
ষ্টাফ রিপোর্টার:
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থার (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া ঘাট অফিস ও ঘাট সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা যায়, নৌপথে দিন-রাত সার্বক্ষণিক ফেরিসার্ভিস চালু থাকলেও চলাচলকারী ফেরিগুলোতে নিয়মিত পুলিশি পাহারার ব্যবস্থা নেই। এ সুযোগে উভয় ঘাট এলাকার একদল দুর্বৃত্ত রাতের অন্ধকারে ট্রলার নিয়ে এসে যাত্রীবেশে তারা চলন্ত ফেরিতে গিয়ে ওঠে। পরে সুযোগ বুঝে ফেরির ভেতরে মোমের আলো জ্বালিয়ে নিজেদের মধ্যে নগদ টাকার জুয়া খেলার আসর বসায় তারা। প্রলুব্ধ হয়ে ওই জুয়া খেলায় অংশগ্রহণ করে ফেরিযাত্রীদের অনেকেই। সেখানে জুয়া খেলার ওই ফাঁদে ফেলে সংশ্লিষ্ট যাত্রীদের কাছ থেকে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার, মোবাইল ফোনসেটসহ মূল্যবান জিনিস ছিনিয়ে নেয়। শেষে ঘাটে পৌঁছানোর আগেই চলন্ত ফেরি থেকে ট্রলারে নেমে দুর্বৃত্তরা নদীর ভাটিপথে দ্রুত পালিয়ে যায়।
দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে চলাচলকারী এক রো রো (বড়) ফেরির মাস্টার (চালক) নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এই নৌরুটে চলন্ত ফেরিতে জুয়ার আসর বসানো, ছিনতাই ও পকেটমারের বিষয়টি নতুন নয়। দিনের আলোয় না থাকলেও রাতের অন্ধকারে দুর্বৃত্তরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। যাত্রী নিরাপত্তায় পুলিশি প্রহরা না থাকায় রাতে চলাচলকারি ফেরিগুলো সম্পূর্ণ অরক্ষিত অবস্থায় থাকছে।
এদিকে ঘাটসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছেন, নৌপথে চলন্ত ফেরিতে জুয়ার আসর ও ছিনতাইকালে সংশ্লিষ্ট দুর্বৃত্তরা ধারালো রামদা, ছুরি ও চাইনিজ কুড়াল ব্যবহার করে থাকে। তাই ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়না। দুর্ধর্ষ ওই জুয়ারু-ছিনতাই চক্রের প্রধান হোতা মাদার কাজী। তিনি গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের শাহাদত মেম্বারপাড়া গ্রামের মৃত ছেদন কাজীর ছেলে। মাদার কাজীর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা ওই দুর্বৃত্ত দলে ৩০ থেকে ৩৫ জন সক্রিয় সদস্য রয়েছে। তাদের সবার বাড়ি রাজবাড়ী ও মানিকগঞ্জ জেলা এলাকায়। এ ছাড়া দৌলতদিয়া পাটুরিয়া উভয় ঘাট এলাকার কতিপয় অসাধু ট্রলার মালিক ও চালক ওই দলের সঙ্গে যুক্ত।
গোয়ালন্দ ঘাট থানা পুলিশ জানিয়েছে, ওই মাদার কাজীর বিরুদ্ধে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ ঘাট থানা ও মানিকগঞ্জের শিবালয় থানায় অস্ত্র, ডাকাতি, হত্যাচেষ্টা, ছিনতাই, মাদক ও জুয়া আইনে একাধিক মামলা রয়েছে।
বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া ঘাট ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেন, এই নৌরুটে রাতের বেলা চলাচলকারী ফেরিগুলোতে যাত্রী নিরাপত্তায় পুলিশি পাহারা থাকা খুব জরুরি।
এ প্রসঙ্গে দৌলতদিয়া ঘাট নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো.সিরাজুল কবির বলেন, দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়ায় নৌ-পুলিশের দুটি ফাঁড়িতেই ফোর্স সংকট রয়েছে। পাটুরিয়া ঘাট ফাঁড়িতে কোনো স্পিডবোট নেই। দৌলতদিয়া ঘাট ফাঁড়ির একটি স্পিডবোট থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে তা বিকল হয়ে আছে। তাই ফেরিসহ নৌপথে নিয়মিত পুলিশি টহল ব্যবস্থা রাখা সম্ভব হচ্ছে না। তবে চলন্ত ফেরিতে জুয়াড়ি, ছিনতাই ও পকেটমার দলে জড়িতদের গ্রেপ্তারের জন্য আমরা জোর চেষ্টা চালাচ্ছি।