
ষ্টাফ রিপোর্টার:
যেকোন সময় ঘটতে পারে আরও বড় ধরনের দূঘটনা
রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌপথের মধ্যে চলাচলকারী অধিকাংশ ফেরির ফিটনেস নেই। আবার কুয়াশার মধ্যে ফেরি চলাচলের জন্য পাঁচ কোটি টাকা খরচ করে যেসব ফগ লাইট বসানো হয়েছে, সেটিও বিকল হয়ে পড়ে আছে। এসব কারণে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। গত বুধবার সকালে পাটুরিয়ার পাঁচ নম্বর ঘাট এলাকায় ডুবে যাওয়া রজনীগন্ধা ফেরিটিরও ফিটনেস ছিল না বলে একাধিক আরোহী অভিযোগ করেছেন।দুর্ঘটনার দিন রজনীগন্ধার আরোহী ছিলেন ট্রাকচালক আশিক। তিনি বলেন, ফেরিটির কোনো নৌযানের সঙ্গে ধাক্কা লাগেনি। তলা দিয়ে পানি ঢুকে কাত হয়ে ৯টি ট্রাক নিয়ে ফেরিটি ডুবে যায়।ঘাটের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ নৌপথের অধিকাংশ ফেরির বয়স ৩৫ বছরের বেশি। রজনীগন্ধার বয়স ছিল ৪৭ বছরের বেশি।রোরো ফেরি ‘খান জাহান আলী’ তৈরি হয় ১৯৮৭ সালে। আরেক রোরো ফেরি ‘কেরামত আলী’ ৩৬ বছরের পুরনো।‘বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর’ ফেরি তৈরি হয় ১৯৯২ সালে। ২০২১ সালের ২৭ অক্টোবর ‘আমানত শাহ’ নামের একটি ফেরি ১৭টি যানবাহন নিয়ে পাটুরিয়ার পাঁচ নম্বার ফেরি ঘাটের কাছে ডুবে যায়।বিআইডব্লিউটিসির আরিচা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০টি ফেরিতে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ফগ লাইট বসানো হয়। একেকটি ৭ হাজার কিলোওয়াটের লাইট কিনতে ৫০ লাখ টাকার বেশি ব্যয় হয়। বলা হয়েছিল, এগুলো যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি। অথচ কয়েক দিন পরই অধিকাংশ লাইট নষ্ট হয়ে যায়। ‘খান জাহান আলী’, ‘শাহ আলী’, ‘কেরামত আলী’, ‘ভাষা শহীদ বরকত’, ‘কপোতি’, ‘বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমীন’, ‘বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর’, ‘শাহ আমানত’ ও ‘শাহ পরান’ ফেরিতে ফগ অ্যান্ড সার্চ লাইট বসানো হয়।কয়েকজন ফেরিচালক জানান, প্রতিটি ফেরির বয়স ৩৫ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে।নাব্যতা সংকটের কারণে ধীরে ধীরে চললেও কুয়াশার কারণে প্রতিদিনই ৬ থেকে ৯ ঘণ্টা ফেরি বন্ধ রাখতে হয়। ফগ লাইট লাগানো হলেও তা কাজে আসেনি।দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুটে ১৬টি ফেরি চলাচল করে। এসব ফেরিতে ১৭ থেকে ১৮শ যানবাহন পারাপার হয়। কিন্তু কুয়াশার কারণে প্রতিদিনই তিন থেকে ৯ ঘণ্টা পর্যন্ত ফেরি চলাচল বন্ধ থাকছে।বিআইডব্লিউটিসি আরিচা সেক্টরের উপ-মহাব্যবস্থাপক খালেদ নেওয়াজ বলেন, এ নৌপথে মেয়াদোত্তীর্ণ কোনো ফেরি নেই।এদিকে বুধবারের ফেরিডুবির ঘটনার সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে বিআইডব্লিউটিএর উপপরিচালক মো.শাহজাহান জানান, ঘটনাস্থলে উদ্ধারকারী জাহাজ হামজা ও রুস্তম পৌঁছেছে। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত এই দুই জাহাজ ডুবে যাওয়া ফেরি থেকে একটি কাভার্ডভ্যান ও দুটি ট্রাক উদ্ধার করেছে। তবে দুই জাহাজ দিয়ে ফেরিটি উদ্ধার করা সম্ভব নয়। নারায়ণগঞ্জ থেকে উদ্ধারকারী জাহাজ ‘প্রত্যয়’ আসার পর ফেরিটি টেনে তোলা হবে।নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোস্তফা কামাল বলেন, ‘পাঁচ বছরে একবার ফেরির ডকিং করতে হয়। রজনীগন্ধা ২০২১ সালে ডকিং হয়। আর ফগ লাইটের বিষয়ে মন্ত্রী কথা বলেছেন, আমি কিছু বলব না। আর তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের পর ফেরিডুবির কারণ সম্পর্কে বলা যাবে।’বিআইডব্লিউটিসি চেয়ারম্যান ড. এ.কে. এম মতিউর রহমান বলেন, ‘ফেরির ফিটনেস ও দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখা হবে।’
এবিষয়ে নাম প্রকাশ না করা শর্তে ফেরী এক সিনিয়র মাষ্টার বলেন পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে যেসকল ফেরী চলাচল করছে তা প্রায় সময় বিকল হয়ে পরাতে সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে।এমন এমন ঘটনা রয়েছে মাঝে মধ্যেই বিকল হয়ে মাঝ নদীতে ফেরী আটকা পড়ে।দৌলতদিয়া পাচঁ নং ঘাটের বসবাসকারী আবেদ আলী (৭৮) বলেন এই ঘাটে প্রায় চল্লিশ বছর আছি। প্রথম থেকে যেসকল ফেরী দেখেছি আজ পর্যন্ত সেসকল ফেরী মেরামত করে চালানো হচ্ছে এতে সরকারের কোটি কোটি ফেরী মেরামতের জন্য ব্যয় করতে হয়।
এদিকে রজনীগন্ধার দ্বিতীয় মাস্টার (চালক) হুমায়ুন কবিরের সন্ধান গতকাল পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। হুমায়ুন কবিরের বাড়ি পিরোজপুরে। তিনি বিআইডব্লিউটিসি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের আরিচা আঞ্চলিক কমিটির দক্ষিণ (পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া) শাখার সভাপতি।