
রাজবাড়ী শহর থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে রামকান্তপুর ইউনিয়নে রামকান্তপুর গ্রাম।জেলা সদর থেকে চার পাঁচ কিলো,আর সদরউপজেলা থেকে তিন কিলোদূরত্বে রাবেয়া কাদের ফাউন্ডেশন।
পাকা রাস্তা রিক্সা অটোতে প্রাইভেট মাইক্রোতে অনায়াসে যাওয়া যায়। রাস্তার দু পাশ দিয়ে বাড়িঘর। কিছু পাকা, আধা পাকা,ও কাচা মিলিয়ে। আম জাম বট পাকুর খেজুর কাঠাল মেহগনি বাশ বাগান। ফসলের সবুজ মাঠও চোখে পড়বে। ছবির মত পরিচ্ছন্ন এক গ্রাম। রামকান্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এর পাশেই দক্ষিণে এক মিনিটের পথ। রাস্তায় দুপাশে অনেক গুলো দোকান। হাতের বামে জামে মসজিদ। একটু এগুতেই রাবেয়া কাদের ফাউন্ডেশন ও রাবেয়া কাদের স্মৃতি পাঠাগার। পরিপাটি সাজানো গোছানো নানান রঙে রঙিন ফাউন্ডেশন ও পাঠাগারটি। তার পিছনে দৃষ্টি নন্দন, প্রসস্ত আঙিনা সহ দ্বিতল বাড়ি। বুনিয়াদি পরিবারের নাম মোল্লাবাড়ী। আশেপাশের অনেক দুরের মানুষ এক নামে চেনে। পরিবারটির উচ্চ শিক্ষিত সফল অনেক সদস্য দেশে ও বিদেশে থেকে পরিবারের মর্যাদা বৃদ্ধি করে যাচ্ছে,সমাজে আলো ছড়াচ্ছে। শিক্ষা সংস্কৃতি সমাজ সেবার মতো নানা কর্মকান্ডের মাধ্যম। কিছু মানুষের মানুষ,হয়ে ওঠার নেশা থাকে ।থাকে সমাজ ও সভ্যতাকে এগিয়ে নেয়ার অদম্য বাসনা। কতিপয় মানুষের মধ্যে থাকে, মানুষ হওয়ার নেশা,মানুষ জাগানোর,সমাজ পরিবর্তনের নেশা।
মানুষকে,সুন্দর প্রকৃতিকে উত্তর পুরুষকে ভালোবাসাতে পারে বলে তারা অসাধারণ। পূর্ব পুরুষের নামে অন্তরের জমিনে পলি মাটির মত কর্ষনে তারা সৃষ্টি করতে চায় নতুন সম্ভাবনা। সুকান্তের কবিতার মত বলতে পারে এ বিশ্বকে এ শিশুর বাস যোগ্য করে যাবো আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার! এমন একজন স্বপ্ন জাগানিয়া মানুষ মোঃ নজরুল ইসলাম । ভোগে নয় ত্যাগের উন্মাদনা আছে। আছে দেয়ার প্রচন্ড ইচ্ছা। বিবেক ও সমাজের দায়বদ্ধতার তাগিদ প্রচন্ডভাবে নাড়া দেয় বলেই ।অন্যের জন্য আগামীর জন্য।আগামী দিনের মানুষের জন্য। আগামী প্রজন্মের জন্য। একটি সুন্দর সমাজ তার স্বপ্ন কল্প জুড়ে। ছোট বেলা থেকেই দেখতেন এমন স্বপ্ন । তাই তার নিরন্তর প্রচেষ্টা ছুটে চলা। একটি সুন্দর সমাজ, একটি দেশ।যা হবে সবার জন্য সমান। সেই সমাজ বিনির্মাণে যত্মশীল হাতে। চিন্তা চেতনায় সমৃদ্ধ মানুষ গড়তে। স্বপ্নবাজ কিছু মানুষকে সাথে নিয়ে যাত্রা শুরু করেন মোঃ নজরুল ইসলাম। তিনি ২০১৮ সালে মা মাবার নামে গড়ে তুলেছেন রাবেয়া কাদের ফাউন্ডেশন।এই ফাউন্ডেশন এর মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত অনঅগ্রসর জনগোষ্ঠীর সাহায্য সহযোগিতায় কাজ করে যাচ্ছেন নিরলসভাবে । সুবিধা বঞ্চিত গ্রামের মানুষকে এগিয়ে নিতে চালু করেছেন শিক্ষাবৃত্তি, করোনাকালীন সংকটে খাদ্য বিতরণ,ঈদআনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে খাদ্য, নতুন পোশাক ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণ,স্বাস্থ্য সেবার জন্য মেডিকেল ক্যাম্প, শীতার্তদের শীতবস্ত্র প্রদান সহ নানাভাবে সেবা প্রদান করে ইতিমধ্যে রাজবাড়ীতে রাবেয়া কাদের ফাউন্ডেশন সুপরিচিত একটি নাম। সচেতন সমাজ গঠনে যথেষ্ট সুনামের সাথে কাজ করে আসছে ।