রাজবাড়ী ১১:৩৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ৪ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বদলীর নির্দেশ অমান্য করে স্বপদে বহাল কৃষি কর্মকর্তা।

রাজবাড়ী (গোয়ালন্দ)

রাজবাড়ী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বাহাউদ্দিন সেকের বিরুদ্ধে সরকারি বরাদ্দের প্রতিটি খাতেই অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া গত ২৮শে নভেম্বর বদলির আদেশ আসার পরও বহাল তবিয়তে অফিস করছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে  কৃষকদের ভর্তুকির সার, বীজ ও এনএটিপির অর্থ লোপাটের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও তিনি এই অফিসে সরকারী নির্দেশ অমান্য করে প্রায় বারো বছর কর্মরত রয়েছেন।

জানাযায় গত ৯ নভেম্বর তারিখে তেল জাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির প্রকল্পের আওতায় অত্র প্রকল্পের কনসালটেন্ট মোঃ নজরুল ইসলাম ও কৃষি ইঞ্জিনিয়ার ইউসুফ আলী এবং সাথে ছিলেন রাজবাড়ী সদর উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ও সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তাকে সাথে নিয়ে উপজেলার রামকান্তপুর ইউনিয়নের রামকান্তপুর ব্লক পরিদর্শন করেন। তেল জাতীয় ফসল উৎপাদন গ্রুপের চাষি ইউসুফ আলীর বাড়িতে ০৩ একর প্রদর্শনীর একটি প্লটে দেখা যায়, যে পরিমাণ সার ও কীটনাশক দেওয়ার কথা ছিল সেটা দেওয়া হয়নি। ইউরিয়া সার ২৫৮ কেজির স্থলে ২০০ কেজি দেওয়া হয়েছে। ডিএপি ২১০ কেজির জায়গায় ১৫০ কেজি, এমওপি ২১০ কেজির স্থলে ১৫০ কিজি, বোরন ৯ কেজি দেওয়ার কথা থাকলে ও কিছুই দেওয়া হয়নি। জিপসাম ২৪০ কেজি দেওয়ার কথা থাকলে ও দেওয়া হয়েছে ৪০ কেজি, ম্যাগনেসিয়াম ৬০ এর স্থলে ১২ কেজি, দস্তা ১২ কেজির স্থলে ৬ কেজি বালাইনাশকের জন্য তিন হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও কাজিম(১০০ গ্রাম) ৪ প্যাকেট দেওয়া হয়েছে। এবং একই ইউনিয়নের জাহাঙ্গীর শেখের বাড়ির প্লটেও প্রায় একই ধরনের কৃষি সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। এসময় কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ও সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তার স্বাক্ষর রাখা হয় সেখানে।

ভুক্তভোগী ইউসুফ শেখ পরে অল্প কিছু পেলেও জাহাঙ্গীর শেখকে পরিদর্শনের পর মাত্র এক বস্তা সার দেওয়া হয়। জাহাঙ্গীর এই প্রতিবেদককে বলেন আমরা কি পরিমাণ কৃষি সামগ্রী পাবো সেটা আমরা জানি না। আমাদের কে যা দেওয়া হয়েছিল আমরা তাই নিয়েই আসছি। পরে স্যাররা তদন্তে এসে জানালো আমাদের যে পরিমাণ কৃষি সামগ্রী বিতরণ করার কথা তার চেয়ে অনেক কম পরিমাণ বিতরণ করা হয়েছে। তবে আমরা কৃষকরা কি পরিমাণ সাহায্য সহযোগিতা পাবো সেটার তালিকা টানিয়ে রাখলে আমাদের সুবিধা হয়। তাহলে আমাদের নায্যঅধিকার থেকে এভাবে আমাদের ঠকাতে পারবে না।

এ ছাড়াও কন্দাল প্রকল্প ও  ধান, গম, পাট প্রকল্পে নানা অনিয়ম ও দূর্নীনির প্রমান পায় পরিদর্শক দল। এছাড়া ও তদন্ত দল এনএটিপির বারো লাখ টাকা অডিট আপত্তি জানায়। আন্তঃ পরিচর্যা ( রোগিং ও সেচ ইত্যাদি) মোবাইলে মাধ্যমে প্রেরণ করার কথা থাকলে ও সেখানে অনিয়ম ধরা পরে। এভাবে লক্ষ লক্ষ টাকা তিনি আত্মসাৎ করেছেন।

গত ১৪ নভেম্বরে হেড অফিসে ঢাকা খামারবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোঃ বেনজীর আলম মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ জনি খানকে রাজবাড়ী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও রাজবাড়ী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ বাহাউদ্দিন শেককে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে বদলীর আদেশ প্রদান করেন।

