
জেলা প্রতিনিধি।।
মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য ঈদের আগের দিন ঢাকায় গিয়ে ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন করেন মিলন। গত রোববার (৩০ এপ্রিল) ফিঙ্গার প্রিন্টও দিয়েছিলেন। দু’দিন পর কিছু কাগজপত্র ঠিক করতে আবারও ঢাকায় যাওয়ার কথা ছিল তার। স্বপ্ন ছিল মালয়েশিয়ায় গিয়ে টাকা উপার্জন করে মেয়েকে ডাক্তার বানাবেন। কিন্তু তার স্বপ্ন, স্বপ্নই রয়ে গেল’। এভাবেই কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলছিলেন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত মিলন মন্ডলের (৩৫) স্ত্রী লিমা বেগম ।
সোমবার (১ মে) সকাল সোয়া ৯টার দিকে রাজবাড়ী সদর উপজেলার গোয়ালন্দ মোড় এলাকায় মাহেন্দ্র উল্টে চাপা পড়ে মারা যায় মিলন। তিনি রাজবাড়ী সদর উপজেলার শহীদ ওহাবপুর ইউনিয়নের রূপপুর গ্রামের মৃত কাদের মন্ডলের ছেলে।
মিলনের আড়াই বছর বয়সী এক ছেলে ও ১১ বছর বয়সী এক মেয়ে রয়েছে। মেয়ে হাসিবা আক্তার মাহিয়া গোয়ালন্দ মোড় আইডিয়াল স্কুলের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী।
সরেজমিনে মিলনের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, ছেলে রুমান মন্ডল ও মেয়ে মাহিয়াকে কোলে বসিয়ে বুক ফাঁটা চিৎকারে বিলাপ করছেন মিলনের স্ত্রী লিমা বেগম।
ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, ‘মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য ঈদের আগের দিন ঢাকায় গিয়ে ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন করেন মিলন। রোববার (৩০ এপ্রিল) ফিঙ্গার প্রিন্টও দেন। দু’দিন পর কিছু কাগজপত্র ঠিক করতে আবারও ঢাকায় যাওয়ার কথা ছিল তার। স্বপ্ন ছিল মালয়েশিয়ায় গিয়ে টাকা উপার্জন করে মেয়েকে ডাক্তার বানাবেন। কিন্তু তার স্বপ্ন, স্বপ্নই রয়ে গেল।’
লিমা আরো বলেন, আমার বাড়িতে খাবারের চাল ছিল না। গতকাল সন্ধ্যার পর দুই কেজি চাল এনে আমাকে দিয়ে রান্না করতে বলেন। আজ বেশি করে চাল আনার কথা ছিল। আমার সব শেষে হয়ে গেল। কে চালাবে আমার সংসার। ছেলে মেয়ে নিয়ে আমি কীভাবে চলবো।
মিলনের ফুপাতো ভাই হোসেন আলী বলেন, সোমবার সকাল সোয়া ৯টার দিকে মিলন আটজন যাত্রীসহ গাড়ি নিয়ে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক দিয়ে গোয়ালন্দ মোড় থেকে দৌলতদিয়া ঘাটে যাচ্ছিলেন। রাজ্জাকের মাছের আড়তের সামনে গেলে গাড়ির সামনে দিয়ে একটি কুকুর দৌড় দেয়। কুকুর বাঁচাতে গিয়ে তিনি গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারালে গাড়িটি উল্টে গিয়ে মিলন নিচে চাপা পড়ে মাথায় ও বুকে গুরুতর আঘাত পায়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তবে অন্য যাত্রীদের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি।
কাঁদতে কাঁদতে মিলনের মেয়ে হাসিবা আক্তার মাহিয়া বলে, বাবার স্বপ্ন ছিল বিদেশ গিয়ে টাকা পাঠিয়ে আমাকে ডাক্তার বানাবেন। আমাদের সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল। আজ আমাদের বাড়িতে চাল নেই। না খেয়ে থাকতে হবে আমাদের।
এ বিষয়ে আহলাদিপুর হাইওয়ে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জিল্লুর রহমান জানান, মিলনের মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে পরবর্তী আইনি কার্যক্রম চলমান