
আগুনে পোড়া নিশ্ব পরিবারের মাঝে ঘর স্থাপনে বিশিষ্ট ব্যবসায়ীর উদ্যোগ।
মো. সাজ্জাদ হোসেন
গোয়ালন্দ(রাজবাড়ী) প্রতিনিধি
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার গোয়ালন্দ পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ড কাইমদ্দিন প্রামানিক পাড়ায় আগুনে পোড়া নিশ্ব তিনটি পরিবারের পাশে সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন গোয়ালন্দের এক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী গোয়ালন্দ পৌর ৩ নং ওয়ার্ড নছর উদ্দিন সরদার পাড়ার বাসিন্দা মো. সিরাজুল হক। পরিবার তিনটির জন্য ঘর তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি।
সোমবার (১ এপ্রিল) সকাল ১০ টায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গোয়ালন্দ পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ড কাইমদ্দিন প্রামানিক পাড়ায় আগুনে পোড়া নিশ্ব তিনটি পরিবারের বাড়িতে ঘর নির্মাণকাজ চলছে। চৌচালা ঘর নির্মাণের যাবতীয় সরঞ্জাম নিয়ে হাজির হয়েছেন সেই মানবিক ব্যবসায়ী সিরাজুল হক। নিশ্ব পরিবার তিনটির ঘর নির্মাণকাজ, নিজে উপস্থিত থেকে পর্যবেক্ষণ করছেন তিনি। এমসময় উপস্থিত ছিলেন গোয়ালন্দ পৌরসভার প্যানেল মেয়র, ৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নাসির উদ্দিন রনি, গোয়ালন্দ বাজারের ব্যবসায়ী মো. লাল মিয়াসহ বিভিন্ন মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।
ভুক্তভোগী ফারুক শেখের পরিবারের উপস্থিতিতে ঘর নির্মাণ কাজের শুভ উদ্বোধন করেন গোয়ালন্দ পৌর প্যানেল মেয়র, ৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নাসির উদ্দিন রনি ও পৌর ৩ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা, ঘর নির্মাণ কাজের দাতা, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. সিরাজুল হক।
উল্লেখ্য, গত ৬ এপ্রিল বৃহস্পতিবার চুলার সৃষ্ট আগুনে তিনটি বসত ও চারটি রান্না ঘরসহ মোট সাতটি ঘর পুড়ে যায়। সেদিন থেকেই মোটামুটি পরিবার তিনটি খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছিলো।
ঘর পেয়ে ভুক্তভোগী পরিবারের অন্যতম সদস্য মো. ফারুক শেখ বলেন, আমরা দিনমজুর মানুষ। দিন আনি, দিনে খাই। হঠাৎ আগুনে বসত বাড়ি পুড়ে নিশ্ব হয়ে যায়। সর্বশেষ থাকার জায়গা হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ি। সেদিন আমাদের ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নাসির উদ্দিন রনি ভাই নিজে এসে তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের এক মাসের খাদ্য সহায়তা করে এবং একটি ঘর পাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। হঠাৎ একদিন কমিশনার ভাই ব্যবসায়ী সিরাজ ভাইয়ের কাছে নিয়ে গেলে তিনি একটি চৌচালা ঘর তৈরির প্রতিশ্রুতি দেন। আজ একটি চৌচালা ঘর তৈরির যাবতীয় সরঞ্জাম এবং ঘর তৈরির শ্রমিকের মজুরিসহ প্রায় দুইলক্ষ টাকার সামগ্রী বুঝিয়ে দিয়েছেন। আমরা পরিবারের সদস্যরা সিরাজ ভাইয়ের কাছে চির কৃতজ্ঞ।
ঘর নির্মাণ কাজের উদ্বোধক, পৌর ৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সির নাসির উদ্দিন রনি বলেন, পৌর ৯ নং ওয়ার্ড আমার নিজের এলাকা। আগুন লাগার খবর শোনা মাত্রই ফায়ার সার্ভিস স্টেশন খবর দিলে তারা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে কিন্তু ততক্ষণে বসত বাড়ির সবগুলো ঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। তৎক্ষণাৎ পরিবার তিনটিকে এক মাসের খাবারের ব্যবস্থা করি। পরের দিন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, পৌর মেয়রকে নিয়ে ভুক্তভোগী পরিবারের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে নগত সাহায্য হাতে তুলে দেয় এবং সরকারি ভাবে কিছু টিনের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। আশা করি অচিরেই এসব পেয়ে যাবে পরিবার তিনটি। সরকারি প্রসেসিং একটু দেরি হওয়াতে পরিবারের অসহায়ত্ত্বের কথা ব্যবসায়ী সিরাজ ভাইকে বললে তিনি ঘর তৈরির প্রতিশ্রুতি দেন। একদিন ভুক্তভোগী পরিবারের ফারুক শেখকে সাথে নিয়ে সিরাজ ভাইয়ের কাছে গেলে তিনি সবকিছু শুনে নিজ খরচে ঘর করে দেয়ার কথা বলেন। আজ তা বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। সিরাজ ভাইয়ের এ মানবিক কাজের জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
আগুনে পোড়া নিশ্ব পরিবারের কাছে ঘরের সরঞ্জাম তুলে দিয়ে কাজের উদ্বোধন সম্পর্কে ব্যবসায়ী মো. সিরাজুল হক বলেন, আমি বিভিন্ন পত্রিকার সংবাদের মাধ্যমে এবং পৌর ৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলরের মুখে পরিবার তিনটির অসহায়ত্ত্বের কথা শুনে তাদের বসবাসের জন্য একটি চৌচালা ঘরের ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি দেয়। আমার প্রতিশ্রুতি রক্ষায় আজ এ ঘর নির্মাণকাজের যাবতীয় সরঞ্জাম পরিবারের হাতে বুঝিয়ে দিতে পেরে আমি মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। অসহায় পরিবারের পাশে এভাবেই জেনো সারাজীবন থাকতে পারি এজন্য সবার কাছে দোয়া কামনা করছি। আজ আমি আমার সামান্য চেষ্টায় একটি ঘরের ব্যবস্থা করলাম এবং সমাজের যেসকল বিত্তবান মানুষ আছেন তাদেরকে পরিবার তিনটির পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানাচ্ছি।