রাজবাড়ী ০২:৪৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হারিয়ে যাচ্ছে জমিদার দের শেষ নিদর্শন

স্টাফ রিপোর্টার
কৃষ্ণ কুমার সরকার

এখন আর এখানে জমিদাররা কেউ নেই। এখানে আর কেউ ঘোড়ায় চলে বেড়ায় না। আসে না কেউ খাজনা মওকুফের আবেদন নিয়ে। জমিদারদের আজ কেউ নেই রাজবাড়ীর নলিয়াতে। রয়ে গেছে তাদের রেখে যাওয়া কিছু স্মৃতি চিহ্ন যেগুলো হারানোর পথে।

জেলা শহর থেকে ৩০কিঃমি দূরে জামালপুর-কোলারহাট সড়ক দিয়ে চলার পথে শোনা যায় ঝি-ঝি পোকার শব্দ। শব্দের সাথে পথিকের চোখ পরে যায় চারটি জরার্জীর্ণ মন্দিরের দিকে।

স্থানীয় বিদুৎ মুখার্জী জানান, শুনেছি এখানে ৯টি মন্দির ছিল কিন্তু রক্ষণাবেক্ষনের অভাবে ৪টি মন্দির হাঁরিয়ে গেছে। তিনি জানান নছিব সাই পরগানার রাজা সীতারাম রায় ২৫০-৩০০ বছর পূর্বে এই মন্দিরগুলো স্থাপন করেন।

তিনি জানান নছিব সাই পরগননার রাজা এই অঞ্চলের জমিদারী দেখাশোনার জন্য রাজবাড়ীর বেলগাছী নামক স্থানে থেকে জমিদারী পরিচালনা করেন। রাজা একবার স্বর্ণের মূর্তি দিয়ে দূর্গাপূজা করতে চাইলে প্রতিমা কর্মকার হিসাবে এই নলিয়া গ্রামের এক কর্মকারকে পছন্দ করেন। কিন্তু রাজা কর্মকারের বিরুদ্ধে সোণাচুরির অভিযোগ তুলে বেলগাছীতে প্রতিমা তৈরির জন্য কর্মকারকে নির্দেশ প্রদান করেন। কর্মকার রাজী হয়ে মনের ক্ষোভে স্বর্ণের প্রতিমার আদলে নিজ বাড়ীতে পিতল দিয়ে অনুরূপ একটি প্রতিমা তৈরি করেন। ঠিক পূজার আগের দিন কর্মকারের বাড়ীর তৈরি পিতলের প্রতিমা রাজার পুকুরে রেখে আসেন। কাঁদা মাটি দিয়ে সোনা পরিষ্কার করার সুযোগে পুকুর থেকে কর্মকার প্রতিমা পরিবর্তন করে রাজাকে পিতলের মূর্তি দিয়ে দেন। পূজার শুরুর কিছুক্ষণ আগে কর্মকার বলেন আপনি তো আমাকে সোনা চুরির অভিযোগ দিয়েছিলেন আমি আপনার সম্পূর্ণ সোনাই চুরি করেছি। সব ঘটনা বললে রাজা তখন কর্মর্কারকে নলিয়া পূজা করার নির্দেশ প্রদান করেন এবং এই মন্দিরগুলো প্রতিষ্ঠা করেন।

আবু সাঈদ মৃধা মন্দির স্থাপনা সম্পর্কে বলেন, অনেক আগের একটি ইংরেজী পত্রিকাতে মন্দির স্থাপনা সম্পর্কে জমিদার এবং কর্মকারের মূর্তি নির্মানের কাহিনীকে কেন্দ্র করেই নলিয়ার এই মন্দিরগুলো নির্মিত।
সরেজমিনে প্রতিবেদন সংগ্রহ করতে গিয়ে দেখা যায় যে চারটি মন্দির রয়েছে সবগুলো মন্দিরের অধিকাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। ভিতরে পরগাছা এবং চামচিকা বসবাস করছে।

নলিয়া শ্যামামোহন ইনিষ্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক হারান চন্দ্র বিশ্বাস জানান, এগুলো বর্তমানে সরকারি সম্পত্তির উপর রয়েছে। তিনি জানান এই স্থাপনাগুলো সংরক্ষনের জন্য সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।

জমিদারদের রেখে যাওয়া বিদ্যাপিঠের প্রধান শিক্ষক শাহজাহান মিয়া জানান, সমগ্র দেশের মধ্যে মন্দিরগুলো ইতিহাস ও ঐতিহ্য বহন করে। এই মন্দিরগুলো অপরূপ কারুকাজে নির্মিত। যেগুলোর দিকে সরকারকে দৃষ্টি দিতে হবে।

Tag :

