
(রাজু আহমেদ) স্টাফ রিপোর্টার
দেশের দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম যৌনপল্লীর অবস্থান রাজবাড়ী জেলার দৌলতদিয়ায়। জীবিকার প্রয়োজনে সামাজিকভাবে ঘৃণ্য এই যৌনপল্লীর পেশায় এখানে যুক্ত আছেন হাজারেরও বেশি নারী। পদ্মা সেতুর কারণে দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর নারীরা বর্তমানে মানবেতর জীবন যাপন করছেন,সরজমিনে যৌনপল্লী ঘুরে জানা যায়।
আজ থেকে ৩৫ বছর আগে ১৯৮৮ সালে গড়ে ওঠে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া যৌনপল্লী। তবে এর বহুকাল আগ থেকে এ স্থানে পতিতাবৃত্তির সঙ্গে জড়িত অনেকে বসবাস করতেন, বেআইনিভাবে চালাতেন পতিতালয়।
যমুনা ও পদ্মার মিলনস্থল হিসেবে দৌলতদিয়া বিখ্যাত ছিলো ফেরিঘাটের জন্য। দেশের পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলা গুলো থেকে রাজধানী ও অন্যান্য জেলায় পণ্য পরিবহনের ট্রাক গুলো পার হতো দৌলতদিয়া ফেরিঘাট দিয়ে। জ্যাম,গাড়ির চাপ ও অন্যান্য কারণে ট্রাক গুলো ফেরি পার হতে কখনও কখনও অপেক্ষা করতে হতো ২ থেকে ৩ দিন। তখন সময় কাটানোর জন্য ট্রাক ড্রাইভারসহ অন্যরা দৌলতদিয়ার নারীদের সান্নিধ্যে সময় পার করতেন। রাত দিন চব্বিশ ঘণ্টাই জম জমাট ছিল দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর ভেতর-বাইর।
তবে বর্তমান সময় দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে ভালো নেই এ পেশায় জড়িত নারীরা। বলা যায়,খদ্দেরের অভাবে জীবিকা সংকটে মানবেতর জীবন যাপন পার করছেন এখানকার যৌনকর্মীরা। পদ্মা সেতুর উদ্বোধন এ পেশার মানুষকে আরও সমস্যাগ্রস্ত করে তোলো। পদ্মা সেতুর কারণে দৌলতদিয়া ফেরিঘাট ব্যবহার প্রয়োজনহীন হয়ে পড়ে। এই স্থানে মানুষের আনাগোনা কমতে কমতে এখন প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে যৌনপল্লীর অলিতে গলিতে এখন কান পাতলে শোনা যায় শুধুই হাহাকার।
দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে বসবাস প্রায় ৫ হাজার মানুষের। এর মধ্যে যৌনকর্মীর সংখ্যা ১ হাজার ৩০০; যাদের মধ্যে ১ হাজার ৫০ জন নিয়মিত। বাকিরা অনিয়মিত। এখানে বাড়ি রয়েছে ৩০০টির মতো। এ ছাড়া পল্লীর শিশুর সংখ্যা ৬০০। তবে এ পল্লীতে সবচেয়ে কষ্টের সময় পার করছেন পঞ্চাশোর্ধ্ব নারীরা। এখানে বর্তমানে ৩৫০ জন বয়স্ক নারী রয়েছেন।
এ বিষয়, দৈনিক রাজবাড়ী সময় কে জানান, এখানে এখন আর সেই আগের মতো নেই মানুষের আনাগোনা। পল্লীর অলিগলিতে শুনসান নীরবতা। একটা সময় পল্লীর প্রধান গলিতে সারা দিনই ভিড় লেগে থাকত, সেই গলিও এখন অনেকটাই ফাঁকা। খদ্দেরের আশায় নারীরা সাজাগোজ করে ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। তবে এখন আর খদ্দের সেভাবে আসে না বলে জানান বেশ কয়েকজন যৌনকর্মী।
কথা হয় পঞ্চাশোর্ধ্ব ফাতেমার (ছদ্মনাম) সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘দিন-তারিখ মনে নেই কবে আসছিলাম। শুধু মনে আছে, যেদিন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা হয় সেদিন এখানে আমার আসা। আমার বাড়ি ঝিনাইদহ। ৩ সন্তান রয়েছে। তারা এই জগৎ থেকে অনেক দূরে। আমি একাই পল্লীতে আছি। আমার বয়স ৫০ বছরের বেশি। পল্লীর ভেতরে মানুষের বাড়িতে কাজ করে খাই। এখন কাজ পাই না। এখান থেকে চলে যেতে চাই।’
কথা হয় ৫৭ বছর বয়সি ছন্দার (ছদ্মনাম) সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘পল্লীর অবস্থা এক সময় বেশ ভালো ছিলো। বর্তমানে খুব খারাপ। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর দৌলতদিয়া ফেরিঘাট ও লঞ্চঘাটে লোকজন আসে না। সবাই পদ্মা সেতু হয়েই চলাচল করে। আমাদের হাহাকার শুরু হয়েছে। আমরা এখন চলে যেতে চাই। কিন্তু আমাদের তো যাওয়ার মতো কোনো পথ নেই।