
জীবন্ত পোস্টার নূর হোসেন
বাংলাদেশে স্বৈরাচারবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের এক অগ্নি পুরুষ নূর হোসেন।যিনি ১৯৮৭ সালের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জিপিওর জিরো পয়েন্ট থেকে বুকে স্বৈরাতন্ত্র নিপাত গনতন্ত্র মুক্তি পাক বুকে পিঠে স্লোগানটি লিখে রাজপথে নামে। শ্লোগানটি উচ্চারণ করতেই পুলিশের গুলিতে লুটিয়ে পড়ে রাজপথে। বুকে লেখা গনতন্ত্র রক্তে ভেজে,ভিজে যায় স্বৈরাতন্ত্রও। ঐদিন নূর হোসেন ছাড়াও আরো দুজন শহীদ হন ওপর দুই জন হলেন যুবলীগের নুরুল হুদা বাবুল এবং আমিনুল হুদা টিটো। এই পবিত্র রক্তের পিচ্ছিল পথে হাটতে হাটতে পতন হয় স্বৈরশাসনের মসনদ। শহীদ নূর হোসেনের স্বরনে শহীদ স্থল জিপিও জিরো পয়েন্ট কে নূর “হোসেন স্কয়ার” হিসেবে ঘোষণা করা হয় । নুর হোসেনের নামে ডাক টিকিট প্রকাশ করে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। নভেম্বরের দশ তারিখে পালন করা হয় শহীদ নুর হোসেন দিবস হিসেবে।
১৯৯৬ সালে নুরহোসেন দিবশে তাঁর মৃত্যুর জন্য জাতীয় সংসদে আনুষ্ঠানিক ভাবে ক্ষমাপ্রার্থনা করেন জাতীয় পার্টির প্রধান,এইচ এম,এরশাদ।
নূর হোসেনরা এভাবেই যুগে যুগে মুক্তির মিছিলে গর্জে উঠে। হয়ে যায় ইতিহাসের গর্বিত অংশ। নত হয় ঘাতকের মস্তক।তারপরও কথা থাকে যদি দেখা যায় নুর হোসেনদের মত কোটি মানুষের ভাগ্য ফেরেনা। দুর্নীতিবাজদের ভাগ্য ফেরে তখন প্রয়োজন পড়ে আরেক যুদ্ধ আরেক সংগ্রাম।শোষণ বঞ্চনা অর্থনৈতিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে। প্রতিটি সংগ্রামেই বিজয়ী করে আনতে হবে নুর হোসেনদের। নুর হোসেনদের স্বপ্নের উপর নির্মিত হবে শোষণ বঞ্চনা মুক্ত সাম্যের শান্তির সভ্য সমাজ। এ রক্ত অমর একুশের শহীদ, সালাম,রফিক শফিকের রক্তের মতই মূল্যবান।
এইসব আত্মদানকারী শহীদদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা আমাদের কর্তব্য।আগামী দিনের প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে দুর্নীতি, বৈষম্য,লুন্ঠন,দমন এর বিরুদ্ধে গর্জে উঠা নুর হোসেনরা আমাদের অনুপ্রেরনা।
নূর হোসেন বাড়ি পিরোজপুর জেলায় মঠবাড়িয়া উপজেলার ঝাটিবুনিয়াগ্রামে।১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের পর স্বপরিবারে বাবা অটোরিকশা চালক মুজিবুর রহমান ঢাকায় চলে আসেন।অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ার পর আর্থিক সংকটের কারণে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায় নুর হোসেনের । ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন নুর হোসেন। যুক্ত হন ঢাকাজেলা
আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে। জেলা মোটর চালক লীগের প্রচার সম্পাদক ছিলেন তিনি। অপশাসন,জুলুম,নির্যাতনের,বিরুদ্ধে মানুষের মুক্তির আন্দোলনের আত্মদানকারী নূর হোসেনদের শহীদ দিবশে শুধু আমরা মুখে এবং পোস্টারে সেমিনারে,বক্তৃতায়,আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে দায়সারা দায়িত্ব শেষ করলে চলবে না। আমাদের উচিত নুর হোসেন সহ সকল শহীদদের যে আকাঙ্ক্ষা,তাদের ইচ্ছা, স্বপ্নকে পূরণে কাজ করা। শহীদ পরিবারের পুনর্বাসনের ব্যবস্হা করা।তা হলেই হবে তাদের প্রতি যথার্থ সম্মান। শহীদদের আত্মাও শান্তি পাবে। জাতি হিসেবে আমরা হয়ে উঠব মর্যাদাবান। দুর্নীতিবাজ, স্বৈরাচার জুলুম, নির্যাতনের,বিরুদ্ধে রক্ত ঢেলে দেওয়া নূর হোসেন তোমার প্রতি শ্রদ্ধা ও সালাম!
মহান আল্লাহ্ যেন শহীদ নুর হোসেনকে জান্নাত নসিব করেন।
মোঃআতাউর রহমান
কলাম লেখক