হারিয়ে যাচ্ছে জমিদার দের শেষ নিদর্শন

প্রকাশিত : ০৬:১৯:৫৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৪

স্টাফ রিপোর্টার
কৃষ্ণ কুমার সরকার

এখন আর এখানে জমিদাররা কেউ নেই। এখানে আর কেউ ঘোড়ায় চলে বেড়ায় না। আসে না কেউ খাজনা মওকুফের আবেদন নিয়ে। জমিদারদের আজ কেউ নেই রাজবাড়ীর নলিয়াতে। রয়ে গেছে তাদের রেখে যাওয়া কিছু স্মৃতি চিহ্ন যেগুলো হারানোর পথে।

জেলা শহর থেকে ৩০কিঃমি দূরে জামালপুর-কোলারহাট সড়ক দিয়ে চলার পথে শোনা যায় ঝি-ঝি পোকার শব্দ। শব্দের সাথে পথিকের চোখ পরে যায় চারটি জরার্জীর্ণ মন্দিরের দিকে।

স্থানীয় বিদুৎ মুখার্জী জানান, শুনেছি এখানে ৯টি মন্দির ছিল কিন্তু রক্ষণাবেক্ষনের অভাবে ৪টি মন্দির হাঁরিয়ে গেছে। তিনি জানান নছিব সাই পরগানার রাজা সীতারাম রায় ২৫০-৩০০ বছর পূর্বে এই মন্দিরগুলো স্থাপন করেন।

তিনি জানান নছিব সাই পরগননার রাজা এই অঞ্চলের জমিদারী দেখাশোনার জন্য রাজবাড়ীর বেলগাছী নামক স্থানে থেকে জমিদারী পরিচালনা করেন। রাজা একবার স্বর্ণের মূর্তি দিয়ে দূর্গাপূজা করতে চাইলে প্রতিমা কর্মকার হিসাবে এই নলিয়া গ্রামের এক কর্মকারকে পছন্দ করেন। কিন্তু রাজা কর্মকারের বিরুদ্ধে সোণাচুরির অভিযোগ তুলে বেলগাছীতে প্রতিমা তৈরির জন্য কর্মকারকে নির্দেশ প্রদান করেন। কর্মকার রাজী হয়ে মনের ক্ষোভে স্বর্ণের প্রতিমার আদলে নিজ বাড়ীতে পিতল দিয়ে অনুরূপ একটি প্রতিমা তৈরি করেন। ঠিক পূজার আগের দিন কর্মকারের বাড়ীর তৈরি পিতলের প্রতিমা রাজার পুকুরে রেখে আসেন। কাঁদা মাটি দিয়ে সোনা পরিষ্কার করার সুযোগে পুকুর থেকে কর্মকার প্রতিমা পরিবর্তন করে রাজাকে পিতলের মূর্তি দিয়ে দেন। পূজার শুরুর কিছুক্ষণ আগে কর্মকার বলেন আপনি তো আমাকে সোনা চুরির অভিযোগ দিয়েছিলেন আমি আপনার সম্পূর্ণ সোনাই চুরি করেছি। সব ঘটনা বললে রাজা তখন কর্মর্কারকে নলিয়া পূজা করার নির্দেশ প্রদান করেন এবং এই মন্দিরগুলো প্রতিষ্ঠা করেন।

আবু সাঈদ মৃধা মন্দির স্থাপনা সম্পর্কে বলেন, অনেক আগের একটি ইংরেজী পত্রিকাতে মন্দির স্থাপনা সম্পর্কে জমিদার এবং কর্মকারের মূর্তি নির্মানের কাহিনীকে কেন্দ্র করেই নলিয়ার এই মন্দিরগুলো নির্মিত।
সরেজমিনে প্রতিবেদন সংগ্রহ করতে গিয়ে দেখা যায় যে চারটি মন্দির রয়েছে সবগুলো মন্দিরের অধিকাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। ভিতরে পরগাছা এবং চামচিকা বসবাস করছে।

নলিয়া শ্যামামোহন ইনিষ্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক হারান চন্দ্র বিশ্বাস জানান, এগুলো বর্তমানে সরকারি সম্পত্তির উপর রয়েছে। তিনি জানান এই স্থাপনাগুলো সংরক্ষনের জন্য সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।

জমিদারদের রেখে যাওয়া বিদ্যাপিঠের প্রধান শিক্ষক শাহজাহান মিয়া জানান, সমগ্র দেশের মধ্যে মন্দিরগুলো ইতিহাস ও ঐতিহ্য বহন করে। এই মন্দিরগুলো অপরূপ কারুকাজে নির্মিত। যেগুলোর দিকে সরকারকে দৃষ্টি দিতে হবে।