ফরিদপুর অঞ্চলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক স্বপন কুমার খা বলেন গত ২৮ শে নভেম্বর মোঃ জনি খানকে রাজবাড়ীতে পদায়ন ও বাহাউদ্দীন শেককে অবমুক্ত করে চিঠি ইস্যু করেন। গত ১১ তারিখে বাহাউদ্দীন শেকের বিষয়ে সার ও বীজ প্রদানে অনিয়মের কারনেই বদলি কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন অনেকটা এই কারণে বদলি করা হয়েছে। কারণ ঐ প্রকল্পের কনসালটেন্ট কৃষি সামগ্রী বিতরণ অনিয়মের রিপোর্ট প্রদান করেন। তাছাড়া তিনি সেখানে দীর্ঘ প্রায় এগারো বছর ধরে আছেন।

রাজবাড়ী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ জনি খান বলেন, আমি গত ২৮ নভেম্বর বদলীর আদেশ পেয়ে রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের কার্যালয়ে যোগদান করি। অদ্যবদী দায়িত্ব বুঝে না দিয়ে বিভিন্ন রকমের তালবাহানা করছেন। আমি সকালে অফিসে বসলেও বিকালে গিয়ে দেখি বদলীকৃত কৃষি অফিসার মোঃ বাহাউদ্দিন শেক চেয়ারে বসে আছেন। দায়িত্ব হস্তান্তরের কথা বললেও কোন কর্ণপাত করছেন না।

বদলীকৃত উপজেলা কৃষি অফিসার বাহাউদ্দিন শেক বলেন, আমার বদলীর আদেশ হয়েছে। তবে এখনো দায়িত্ব হস্তান্তর করিনি।আ‌মি এখন পর্যন্ত নিয়মিতই অফিস কর‌ে আস‌ছি।

রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এসএম শহীদ নূর আকবর বলেন, রাজবাড়ী সদর উপজেলার বদলীকৃত কৃষি কর্মকর্তা বাহাউদ্দিন শেক গত ২৮ নভেম্বর নতুন কর্মকর্তা মোঃ জ‌নি খান‌কে  দায়িত্ব বুঝে দেওয়ার কথা থাক‌লেও তি‌নি নতুন কর্মকর্তাকে  দায়িত্ব বুঝি‌য়ে না দিয়ে অফিসের বাইরে অবস্থান করেন। যা উর্ধোতন কতৃপক্ষের এবং সরকারি নির্দেশ অমান্য করার যোগ্য অপরাধ। এছাড়া গত ১১ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও অর্থলোপাটের অভিযোগ পায় তদন্ত কমিটি। 

তিনি আরও বলেন সাবেক কৃ‌ষি কর্মকর্তা বাহাউ‌দ্দিন শেক অ‌ফি‌সের আদেশ অমান‌্য ক‌রেই জোড়পূর্বকই অফিস করছেন। এ‌ বিষয়‌টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানা‌নো হ‌য়ে‌ছে।

Tag :

বদলীর নির্দেশ অমান্য করে স্বপদে বহাল কৃষি কর্মকর্তা।

প্রকাশিত : ০৬:০৬:৫১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২২

রাজবাড়ী (গোয়ালন্দ)

রাজবাড়ী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বাহাউদ্দিন সেকের বিরুদ্ধে সরকারি বরাদ্দের প্রতিটি খাতেই অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া গত ২৮শে নভেম্বর বদলির আদেশ আসার পরও বহাল তবিয়তে অফিস করছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে  কৃষকদের ভর্তুকির সার, বীজ ও এনএটিপির অর্থ লোপাটের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও তিনি এই অফিসে সরকারী নির্দেশ অমান্য করে প্রায় বারো বছর কর্মরত রয়েছেন।

জানাযায় গত ৯ নভেম্বর তারিখে তেল জাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির প্রকল্পের আওতায় অত্র প্রকল্পের কনসালটেন্ট মোঃ নজরুল ইসলাম ও কৃষি ইঞ্জিনিয়ার ইউসুফ আলী এবং সাথে ছিলেন রাজবাড়ী সদর উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ও সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তাকে সাথে নিয়ে উপজেলার রামকান্তপুর ইউনিয়নের রামকান্তপুর ব্লক পরিদর্শন করেন। তেল জাতীয় ফসল উৎপাদন গ্রুপের চাষি ইউসুফ আলীর বাড়িতে ০৩ একর প্রদর্শনীর একটি প্লটে দেখা যায়, যে পরিমাণ সার ও কীটনাশক দেওয়ার কথা ছিল সেটা দেওয়া হয়নি। ইউরিয়া সার ২৫৮ কেজির স্থলে ২০০ কেজি দেওয়া হয়েছে। ডিএপি ২১০ কেজির জায়গায় ১৫০ কেজি, এমওপি ২১০ কেজির স্থলে ১৫০ কিজি, বোরন ৯ কেজি দেওয়ার কথা থাকলে ও কিছুই দেওয়া হয়নি। জিপসাম ২৪০ কেজি দেওয়ার কথা থাকলে ও দেওয়া হয়েছে ৪০ কেজি, ম্যাগনেসিয়াম ৬০ এর স্থলে ১২ কেজি, দস্তা ১২ কেজির স্থলে ৬ কেজি বালাইনাশকের জন্য তিন হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও কাজিম(১০০ গ্রাম) ৪ প্যাকেট দেওয়া হয়েছে। এবং একই ইউনিয়নের জাহাঙ্গীর শেখের বাড়ির প্লটেও প্রায় একই ধরনের কৃষি সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। এসময় কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ও সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তার স্বাক্ষর রাখা হয় সেখানে।

