থাপনা আইন ২০২৩ গেজেট অনুসারে হাট/ বাজারের প্রবেশ পথে দৃষ্টি নন্দন স্হানে
খাজনার তালিকা টানানোর নিয়ম থাকলেও হাটবাজারে খাজনার কোন তালিকা নেই।সেই সুযোগে ইচ্ছা স্বাধীন খাজনা আদায় করা হয় বিভিন্ন হাটে। অতিরিক্ত খাজনা আদায় কেন্দ্র করে হাটে পন্য ক্রয়-বিক্রয় কারীদের সাথে
আদায়কারীদের গোলযোগের সৃষ্টি হয়।

বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় সুত্রে জানাগেছে, বাংলা ১৪৩১ সনে বালিয়াকান্দি উপজেলার হাট-বাজার ইজারায় রামদিয়া হাটে সরকারী মূল্যে ৩লক্ষ ৭৬হাজার ৮৫৪ টাকা নির্ধারণ করা হলেও কোন ইজারাদার সিডিউল ক্রয় করেনি। বহরপুর হাট ৯৮ লক্ষ ৬৭ হাজার ৫৪০ টাকা সরকারী মূল্যে নির্ধারণ করা হলেও দরপত্রে ৫৭ লক্ষ টাকা দাখিল হয়। বেরুলী হাট ৫লক্ষ ৪০ হাজার ৬০০ টাকা সরকারী মূল্যে নির্ধারণ হলেও দরপত্রে ২লক্ষ ৫০ হাজার টাকা দাখিল করে। নারুয়া হাট ২০লক্ষ ৭৩ হাজার ৯৮৮ টাকা সরকারী মূল্যে নির্ধারণ করা হলেও ১০ লক্ষ টাকার সিডিউল দাখিল করে। ফলে সরকারী কাঙ্খিত মুল্যে না হওয়া হাট-বাজার রামদিয়া হাট, বহরপুর হাট, বেরুলী হাট, নারুয়া হাট খাস আদায় করা হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলেন, বহরপুর বাজারে অতিরিক্ত খাজনা আদায় করা হয়। এ হাটের মতো কোন হাটে খাজনা আদায় করা হয় না। এখানে ক্রেতা-বিক্রেতা দুইজনকেই খাজনা দিতে হয়। প্রতিটি দোকানীকে ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ২শত টাকা পর্যন্ত খাজনা দিতে হয়। এ হাটে পেঁয়াজ, রসুন ও পাট বেশি ওঠে। পেঁয়াজে মনপ্রতি বিক্রেতাকে ৮টাকা ও ক্রেতাকে ২ টাকা করে খাজনা দিতে হয়। পেঁয়াজ হাট থেকেই প্রতিহাটে ৩০ হাজার টাকা থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত খাজনা আদায় হয়। বহরপুর, নারুয়া, বেরুলী ও রামদিয়া বাজারেও একই ভাবে খাস আদায় করা হচ্ছে।
এক সপ্তাহ খাস আদায়কারী তৈয়বুর রহমান বলেন, আমি এক সপ্তাহের দু’টি হাট খাস আদায় করেছি। সরকারী কোষাগারে ১ লক্ষ ৩৯ হাজার টাকা জমা দিয়েছি। আমার আগে যে হাটের খাস আদায় করেন হারুন-অর রশিদ, তিনি প্রথম হাটে ৩০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। এরপর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) কার্যালয়ে প্রকাশ্যে নিলাম অনুষ্ঠিত হলেও সর্বোচ্চ দরদাতাকে না দিয়ে হারুন-অর রশিদকে দিয়ে আদায় করে ইচ্ছামতো টাকা জমা দিচ্ছেন। এতে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। তাকে হাট খাস আদায়ে দিলে প্রতি সপ্তাহে আড়াই লক্ষ টাকা দিবেন বলেও ঘোষণা দেন।
বহরপুর হাট খাস আদায় কমিটির সদস্য বহরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মজিদ শেখ, ইউপি সদস্য শুকুর আলী খাঁ, সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য শিরিনা আক্তার বিউটি বলেন, এ হাট-বাজার খাস আদায় কমিটির সদস্য হিসেবে আছি বিষয়টি শুনেছি। তবে কিভাবে হাট খাস আদায় বা বিক্রি করা হচ্ছে জানি না। এ বিষয়ে কেউ কখনো কোন কথা বলেনি।
বহরপুর বাজার বণিক সমিতির সভাপতি কালাম বিশ্বাস বলেন, ব্যবসায়ী, ক্রেতা-বিক্রেতাদের কাছ থেকে ইচ্ছামতো খাজনা আদায় করছে। তার সিংহ ভাগও সরকারী কোষাগারে জমা পড়ছে না। এতে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
বহরপুর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আব্দুস সোবহান বলেন, ইউএনওর নির্দেশে হারুন-অর রশিদ নামে সাবেক ইজারাদার খাস আদায় করছে। পহেলা বৈশাখ থেকে খাস আদায় শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত ৩০ হাজার ৮শত টাকা থেকে ৮৫ হাজার টাকা পর্যন্ত মোট ৬লক্ষ ৯৪ হাজার ৪০০ টাকা খাস আদায় হয়েছে। খাস আদায় করে যা জমা দেয় তাই জমা প্রদান করা হয়।
বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাবেরী রায় বলেন, আমি কয়েকদিন হলো যোগদান করেছি। বিষয়টি জানতে পারলাম। খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Tag :

