
প্রায় দুশ বছরের ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রামে ভারতীয় রাজনীতিবিদদের সাম্প্রদায়িক বিভাজন দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভাগ হলো ভারত পাকিস্তান নামের দুটি রাষ্ট্র। হিন্দু অধ্যুষিত অঞ্চল নিয়ে ভারত। মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চল নিয়ে পাকিস্তান। পাকিস্তান হলো দু অংশ নিয়ে।পশ্চিম পাকিস্তান ও পূর্ব পাকিস্তান। বাঙালিরা শুরুতেই ক্ষমতা হারালো।সংখ্যা গরিষ্ঠ হওয়া সত্বেও সকল নিয়ন্ত্রণ পশ্চিম পাকিস্তানের হাতে চলে গেল। করাচিতে হলো রাজধানী। এ যেন একটা উপনিবেশ থেকে অন্য আর একটা উপনিবেশের হাতে পড়া। ১৯৪৮ এর ২৩ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান গণপরিষদে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা ইংরেজিকে দ্বিতীয় ভাষায় মর্যাদা দিয়ে প্রস্তাব পাশ হয়। গনপরিষদ সদস্য ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত বাংলাকেও এতে যুক্ত করতে প্রস্তাব দিলে তা নাকচ হয়ে যায়। পাকিস্তান গণপরিষদের এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র ভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন হয়।১৯৪৮ এ ২১ মার্চ রেসকোর্সে এরং মার্চ ২৪ শে মার্চ কার্জন হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ urdu and only Urdu shall be the state language of Pakistan.ঘোষনা দিলে উপস্থিত ছাত্ররা এর প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। প্রতিবাদের ঝড় বয়ে যায় দেশের সর্বত্র।একুশের ডিসেম্বর সাধারণ ধর্মঘট বিক্ষোভের সিদ্ধান্ত হয়। ঐদিন সরকার অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে।এতে ফুসে উঠে ছাত্র জনতা। ১৪৪ ধারার বিরুদ্ধে গঠন করা হয় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ। ২০ ফ্রেরুয়ারী রাতে ১৪৪ধারা ভঙ্গের সিদ্ধান্ত হয়। ভাষার যুদ্ধে একুশ ফ্রেরুয়ারীতে রফিক,শফিক, জব্বার,সালাম বরকত শহীদ হন। দেশ জুড়ে গণবিস্ফোরণ ছড়িয়ে পড়ে বাধ্য হয়ে শাসক গোষ্ঠী ১৯৫৪ সালে ৭ই মে বাংলা ভাষাকে স্বীকৃতি দেয়। ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের প্রথম সংবিধান প্রনিত হলে ২১৪ নং অনুচ্ছেদে বাংলাকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেয়। বাহান্ন থেকেই একুশ ফ্রেরুয়ারী শহীদ দিবস পালিত হয়ে আসছিল। ১৯৮৭ সালে সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রচলনে আইন জারি করা হয়। ১৭ নভেম্বর ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো ফ্রান্সে ৩০তম অধিবেশনে এই দিবস টিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার মর্যাদা দেয়। যা বিশ্বে বাংলা ভাষা ও বাঙ্গালী জাতি হিসেবে বিরল মর্যাদার। ২০১০ সালে ২১ অক্টোবর বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের সাধারণত পরিষদে ৬৫ তম অধিবেশনে একুশে ফেব্রুয়ারি কে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সর্বসম্মোতি ক্রমে পাশ করে। ২০২১ সালে বিশ্বের ১৯২ টি দেশ এই দিবস টি মর্যাদা পূর্ণ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে পালন করছে।১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন,’৬৬ ছয় দফা আন্দোলন, ৬৯ গণ অভ্যুত্থান ‘৭০ সাধারণ নির্বাচন ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা।একুশের ভাষা আন্দোলনের ভিত্তির উপর দাড়িয়েই অর্জিত। আমরা জয়ী হতে পারি। এই আত্মবিশ্বাস আমাদের অন্তরের ভীত প্রথিত করেছে মাতৃ ভাষার যুদ্ধ জয়।