ভুক্তভোগী ইউসুফ শেখ পরে অল্প কিছু পেলেও জাহাঙ্গীর শেখকে পরিদর্শনের পর মাত্র এক বস্তা সার দেওয়া হয়। জাহাঙ্গীর এই প্রতিবেদককে বলেন আমরা কি পরিমাণ কৃষি সামগ্রী পাবো সেটা আমরা জানি না। আমাদের কে যা দেওয়া হয়েছিল আমরা তাই নিয়েই আসছি। পরে স্যাররা তদন্তে এসে জানালো আমাদের যে পরিমাণ কৃষি সামগ্রী বিতরণ করার কথা তার চেয়ে অনেক কম পরিমাণ বিতরণ করা হয়েছে। তবে আমরা কৃষকরা কি পরিমাণ সাহায্য সহযোগিতা পাবো সেটার তালিকা টানিয়ে রাখলে আমাদের সুবিধা হয়। তাহলে আমাদের নায্যঅধিকার থেকে এভাবে আমাদের ঠকাতে পারবে না।

এ ছাড়াও কন্দাল প্রকল্প ও  ধান, গম, পাট প্রকল্পে নানা অনিয়ম ও দূর্নীনির প্রমান পায় পরিদর্শক দল। এছাড়া ও তদন্ত দল এনএটিপির বারো লাখ টাকা অডিট আপত্তি জানায়। আন্তঃ পরিচর্যা ( রোগিং ও সেচ ইত্যাদি) মোবাইলে মাধ্যমে প্রেরণ করার কথা থাকলে ও সেখানে অনিয়ম ধরা পরে। এভাবে লক্ষ লক্ষ টাকা তিনি আত্মসাৎ করেছেন।

গত ১৪ নভেম্বরে হেড অফিসে ঢাকা খামারবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোঃ বেনজীর আলম মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ জনি খানকে রাজবাড়ী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও রাজবাড়ী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ বাহাউদ্দিন শেককে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে বদলীর আদেশ প্রদান করেন।

ফরিদপুর অঞ্চলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক স্বপন কুমার খা বলেন গত ২৮ শে নভেম্বর মোঃ জনি খানকে রাজবাড়ীতে পদায়ন ও বাহাউদ্দীন শেককে অবমুক্ত করে চিঠি ইস্যু করেন। গত ১১ তারিখে বাহাউদ্দীন শেকের বিষয়ে সার ও বীজ প্রদানে অনিয়মের কারনেই বদলি কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন অনেকটা এই কারণে বদলি করা হয়েছে। কারণ ঐ প্রকল্পের কনসালটেন্ট কৃষি সামগ্রী বিতরণ অনিয়মের রিপোর্ট প্রদান করেন। তাছাড়া তিনি সেখানে দীর্ঘ প্রায় এগারো বছর ধরে আছেন।

রাজবাড়ী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ জনি খান বলেন, আমি গত ২৮ নভেম্বর বদলীর আদেশ পেয়ে রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের কার্যালয়ে যোগদান করি। অদ্যবদী দায়িত্ব বুঝে না দিয়ে বিভিন্ন রকমের তালবাহানা করছেন। আমি সকালে অফিসে বসলেও বিকালে গিয়ে দেখি বদলীকৃত কৃষি অফিসার মোঃ বাহাউদ্দিন শেক চেয়ারে বসে আছেন। দায়িত্ব হস্তান্তরের কথা বললেও কোন কর্ণপাত করছেন না।

বদলীকৃত উপজেলা কৃষি অফিসার বাহাউদ্দিন শেক বলেন, আমার বদলীর আদেশ হয়েছে। তবে এখনো দায়িত্ব হস্তান্তর করিনি।আ‌মি এখন পর্যন্ত নিয়মিতই অফিস কর‌ে আস‌ছি।

রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এসএম শহীদ নূর আকবর বলেন, রাজবাড়ী সদর উপজেলার বদলীকৃত কৃষি কর্মকর্তা বাহাউদ্দিন শেক গত ২৮ নভেম্বর নতুন কর্মকর্তা মোঃ জ‌নি খান‌কে  দায়িত্ব বুঝে দেওয়ার কথা থাক‌লেও তি‌নি নতুন কর্মকর্তাকে  দায়িত্ব বুঝি‌য়ে না দিয়ে অফিসের বাইরে অবস্থান করেন। যা উর্ধোতন কতৃপক্ষের এবং সরকারি নির্দেশ অমান্য করার যোগ্য অপরাধ। এছাড়া গত ১১ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও অর্থলোপাটের অভিযোগ পায় তদন্ত কমিটি। 

তিনি আরও বলেন সাবেক কৃ‌ষি কর্মকর্তা বাহাউ‌দ্দিন শেক অ‌ফি‌সের আদেশ অমান‌্য ক‌রেই জোড়পূর্বকই অফিস করছেন। এ‌ বিষয়‌টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানা‌নো হ‌য়ে‌ছে।