রাজবাড়ীতে ৪টি হাট-বাজার ইজারায় খাস আদায়ের নামে হরিলুট

প্রকাশিত : ১০:৩৪:০৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ জুন ২০২৪

রাজবাড়ীতে ৪টি হাট-বাজার ইজারায় খাস আদায়ের নামে হরিলুট

ষ্টাফ রিপোটার ॥

রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে ৪টি হাট-বাজার ইজারায় খাস আদায়ের নামে হরিলুটের অভিযোগ উঠেছে।
বিভিন্ন হাট বাজারে অনিয়মের ও
অতিরিক্ত হারে খাজনা আদায়ের অভিযোগ।
ইচ্ছামতো লোক দিয়ে খাস আদায়, কমিটির সদস্যরা জানে না কিছুই। এতে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব।

হাট/ বাজার স্হাপন ও ব্যবস্থাপনা আইন ২০২৩ গেজেট অনুসারে হাট/ বাজারের প্রবেশ পথে দৃষ্টি নন্দন স্হানে
খাজনার তালিকা টানানোর নিয়ম থাকলেও হাটবাজারে খাজনার কোন তালিকা নেই।সেই সুযোগে ইচ্ছা স্বাধীন খাজনা আদায় করা হয় বিভিন্ন হাটে। অতিরিক্ত খাজনা আদায় কেন্দ্র করে হাটে পন্য ক্রয়-বিক্রয় কারীদের সাথে
আদায়কারীদের গোলযোগের সৃষ্টি হয়।

বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় সুত্রে জানাগেছে, বাংলা ১৪৩১ সনে বালিয়াকান্দি উপজেলার হাট-বাজার ইজারায় রামদিয়া হাটে সরকারী মূল্যে ৩লক্ষ ৭৬হাজার ৮৫৪ টাকা নির্ধারণ করা হলেও কোন ইজারাদার সিডিউল ক্রয় করেনি। বহরপুর হাট ৯৮ লক্ষ ৬৭ হাজার ৫৪০ টাকা সরকারী মূল্যে নির্ধারণ করা হলেও দরপত্রে ৫৭ লক্ষ টাকা দাখিল হয়। বেরুলী হাট ৫লক্ষ ৪০ হাজার ৬০০ টাকা সরকারী মূল্যে নির্ধারণ হলেও দরপত্রে ২লক্ষ ৫০ হাজার টাকা দাখিল করে। নারুয়া হাট ২০লক্ষ ৭৩ হাজার ৯৮৮ টাকা সরকারী মূল্যে নির্ধারণ করা হলেও ১০ লক্ষ টাকার সিডিউল দাখিল করে। ফলে সরকারী কাঙ্খিত মুল্যে না হওয়া হাট-বাজার রামদিয়া হাট, বহরপুর হাট, বেরুলী হাট, নারুয়া হাট খাস আদায় করা হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলেন, বহরপুর বাজারে অতিরিক্ত খাজনা আদায় করা হয়। এ হাটের মতো কোন হাটে খাজনা আদায় করা হয় না। এখানে ক্রেতা-বিক্রেতা দুইজনকেই খাজনা দিতে হয়। প্রতিটি দোকানীকে ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ২শত টাকা পর্যন্ত খাজনা দিতে হয়। এ হাটে পেঁয়াজ, রসুন ও পাট বেশি ওঠে। পেঁয়াজে মনপ্রতি বিক্রেতাকে ৮টাকা ও ক্রেতাকে ২ টাকা করে খাজনা দিতে হয়। পেঁয়াজ হাট থেকেই প্রতিহাটে ৩০ হাজার টাকা থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত খাজনা আদায় হয়। বহরপুর, নারুয়া, বেরুলী ও রামদিয়া বাজারেও একই ভাবে খাস আদায় করা হচ্ছে।
এক সপ্তাহ খাস আদায়কারী তৈয়বুর রহমান বলেন, আমি এক সপ্তাহের দু’টি হাট খাস আদায় করেছি। সরকারী কোষাগারে ১ লক্ষ ৩৯ হাজার টাকা জমা দিয়েছি। আমার আগে যে হাটের খাস আদায় করেন হারুন-অর রশিদ, তিনি প্রথম হাটে ৩০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। এরপর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) কার্যালয়ে প্রকাশ্যে নিলাম অনুষ্ঠিত হলেও সর্বোচ্চ দরদাতাকে না দিয়ে হারুন-অর রশিদকে দিয়ে আদায় করে ইচ্ছামতো টাকা জমা দিচ্ছেন। এতে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। তাকে হাট খাস আদায়ে দিলে প্রতি সপ্তাহে আড়াই লক্ষ টাকা দিবেন বলেও ঘোষণা দেন।
বহরপুর হাট খাস আদায় কমিটির সদস্য বহরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মজিদ শেখ, ইউপি সদস্য শুকুর আলী খাঁ, সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য শিরিনা আক্তার বিউটি বলেন, এ হাট-বাজার খাস আদায় কমিটির সদস্য হিসেবে আছি বিষয়টি শুনেছি। তবে কিভাবে হাট খাস আদায় বা বিক্রি করা হচ্ছে জানি না। এ বিষয়ে কেউ কখনো কোন কথা বলেনি।
বহরপুর বাজার বণিক সমিতির সভাপতি কালাম বিশ্বাস বলেন, ব্যবসায়ী, ক্রেতা-বিক্রেতাদের কাছ থেকে ইচ্ছামতো খাজনা আদায় করছে। তার সিংহ ভাগও সরকারী কোষাগারে জমা পড়ছে না। এতে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
বহরপুর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আব্দুস সোবহান বলেন, ইউএনওর নির্দেশে হারুন-অর রশিদ নামে সাবেক ইজারাদার খাস আদায় করছে। পহেলা বৈশাখ থেকে খাস আদায় শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত ৩০ হাজার ৮শত টাকা থেকে ৮৫ হাজার টাকা পর্যন্ত মোট ৬লক্ষ ৯৪ হাজার ৪০০ টাকা খাস আদায় হয়েছে। খাস আদায় করে যা জমা দেয় তাই জমা প্রদান করা হয়।
বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাবেরী রায় বলেন, আমি কয়েকদিন হলো যোগদান করেছি। বিষয়টি জানতে পারলাম। খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।