বাঙ্গালী জাতি হিসেবে আমাদের আছে সমৃদ্ধইতিহাস,সংস্কৃতি। আছে যোগ্য নেতৃত্ব শহীদ সোহরাওয়ার্দী,একেএম ফজলুল হক,মাওলানা ভাসানী,বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান,যাদের ধারাবাহিকতা সংগ্রাম স্বপ্ন,ভাষা শহীদ ছালাম, রফিক,শফিকের মত প্রতাবাদি সোনার ছেলেদের সাহস আত্মদান। পবিত্র রক্তের স্রোত ও সংগ্রাম সাহসের পথ দিয়ে। গোটা জাতির ঐক্য। লাখো শহীদের বিনিময়ে পেয়েছি আমরা মহান স্বাধীনতা। সকল শহীদদের কাছে আমরা চির কৃতজ্ঞ। আমরা বীরের জাতি আমরা ভাষা জয় এবং দেশ জয়ের জাতি। এ কথা আমরা ভাবতে ভাবতে শক্তি অর্জন করতে পারি।সমাজের,নেতিবাচক,রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ধর্মীয় সংস্কৃতিরঅপচর্চা,কথার সাথে কাজের বৈপরীত্যে হতাশা বাড়ছে।প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির ঘাটতিতে মানুষ হতাশ হয়।এ কথা মিথ্যে নয়। অন্যায় অনৈতিক দুর্নীতির মাধ্যমে একটা শ্রেণির অর্থ সম্পদ লুন্ঠন ও বিদেশে পাচার, সাধারন জনতার উদ্বেগ ও হতাশার কারনও বটে। একটা জাতির শিক্ষা, রাজনীতি, ধর্ম ও সংস্কৃতি এসব উৎস থেকে শিক্ষা অর্জন করে থাকে। যদি তা সর্বমঙ্গলের হয়।জাতি তা যদি প্রতিনিয়ত চর্চা করে। দেখেতে পায় তবে জাতি আশাবাদী হয়। হতাশার অন্ধকার থেকে আলোর পথে হাটে যোগ্য মেধাবী,গুণী, মানুষের পূনর্বাসন না হয়ে, অযোগ্য লোভী, মেধাহীন মানুষের দখল বাড়ে। সমাজের মানুষের মধ্যে হতাশা বাড়ে। রাষ্ট্রের সুষ্ঠু প্রক্রিয়া বিঘ্নিত করে অসুস্থ ধারা চালু হয়।পেশী পয়সা পশুত্ববাদিত্ত্বের আধিপত্য বাড়ে। ন্যায় বিচার শান্তি প্রগতি সাম্যের পরিবর্তে অশান্তি অস্বস্তি হতাশা বাড়ে। যাদের দিকে তাকিয়ে মানুষ আশান্বিত হবে তারা যখন অবমুল্যায়িত, নীরব নিশ্চুপ হতাশ হয়। কথা আর কাজের বৈপরীত্য ঘটলে মানুষ তখন হতাশ হয়। সাধারণের মধ্যে হতাশা ছড়ায়। যোগ্যতার বাছাই প্রক্রিয়া তা যদি অস্বচ্ছ হয়।মানবিক নীতি বোধ আদর্শের চেয়ে অর্থ যদি হয় সকল ক্ষেত্রের যোগ্যতার মাপকাঠি।অর্থের দাস হয়ে উঠবে প্রভু।দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন নিশ্চিত হলেই মানুষ হয়ে উঠবে সক্রিয় আশাবাদী। কোনো ভাবে কোথাও যেন দুষ্টের আশ্রয় প্রস্রয় না ঘঠে।সে ব্যপারে সকল মহল সচেতন হতে হবে। পৃথিবীতে আমরাই এক মাত্র ভাষা জয়ের যুদ্ধে জয়ী জাতি।মাত্র নয় মাসে দেশ জয়ের জাতি। ঐক্যের জাতি আমরাই সমৃদ্ধি মর্যাদাবান জাতি হয়ে উঠব একদিন।আমাদের নেতৃত্বের কাছে জাতির প্রত্যাশা। অনুপ্রাণিত করা শুধু কথায় নয়, বাস্তবে দেখাতে হবে তার প্রমাণ। তবেই আমাদের মাঝে হতাশা দুর হবে।যারা দুর্বৃত্ত যারা সমাজকে নানাভাবে ক্ষতি করে ধর্মের নামে, কিংবা রাজনীতির আবরনে। ব্যবসা সেবা দেওয়ার নামে প্রতারক, ধান্দাবাজ,তাদেরকে বর্জন দমন করতে হবে। সমাজে দুর্বৃত্তদের কর্মকান্ডের প্রতিবাদ থাকতে হবে। প্রতিরোধ করতে হবে।যেটা ছিল একুশের মুল চেতনা।অন্যায়ে বিরুদ্ধে দাড়িয়ে প্রতিরোধযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দিতে হবে সাধারণতের মাঝে। ঘটাতে হবে গণসচেতনতা,
গণজাগরণ রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ধর্মীয় মুল্যবোধের জাগরন ঘটাতে হবে। সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্ন জাগাতে হবে জাতির মাঝে।”দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন চর্চাই হোক সংস্কৃতির অঙ্গীকার ” তবেই জাতির মুক্তি সফলতা আসবে। জাতি হবে হতাশা মুক্ত আশাবাদী । স্বাধীনতার প্রকৃত স্বপ্ন সুফল প্রতিষ্ঠিত হবে।ভাষা শহীদ সহ সকল শহীদদের আত্মত্যাগ সার্থক হবে।শান্তি পাবে তাঁদের আত্মা জানানো হবে প্রকৃত শ্রদ্ধাঞ্জলি । আধার পেরিয়ে আলো আসবেই। মাতৃ ভাষা বাংলা জয়ের জাতি হিসেবে এ প্রত্যাশা আমারা করতেই পারি। এ স্বপ্ন আমরা দেখতেই পারি।
মোঃ আতাউর রহমান,
লেখক কবি ও কলামিষ্ট