বিভিন্ন জাতীয় দিবস পালনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে সচেতন সমাজ বিনির্মাণে ভূমিকা পালন করে আসছে। ২০২২ সালে গড়ে তুলেছেন রাবেয়া কাদের স্মৃতি পাঠাগার। যেখানে প্রচুর বিভিন্ন বয়সী মানুষের জ্ঞানার্জনের জন্য আছে নানা ধরনের ৫ হাজারের মতো গ্রন্থ ইতিমধ্যে সংগৃহীত হয়েছে। এখানে নতুন প্রজন্মদের জন্য গান,আবৃত্তি, চিত্রাংকন,শেখানোর জন্য নিয়মিত স্বনামধন্য সঙ্গীত শিক্ষক এবং চিত্রাংকন শিল্পী নিয়মিত ক্লাস নিয়ে থাকেন।এখানে মাঝে মধ্যে দেশ বরেণ্য ও স্থানীয় চিত্রশিল্পী সংগীত শিল্পী আবৃত্তি শিল্পী নিয়ে বিভিন্ন কর্মশালা,অনুষ্ঠান করা হয়। রাবেয়া কাদের ফাউন্ডেশন এসব অনুষ্ঠানে রাজবাড়ীর সংস্কৃতি পরিমণ্ডল সকল প্রাজ্ঞজন বীর মুক্তিযোদ্ধা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিতি থাকেন। তাদের আলোচনা পরামর্শ ফাউন্ডেশন গুরুত্ব ভাবমূর্তি বৃদ্ধিতে প্রেরণা শক্তি হিসেবে কাজ করে। মাঝে মধ্যে চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি, রচনা, কুইজ, ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করে নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রেরণা জোগানো হয়। বর্তমান নতুন প্রজন্মকে মোবাইল আসক্তি থেকে মুক্ত রাখার জন্য। জ্ঞানমুখী সংস্কৃতির চর্চা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে সচেতন অভিজ্ঞ মহল মনে করে।
সম্প্রতি গত ১৫ই ডিসেম্বর রাবেয়া কাদের ফাউন্ডেশন ও রাবেয়া কাদের স্মৃতি পাঠাগার এর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল জাঁকজমকপূর্ণ পাঠাগার উৎসব২০২৩। উৎসব আয়োজনে ছিল অংকন আবৃত্তি ও কুইজ প্রতিযোগিতা আলোচনা। ফাউন্ডেশনের ইতিপূর্বের সমাজ সেবা সমাজ উন্নয়নমূলক বিভিন্ন কর্মকান্ডের প্রামাণ্য চিত্র ও বিজয় দিবস উপলক্ষে দিপু নাম্বার টু চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়।
উপস্থিত ছিলেন বেশ কজন বীরমুক্তিযোদ্ধা, রাজবাড়ী ১ আসনের মাননীয় এমপি, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী এডভোকেট ইমদাদুল হক বিশ্বাস, ভারপ্রাপ্ত উপজেলা চেয়ারম্যান রাকিবুল হাসান পিয়াল,সহ রাজবাড়ীর সংস্কৃতি অঙ্গনের নেতৃবৃন্দ, কবি, সাহিত্যিক,সংগীতশিল্পী চিত্রশিল্পী, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি সহ সকল স্তরের মানুষ। যাদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠান হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত।এবারের বিশেষ আকর্ষণ ছিল পাঠাগার উৎসব ২০২৩ প্রকাশ প্রকাশনা স্বপ্নালোক সংখ্যা প্রকাশ। যে সংখ্যায় প্রবন্ধ, কবিতা,গল্প,নাটক, পাঠাগারের শিক্ষার্থী ও অভিভাবক লেখা ও আঁকা ও ছবি এবং রাজবাড়ী জেলাও জেলার বাইরের গুণী লেখকদের লেখা নিয়ে ছয় শত সংখ্যা প্রকাশিত হয়। যা দারুণ ভাবে পাঠক মহলে সমাদৃত হয়। পাঠাগারটি দেখার জন্য শহর থেকে সংস্কৃতিবান গুণী জ্ঞান পিপাসু পাঠক শ্রেণির অনেকেই দেখতে আসেন।সবার জন্য খোলা থাকে বিকাল তিটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত। এমন মহান উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আলোকিত হোক প্রতিটি গ্রাম শহরজনপদ। সচেতন শিক্ষিত উন্নত সমৃদ্ধ মর্যাদাবান জাতি হিসেবে বাঙ্গালী জাতি বিশ্বের বুকে পরিচিতি পাবে এটাই সবার প্রত্যাশা।